আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অহনার একদিন..

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.

আজকে খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গেল অহনার । সারাদিন কোন কাজ নাই তার । ক্লাস বন্ধ । পড়াও নেই স্যার এর কাছে । কি করবে তাই ভেবে কোন কুলকিনারা করতে পারছে না ।

ভোরের হাল্কা আভা অহনার রুম এর জানালা ভেদ করে কিছুটা চলে এসেছে । দেখতে অসাধারণ লাগছে তার । সে রুম এর দরজা খুলে বারান্দায় বের হয়ে আসলো । অহনারা থাকে ৩ তলায় আর তাদের বাসাটা চার তলা । এই সাতসকালেও আশেপাশের বাসা থেকে চাচারা রাস্তায় নেমে পরেছেন হাটাহাটি করতে ।

দেখতে ভালই লাগে অহনার । সবাই তার পরিচিত এই এলাকায় । খুব সকালে অহনা ঘুম থেকে উঠলেই চলে আসে বারান্দায় । অহনাদের বাসার ঠিক সামনের বাসাতেই থাকেন করিম সাহেব আর তার পরিবার । ২ ছেলে আর ২ মেয়ে নিয়ে তার সুখি সংসার ।

মেয়েরা সব বিদেশ এ থাকে হাসবেন্ড সহ । অহনা আর করিম সাহেবদের বাড়ি সামনাসামনি । তাই বাসায় কি হচ্ছে না হচ্ছে তা ভাল মতই বুজতে পারে অহনারা । করিম সাহেব ৩ ছেলে মেয়ের বিয়ে আগেই দিয়েছেন । কিন্তু ছোট ছেলে, শুভকে বিয়ে দিতে পারছেন না ।

কারণ ছেলে চাচ্ছে আরও পরে বিয়ে করতে । ৩ টা প্রথম শ্রেণী পাওয়া ছেলে এখন চাকরি করে দেশের নামকরা একটা ব্যাংক এ । অহনাদের বাসাতে নিয়মিত যাতায়াত করত সে আগে । কিন্তু এখন ব্যস্ততার কারণে তেমন একটা আসা পরে না । অহনা মনে মনে ছেল টাকে খুব পছন্দ করে ।

কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না কিছুই । শুভ নিজেও হয়ত অহনা কে পছন্দ করে । সেও এ ব্যাপার নিরব । তবে অহনা খুব বুজতে পারে যে শুভ তাকে অনেক পছন্দ করে । অহনা যখন কথা বলে তখন শুভ পলকহীন চোখ এ তাকিয়ে থাকে অহনার দিকে ।

মনোযোগী শ্রোতা হয়ে যায় তখন সে । চোখ এ চোখ রেখে অবিরাম তাকিয়ে থাকা অহনা অবশ্য ভালই উপভোগ করে । তারপর ও তার মনে কি আছে সেটা বুজতে দেয় না শুভ কে । দিনটি আজকে শনিবার । তাই অফিস ছুটি সবার ।

মনে মনে অহনা তাই শুভ কে চাইছিল যাতে ও বারান্দায় আসে । অহনার মনের কথা হাতে নাতে ফলে গিয়েছে ঠিক তার ১০ মিনিট পর । শুভ বারান্দায় এসে সরাসরি অহনাদের বারান্দার দিকে তাকিয়েছে । অহনা কে দেখে শুভ একটু হাসি দিল । অহনাও দিল ।

চোখ এ চোখই যেন তাদের কথা হচ্ছিল । শুভ কে আগে এতটা মনের দিক থেকে খোলামেলা মনে হইনি অহনার কখনও । কিন্তু আজকে অহনার কাছেই অবাক লাগছে তার এরকম উন্নতি দেখে । হঠাৎ অহনা কে উদ্দেশ্য করে সে জানতে চাইল যে বিকালে ফ্রী আছে কি না । অহনা বলল আছে ।

