আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘটমান অতীত - বালিয়াটী


বালিয়াটী একটি গ্রামের নাম, যে গ্রামের অবস্থান মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায়। পাঁচটি জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ বুকে নিয়ে যাচ্ছে বালিয়াটীর দিন। প্রকৃত নাম বালিয়াতি, ব্রিটিশদের আগমনের পর বালিয়াতি হয়ে যায় বালিয়াটী। গাজীখালি নামের নদী বহমান ছিল তার ভয়ঙ্কর উত্তল রূপে বালিয়াটীর উত্তর পাশ ঘেষে… চলত স্টীমার, লঞ্চ, গয়নার নৌকা, আসত কুমীর। সেই গাজীখালির রূপ হারিয়ে গিয়েছে সাথে করে নিয়ে গিয়েছে বালিয়াটীর যৌবন।

অবেলা ভর করেছে বালিয়াটীর উপর। মূল ফটকের অতিক্রম করে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে পূর্ব বাড়ি। পাশাপাশি তিনটি বাড়ি স্বমহিমায় আজও দাঁড়িয়ে আছে যেগুলি দশ আনীর বড় তরফ, মাঝার তরফ ও নয়া তরফ নামে পরিচিত। এছাড়াও আছে গোলা বাড়ী, পশ্চিম বাড়ি, উত্তর বাড়ি, মধ্য বাড়ি। এ বাড়িগুলি তাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

বালিয়াটীর জমিদাররা অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন, বালিয়াটি ছাড়াও অনেক জায়গায় ছড়িয়ে আছে তাদের করে যাওয়া নিদর্শনগুলি। একটি ঘটনা - জমিদার বাড়ির একটা ঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে জমিদারদের কিছু চিহ্ন, সেখানে দেখতে পাই একজনের তরুণের ছবি, নাম উপেন্দ্র কুমার। গাইড ছবির মানুষটির জীবনে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা দেন যা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে কষ্ট হয়েছিল। ঘটনার সত্যতা পাই উল্লেখিত সুত্রের বইটিতে। মেঝ তরফের জমিদার হরেন্দ্র কুমার জমিদারীর কাজে কলকাতা যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় তাঁর পুত্র উপেন্দ্র কুমার তাঁর পিতা হরেন্দ্র কুমারকে প্রস্তাব করেন একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যা তিনি অনেকদিন ধরেই করে আসছিলেন।

বাবা তা করতে অস্বীকার করেন এবং পুত্রকে প্রশ্ন করেন, সে কত টাকা রোজগার করে। এতে তীব্র অভিমানে দো’তালার একটা কক্ষে নিজের বুকে নিজেই গুলি বিদ্ধ হয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে স্থাপিত হয় ইশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অল্প সামনেই চোখে পড়বে। শিক্ষাক্ষেত্রে সাটুরিয়া উপজেলায় এম,এফ পি স্কুল একটি মডেল, যেটি ১৯১৮ সালে “রাধাভল্লব ফ্রী প্রাইমারী স্কুল” নামে বালিয়াটীর জমিদারদের করে যাওয়া।

গোলাবাড়ী এবং মধ্যবাড়ির যৌথভাবে ভারতের বৃন্দাবনে “গোপাল জিও মদির ও কুঞ্জ”। নারায়ন গঞ্জের “ লক্ষী নারায়ন জিও” নামে যে আখড়াটি আছে সেটা এই জমিদারদের অবদান। গোলাবাড়িতে ফুলদোল পূর্ণিমায় পুষ্পরথের মেলা হত, সে চমৎকার মূল্যবান রথ গোলাবাড়ির দ্রৌপদ্রী রায় ভারতের বৃন্দাবন থেকে তৈরী করে এনেছিলেন। প্সহচিম বাড়ির নিত্যানন্দ রায়ের দুই ছেলে বৃন্দাবন ও জগন্নাথ অনেক জমিদারী কিনে নতুন করে পূর্ব বঙ্গের জমিদার শ্রেনীভুক্ত হন। বৃন্দাবনের শারীরিক শক্তি সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তী আছে।

পঁচিশ- ত্রিশ জন বলিষ্ঠ শ্রমজীবি যে জিনিষ উত্তোলনে সমর্থ না হত বৃন্দাবন চন্দ্র তা একাই করে ফেলতেন। কিংবদন্তী আছে কোন এক নদীর তীরে তাঁর সঙ্গীরা নীলকুঠীর লোক জনের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে গেলে নীলকুঠির সাহেব নৌকা আটক করার জন্য দু’শতাধিক লোক পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বৃন্দাবন একাই একটি লাটির সাহায্যে তাদের তাড়িয়ে দেন। এতে সাহেব গুলি করতে গেলে কুটির মেম তা করতে সাহেবকে বাঁধা দিয়েছিলান। এই বীরপুরুষ বৃন্দাবনের ভাই জগন্নাথ চন্দ্রের নামেই ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয় ১৮৮৪ সানে স্থাপন করেন জগন্নাথের সুযোগ্য পুত্র কিশোরীলাল।

এর অবস্থান ছিল তৎকালীন চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে। এছাড়া একটু পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় ১৮৬৮ সালে জগন্নাথ রায় চৌধুরী নিজ নামে জগন্নাথ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার সুপ্রসিদ্ধ ‘ডায়মন্ড জুবিলি থিয়েটার’ও কিশোরীলালের অবদান। এই বালিয়াটিরই আরেক অবদান ১৯২৫ সনে স্থাপিত দাতব্য চিকিৎসালয় যা এখনো ‘বালিয়াটী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামে এলাকার জনগণকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সমাজ সেবার সবক্ষেত্রেই আছে এই বালিয়াটীর জমিদারদের অবদান।

তাঁরা দূর্ভিক্ষে, এবং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সহায়তার হাত। সূত্র - ‘বালিয়াটীর কথাচিত্র’ - সমরেন্দু সাহা লাহোর। বইটি সংরহ করি বালিয়াটির জমিদার বাড়ি থেকে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।