ড্রেন নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার। অভিযোগ উঠেছে, একপর্যায়ে শত শত মানুষের সামনে ওই ঠিকাদারের গালে চড় মারেন পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। এ ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকায় পানিসম্পদমন্ত্রীর গ্রামের বাড়িতে। ঠাকুরগাঁওয়ে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও রুহিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মো. শরিফ ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, 'আসলে গতবার আমি রুহিয়া মেলার প্রধান হয়েছিলাম এবং এখান থেকেই আমার ওপর মন্ত্রীর রাগ।
তা ছাড়া আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণের জন্য আমি টাকা দিতে পারিনি। এটাও একটা কারণ। এ জন্য শুক্রবার মন্ত্রীর বাড়িতে শত শত লোকের সামনে আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুলের সঙ্গে আমার কথাকাটাকাটি হয়। তখন মন্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে এসে রেগে গিয়ে আমার গালে দুটো থাপ্পড় মেরেছেন। আমি এ ঘটনায় স্থম্ভিত হয়ে যাই।
সিদ্ধান্ত নেই আত্মহত্যা করব। আমার স্ত্রী, সন্তান তারা আমাকে শান্ত করে রেখেছে। তাদের মুখের দিকে দেখে আমি এটা করতে পারিনি। আমি এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত এবং চেম্বার অব কমার্সের মেম্বার। এত অপমান আমি মেনে নিতে পারছি না।
'
তবে ড্রেন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন ঠিকাদার শরিফ। তিনি বলেন, 'আমি এ কাজটি সাত লাখ টাকা ব্যয় করে নিয়েছি। এর মধ্যে বিভিন্ন খরচ রয়েছে। এ কাজে তেমন লাভ হয়নি। দুই লাখ টাকার মতো আমার লাভ হয়েছে।
তা ছাড়া এত ভালো কাজ জেলার অন্য কোথাও আর হয়নি। কাজটিতে লাভ না হওয়ায় স্থানীয় নেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারিনি। '
রুহিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আশরাফুল বলেন, 'ড্রেন নির্মাণের কাজ ভালো হয়নি বলে এলাকার মানুষ মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছে। শুক্রবার দুপুরে রুহিয়ায় এ নিয়ে ঠিকাদার শরিফ মন্ত্রীর সামনে আমার সঙ্গে কথাকাটাকাটি করতে থাকেন। তখন শাসন করতেই মন্ত্রী শরিফের দুই গালে দুই থাপ্পড় মারেন।
'
পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে মন্ত্রীর এপিএস পার্থ সারথী সেন চড় মারার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, 'আশরাফুল ও শরিফ ঝগড়ায় লিপ্ত হলে পানিসম্পদমন্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে দুজনকে থামিয়ে দেন এবং শাসন ও রাগাগাগি করেন। তিনি ঠিকাদারের গায়ে হাত তোলেননি। '
যেভাবে নির্মিত হয়েছে ড্রেন : রুহিয়া একটি বাণিজ্যিক এলাকা। রুহিয়া চৌরাস্তার পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
গত জুন মাসে প্রায় ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ৪৬০ মিটার দীর্ঘ ড্রেন। রুহিয়া-আটোয়ারী সড়কে ড্রেনের শেষ প্রান্ত। অপর প্রান্ত রুহিয়া রেলক্রসিংয়ে ড্রেনের। দুই প্রান্তই মাটি দিয়ে আটকানো। ড্রেনের মাঝখানেই দু-এক জায়গায় রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।
বর্ষার সময় পানি রাস্তা বেয়ে ওই ড্রেনে গিয়ে পড়ে। ড্রেনের দুই প্রান্ত বন্ধ থাকায় পানি উপচে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানি ড্রেনে জমে রয়েছে। দোকানপাট ও রাস্তার বর্জ্য জমে ড্রেনটি মশামাছির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। ড্রেনের ওপরে কোনো স্লাব না থাকায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
ড্রেনের পাশের দোকানিরা এতে অতিষ্ঠ।
এলাকার লোকজন যা বলেন : দোকানি আবুল হোসেন, মিনারুল ইসলাম, ইসলাম উদ্দীনসহ অনেকেই জানান, ড্রেনটি এভাবে নির্মাণের কোনো প্রয়োজন ছিল না। এলাকার পানি ড্রেনে এসে পড়ে। কিন্তু ড্রেনের পানি যাবে কোথায়? তা ছাড়া ড্রেনের ওপর স্লাব নির্মাণ করা হয়নি। ড্রেনের মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে।
আসলে এখানে ড্রেনটি নির্মাণের কোনো দরকারই ছিল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন প্রকৌশলী জানান, ৪৬০ মিটার দীর্ঘ ওই ড্রেন নির্মাণে ঠিকাদার যদি খুবই ভালো কাজও করেন তাহলে সর্বোচ্চ ব্যয় ২৩ লাখ টাকা হতে পারে। এই ড্রেনের শিডিউল ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ড্রেনের ডিজাইন তৈরির সময়ই নির্মাণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কারচুপির সুযোগ রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারের প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে।
জেলা পরিষদ প্রধানের বক্তব্য : ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, 'আমি ঠাকুরগাঁওয়ে যোগদান করেছি মাত্র আট মাস হলো। রুহিয়া ড্রেন নির্মাণের টেন্ডার তার আগেই হয়েছে। তার পরও আমি সরেজমিন দেখেছি রুহিয়া পানিনিষ্কাশন ড্রেন নির্মাণে কোনো অনিয়ম হয়নি। নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাষী বা কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে মনে হয় না। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।