আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কামরাঙ্গীর চরে আরেক স্লামডগ কাহিনী


ঢাকার ব্যস্ত সড়কে হাত-পা কাটা কিংবা বিকৃত অঙ্গের দরিদ্র শিশুদের ভিক্ষা করার দৃশ্য বিরল নয়। অনেক পথচারী মনে করেন, এরা বুঝি জন্ম থেকেই কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী। কিন্তু এদের অধিকাংশই জন্মগত প্রতিবন্ধী নয়। সংঘবদ্ধ চক্র এদের জোর করে অঙ্গহানি করে ভিক্ষায় নামিয়েছে। অসহায় ওই শিশুদের প্রতিবন্ধকতা কাজে লাগিয়ে চক্রগুলো তাদের ভিক্ষাবৃত্তির পেশায় জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করছে।

এ যেন ভারতের অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র স্লামডগ মিলেনিয়ারেরই বাংলাদেশ সংস্করণ। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনার খোঁজ মিলেছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বেড। সেখানে মারাত্মক আহত অবস্থায় শুয়ে আছে কেরানীগঞ্জের রিকশাচালক উম্মাদ আলীর সাত বছরের ছেলে নিয়ামুল। ছোট ওই বাচ্চাটির গলা, ঘাড় ও বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত স্পষ্ট।

তার মাথাও ব্যান্ডেজে বাঁধা। নিয়ামুলকে দেখে শিউরে উঠতে হল যখন সে তার মা সফুরার সহযোগিতায় প্রসাব করছিল। দেখা গেল তার পুরুষাঙ্গও নরপশুরা ধারালো অস্ত্রে কেটে নিয়েছে। কি কারণে এই অবুঝ শিশুর ওপর এমন নির্যাতন? জানতে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। সফুরা জানান, ৬ আগস্ট নিয়ামুল দুপুরে ভাত খেয়ে বাইরে খেলতে যায়।

ছেলে বাড়ি ফিরে না আসায় তাকে খুঁজতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধের দেওয়ালের অন্য পাশে ছেলের চিৎকার শুনতে পান তিনি। গিয়ে তিনি দেখেন ছেলের সারাদেহ রক্তে ভিজে আছে। স্বামীর সহযোগিতায় নিয়ামুলকে নিয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। কী হয়েছিল সেদিন_ জানতে চাইলে নিয়ামুল জানাল রোমহর্ষক এক কাহিনী।

নিয়ামুল বলে, ওই দিন তার বন্ধু ইমরান ও রাসেল তাকে খেলার কথা বলে একটি গলির ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই প্রতিবেশী সাদ্দাম, রমজান ও কোরবান নামের তিন যুবক ছিল। যুবকরা নিয়ামুলকে একটি বন্ধ ঘরে আটকে মুখে কাপড় বেঁধে ফেলে। পরে দুই পা ও হাত বাঁধা হয়। এরপর ধারালো ব্লেড দিয়ে একে একে নিয়ামুলের গলা, ঘাড়, বুক ও পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে।

এ সময় তারা নিয়ামুলকে বলছিল 'তোর হাত-পা কাইট্যা তোরে দিয়া ভিক্ষা করামু'। নিয়ামুল জানায়, ওই তিন যুবককে সে আগে থেকেই চিনতো। তাদের অপকর্মের কথা বাবাকে বলে দেবে_ একথা জানার পর যুবকদের একজন নিয়ামুলের মাথা ইটের আঘাতে থেঁতলে দেয়। পরে তারা পালিয়ে যায়। নিয়ামুলের বাবা উম্মাদ জানান, ওই ঘটনার ১৯ দিন আগে সাদ্দাম ও তার লোকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।

এক পর্যায়ে তারা তার পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আসামিরা মামলা না করার জন্য তাকে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলার তদারকি করছেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনের নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান। অ্যাডভোকেট এলিনা খান জানান, একটি অবুঝ বাচ্চার ওপর এ ধরনের অমানুষিক নির্যাতন কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

আইনের দৃষ্টিতে প্রতিহিংসাবশত এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা অপরাধ। এই অপরাধের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শাস্তি হিসেবে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড এবং পেনাল কোডের দণ্ডবিধি ৩২৬ মোতাবেক অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। এদিকে দরিদ্র পরিবারটি নিয়ামুলের চিকিৎসা বাবদ ইতিমধ্যে লক্ষাধিক টাকা ধার করেছে। ছেলের চিকিৎসার জন্য পরিবারটির আরো অর্থ সাহায্যের প্রয়োজন বলে নিয়ামুলের মা-বাবা জানিয়েছেন।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।