সীমাহীন পথে ছুটে চলা নদীতে সাঁতার কাটি আমার অবারিত স্বপ্নের বৈতরনি নিয়ে .......... সময় টা ছিল গত বছর পহেলা বৈশাখ, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে সবাই মিলে ভাবছিলাম সকালের পান্তা র পর কোথায় যাওয়া যায় ?
এখানে আসা একটা পরিবার এর সাথে এটাই ছিল আমাদের প্রথম দেখা ও পরিচয় , পরিবার এর কর্তা ও গিন্নী বিশ্ববিদ্যালয় আমার ইয়ার মেট , ওদের দুটি ফুটফুটে যমজ ছেলে মেয়ে দুটি আমার মেয়ে র বয়সি সব কিছু মিলিয়ে আমরা সবাই উল্লসিত , সাথে রয়েছে এই ( নতুন আসাকর্তা ও গিন্নী ) টাউট দুইটার বিবাহ বার্ষিকী ফ্রী ফ্রী ফ্রী ফ্রী
দিল্লি তে দেখার জায়গা র অভাব নাই, পরিচিত বিখ্যাত জিনিস গুল সবাই দেশ থেকে আসা আত্মীয় স্বজন দের সাথে কয়েকবার করে ঘুরে এসছে , সবাই মিলে ঠিক করলাম সবচাইতে কাছে র কোথাও যাব ...
সকালের পান্তা ,( আমাদের সাথে রয়েছেন বুয়েট পাস একজন ক্রিকেটার , যিনি আপাতত নিজের অফিস দল এর একজন তুখড় বোলার হিসেবে খ্যাত ) ক্রিকেটার এর ম্যাচ সব প্যাক করে চলে এলাম আমাদের গন্তব্যে ।
ছোট বেলায় ইতিহাস বই এ মুহাম্মদ বিন তুঘলক এর শাসনামল পড়ার সময় সাফল্য র ইতিহাস এর সাথে তুঘলকি চাল মানে উনার স্বেচ্ছাচারিতা র ইতিহাস ও আমরা জেনেছি , কিন্তু হাল এর হিন্দি ছবি চাক দে ইন্ডিয়া র কল্যাণে তুঘলক নামটা তরুন দের কাছে বেশ জনপ্রিয়
চলেন দেখি তুঘলগাবাদ কেল্লা
ভারতিও সুলতান দের শাসন আমল এর সৃতি বিজিরিত এই স্থান টি বর্তমানে কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে ।
গিয়াসুদ্দিন তুঘলুক দিল্লির কাছে তুঘলুকাবাদে ৬। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গাজুড়ে এই বিশাল দুর্গ-নগরী বানিয়েছিলেন, ১৩২১ সালে। এত বড় দুর্গ-নগরী যে তার ৫২টি সিংহদুয়ার ছিল, বাইরের দেয়াল ছিল ৪৫ ফুট পর্যন্ত, আর ভেতরে ছিল আলাদা আবাসিক এলাকা , অমাত্যবর্গের আলাদা অভিজাত এলাকা, ৭টি বিশাল ভূগর্ভস্থ জলাধার আর ভূগর্ভস্থ শস্যাগার, সুড়ঙ্গ-কমপ্লেক্স, ছিল।
তুঘলক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াস উদ্দিন তুঘলক এর সময়কালে প্রতিষ্ঠিত এই কেল্লা বর্তমানে দিল্লী র ধ্বংস প্রাপ্ত কেল্লা গুলর মধ্যে অন্যতম ।
দিল্লি কে তিনি রাজধানি হিসেবে ৩য় বার এর মত প্রতিষ্ঠা করেন যা কিনা ১৩২৭ সালে পরিত্যাক্ত হয় ।
গিয়াস উদ্দিন তুঘলক ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড এর সাথে সংযুক্ত কুতুব বর্ডার পুর সড়ক ও নির্মাণ করেন ।
উইকি পড়ে দেখলাম , এই কাহিনী তে ও টুইস্ট আছে মানে সিধা কথায় ঘাপলা ।
গাজি মালিক ছিলেন খিলজি দের ( মনে আছে মাত্র ১৮ জন সৈন্য নিয়ে রাজা লক্ষন সেন কে পরাজিত করা সাহসি যোদ্ধার কথা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজি ) একজন করদাতা সান্ধকালিন পদব্রজে ভ্রমন সময়ে , খিলজি প্রভু তামাশাছলে গাজি মালিক কে বললেন , রাজা যেহেতু দক্ষিন দিল্লি তে নিজের প্রাসাদ নির্মাণ করছেন , গাজি কেন নিজের জন্য কোন দুর্গ বানাচ্ছে না ।
এই বাক্য করদাতার মনে কতখানি প্রভাব বিস্তার করেছিল তা ১৩২১ সালে ই প্রমানিত হয় ।
গাজি সাহেব খিলজি দের কে বিতারন পূর্বক গিয়াস উদ্দিন তুঘলক নাম ধারন করে , তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠা করেন
ইতিহাস এর মাইর দেখার জন্য রয়ে গেলাম আমরা , এত বিশাল যে স্থাপনা, জনগনের রক্ত চুষে কত অকল্পনীয় ব্যায়ে যে এটা নির্মিত হয়েছিল খোদাই মালুম -- অথচ শত শত বছর দূরে থাকুক, মাত্র ৫ বছরের মাথায় এত বড় দুর্গ-শহর পরিত্যাক্ত হয়েছিল। /#
একদা কোন প্রবল প্রতাপশালীর পদভারে মুখরিত হত এই অঙ্গন
এখানে হয়ত দুর্গেশ নন্দিনী রা কলকাকলিতে মুখরিত করে রাখত
এই সুড়ঙ্গ এর মাঝে চলার সময় দেখতে পেলাম প্রতিটা খাঁজ এর মাঝে রয়েছে ছোট কুঠরি , হতে পারে এক ধরনের কয়েদখানা ।
৫২ টি সিংহ দরজার একটি
দুর্গের অভান্তরে পানির কূপ
অতীত অ বর্তমান এর সেতুবন্ধন
গিয়াস উদ্দিন তুঘলক এর সমাধি
দুর্গ থেকে গিয়াস উদ্দিন এর সমাধি
সমগ্র দুর্গের বর্তমান পূর্ণ চিত্র
অতীত ঘুরে আমার একটা বিষয় বোধগম্য হইল যে
ম্যান প্রপোজেস গড ডিসপোজেস..।
এই সব ধ্বংস হয়ে যাওয়া সাম্রাজ্য গুলি দেখে যদি আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করে ফেলা রাজনীতি বিদ রা একটু শিক্ষা নিতেন ,তাহলে হয়ত সাধারন জনতা বেঁচে যেতাম ..।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।