এয়ারটেল নিবেদিত ঈদের বিশেষ টেলিছবি ছিল ইম্পসিবল ৫। এই টেলিছবির পরিচালনা করেছেন তানিম রহমান অংশু, চিত্রনাট্য প্রস্তুত করেছেন দেবাশিষ হাওলাদার দেব।
অভিনয়েঃ অ্যালেন শুভ্র, ইরেশ যাকের, শম্পা রেজা, স্পর্শিয়া, অন্তর রহমান, প্রিয়তা, তুর্য ও মনিরা মিঠু।
সময়কালঃ ৭৭ মিনিট
প্রথমেই বলতে হয় অভিনেতাদের কথা। এই ছবির মুখ্য ভুমিকায় ছিলেন অ্যালেন শুভ্র।
চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে নিজের চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। এই চরিত্রে হয়ত তার মত করে আর কেউ অভিনয় করতে পারবে না। আর এই এক চরিত্রেই ছিল অসংখ্য শেড। প্রতিটাতেই সফল ছিলেন শুভ্র। তাই '১৮+ অল টাইম দৌড়ের ওপর' এর পর এই ছবির মাধ্যমে আরও একবার নিজেকে প্রমাণ করলেন শুভ্র।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ছোট পর্দা নিয়মিত কাঁপানোর জন্য শুভ্র এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ইরেশ যাকেরের চরিত্রেও ২-৩টা শেড ছিল। নিজস্ব ভঙ্গিমার মাধ্যমেই তিনি সেগুলো উতরে দিয়েছেন। শম্পা রেজার চরিত্রটা ছিল খুব ছোট। নিজের কাজটা মোটামুটি ভালই করেছেন।
তবে উচ্ছ্বসিত হবার মত নয়। যে কেউই এই চরিত্রে রুপদান করতে পারতেন। মনিরা মিঠুও ঠিকঠাক ছিলেন। কিন্তু তার উপস্থিতি ছবিতে এতই কম যে সেইটুকুর মাধ্যমে তার বিচার অসম্ভব।
নতুনদের মধ্যে স্পর্শিয়া, অন্তর রহমান, প্রিয়তা, তুর্য ----- কেউই আহামরি কিছু করেননি।
ছবির বিভিন্ন অংশে তাদের কাঁচা অভিনয় দৃষ্টিকটু ঠেকেছে।
অভিনেতাদের সমালোচনা করার আগে পরিচালক সম্পর্কে বলতে হবে। তানিম রহমান অংশু নিজের কাজটুকু ঠিকভাবে করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। প্রথমত, ইরেশ যাকের বা শম্পা রেজার মত গুনি অভিনয়শিল্পীরা আরও ভাল অভিনয় করতে পারতেন। তা কেন তারা পারেননি, এ দায় পরিচালকেরও।
পাশাপাশি নতুন অভিনেতাদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেয়া উচিত ছিল। অন্য কোন পরিচালকের অধীনে হয়তবা তারা অপেক্ষাকৃত ভাল পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারতেন।
আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়। ছবিটা যে অনেক বিগ বাজেটের, সেটা ছবিটা দেখে বোঝাই যায়নি। পরিচালক যদি প্রতিটা দৃশ্য আরেকটু যত্ন নিয়ে করতেন, তাহলে চোখটাও একটু শান্তি পেত।
তবু পরিচালককেও আমি বেশি দোষ দিতে চাই না। দুর্বল চিত্রনাট্যে ভাল কিছু করা অসম্ভব।
ছবির কাহিনী আর চিত্রনাট্য সম্পর্কে অগনিত দর্শকের মত আমারও অনেক কমপ্লেইন। বলছি না, ছবির গল্প 'বুঝাই ইম্পসিবল'। কাহিনিতে হয়ত নতুনত্ব ছিল।
কিন্তু সঠিক চিত্রনাট্যের কারণে সেটা দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
প্রথমত, ছবিটা হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল। অধিকাংশ দর্শক বুঝতেই পারেনি, কখন ক্লাইম্যাক্সটা ঘটল।
দ্বিতীয়ত, সবকিছু যদি একটা মেন্টাল পেশেন্টের কল্পনাই হয়, তাহলে চিত্রনাট্যে সবকিছু এত নিখুঁতভাবে দেখানো হল কেন? যেমনঃ নিলা নামের চরিত্রটার যে টিউশনির টাকা পেতে বিলম্ব হচ্ছে, এর পেছনে তার দুষ্টু ছাত্রের হাত... মায়িশার সাথে তার চাচির কথোপকথনে মায়িশার বাবা-মা'র মৃত্যু নিয়ে যে ইমোশন সৃষ্টি হল... কিংবা নিলয়ের সাথে তার মায়ের কথোপকথন... ছবির কাহিনীর সাথে কি এসবের আদৌ কোন সম্পর্ক ছিল? একজন মেন্টাল পেশেন্ট অনেক অসম্ভব কল্পনা করছে, ঠিক আছে। কিন্তু সে কি এত ডিটেইলসে কল্পনা করে?
তৃতীয়ত, ৭৭ মিনিটের ছবির প্রথম ৬৫ মিনিটে যা ঘটল, তার সাথে গল্পের কাহিনীর শেষ পর্যন্ত কোন মিল পেলাম না।
চিত্রনাট্যকার কেবল শুভ্র ইরেশ যাকেরকে ধাক্কা মারছে, এই দৃশ্যের সাথে শুভ্রর প্রকৃত অবস্থার সম্পর্ক দেখিয়েছেন। কিন্তু হলিউড বা বলিউডে কিন্তু এধরণের ছবির শেষে দেখা যায়, গল্পের শুরু থেকে হওয়া প্রতিটা সংলাপ আর দৃশ্যের সাথেই মূল কাহিনীর সংযোগ রয়েছে। কিন্তু এই ছবিতে সেসব কিছুই হল না। সঠিক দৃশ্যায়ন আর সংলাপ প্রয়োগ করা গেলে, শুভ্র'র কল্পনার জগত ও তার প্রকৃত বাস্তবতার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা যেত।
সবশেষে সংলাপ নিয়ে বলব।
এয়ারটেলের এ যাবত নাটকের মধ্যে এটাতেই হিউমার সবচেয়ে কম ছিল। অর্থাৎ, সংলাপও খুব দুর্বল ছিল। এমনটা তো ঘটে নাই যে ছবির কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটা দৃশ্য করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ছবির সংলাপ যদি একটু ভাল হত, তাহলেও এক শ্রেনির দর্শক ছবিটা দেখে মজা পেত।
পরিশেষে একটা কথাই বলব, এই ছবিটা ছিল পুরোপুরি Wasted. অনেক দর্শক হয়ত ছবিটা দেখেছে কিন্তু তাদের মন ভরে নাই।
তার কারণঃ স্বল্পশিক্ষিত দর্শক শেষ অব্দি ছবির কাহিনী ধরতে (বুঝতে) পারে নাই। আর শিক্ষিত শ্রেণির দর্শক হলিউডের মুভি দেখে অভ্যস্ত। তারা এই ধরণের কাহিনীর অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি দেখেছে। তাদের কাছে এমন বাজে চিত্রনাট্যের আর বাজে Making এর ছবি ভাল লাগার কথা না।
রেটিং: ৩.৫/১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।