শুভ বিকাল ৫ টায় অহনার কাছ থেকে সময় চাইল দেখা করার । এই প্রথম শুভ এরকম ভাবে দেখা করতে চাইছে অহনার সাথে । দেখা করার দরকার হলে শুভ বাসায় আসে । বা রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে বা ফোন করে বলে । কিন্তু আজকে অন্য কোথাও দেখা করতে চাইছে সে ।

একটু ইতস্তত করে অহনা সম্মতি দিয়ে দিল দেখা করার । বিকাল এর দিকে ঘুমিয়ে পরেছিল অহনা । ঘুম ভেঙ্গে দেখে ৫ টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি । তাই গন্তব্যে পৌছোতে অনেক দেরি হয়ে গেল । যেয়ে দেখে একটা চেয়ার এ শুভ বসা আর একটাতে বসা অপরিচিত একটা মেয়ে ।

অসাধারণ সুন্দরী একটা মেয়ে । পরোনে লাল শাড়ি । যদি চেহারায় বয়সের ছাপ স্পষ্ঠ কিন্তু তারপর ও অহনা দেখেই অবাক হয়ে গেল । এত সুন্দরী এই মেয়ে ! অহনা তার কাছে কিছুই না । মুখোমুখি বসলো অহনা ।

শুভই শুরু করল কথা । পরিচয় করিয়ে দিল অহনার সাথে মেয়েটাকে । সমস্ত পৃথিবীটা কেমন জানি চোখের সামনেই দুলে উঠল যখন শুভ জানালো এই মেয়েটার সাথে শুভ এর সম্পর্ক আছে প্রায় ৩ বছর । অথচ একবারের জন্য মনে হয় নাই যে শুভ এরকম কোন কাজ করতে পারে । শুভ কে অহনার মনে হয়েছে সাধাসিধা একটা ছেলে ।

মুখটা একেবারে কালো হয়ে গেল যেন অহনার । শুভ কেন অহনা কে ডেকেছে সেটা জানতে চাইলো সে । শুভ আসলে অহনার সাহায্য চায় । শুভ এর পরিবার এই মেয়েকে মেনে নিবেন না । কারণ শুভদের পারিবারিক মর্যদা সমাজে অনেক বেশি মেয়েটার থেকে ।

পরিবারকে মানানোর জন্যই অহনাকে তার দরকার । এদিকে অহনা চোখ ফেটে যেন জল আসছে । কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে । মুখটা নিচু করে আছে আর মাঝে মাঝে মেয়েটাকে দেখছে সে । শুভ হয়ত ব্যপারটা বুজতে পেরেছিল ।

তাই সে অহনাকে সময় দিল ভাবার জন্য । অহনা ভেবে দেখবে বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল । কিন্তু কিছুদুর যাওয়ার পর একটা হাসির আওয়াজ কানে ভাসতে লাগলো । পিছন ফিরে তাকালো অহনা একবার । পিছন ফিরেই দেখতে পেল শুভ আর মেয়েটা হাসছে অহনার দিকে তাকিয়ে ।

অহনার রাগ হল শুভ এর উপর । সে আবার ফেরত গেল শুভ এর কাছে । জানতে চাইল হাসির কারণ । শুভ অহনাকে অবাক করে দিয়ে তার হাতে একটা লাল গোলাপ ধরিয়ে দিল । অহনা রাগে যেন ফুসতে লাগলো ।

সে বলেই ফেলল আমাকে এসব কেন দিচ্ছো ? তাকে দাও । আমি তোমার কে ? আমার এসব এর দরকার নেই । বলেই হাউমাউ করে কেদে ফেলল অহনা তার চোখ ঢেকেই । শুভ যা বুঝার বুঝে নিল । চোখ খুলে অহনা তাকাতেই অবাক হল আরো ।

হাট গেড়ে বসে আছে শুভ অহনার সামনে । এ এক অন্য রকম দৃশ্য । ওখানে যারা যারা ছিল সবাই এই বেপারটা দেখছে চরম আগ্রহের সাথে । শুভ আসলে একটু পরিক্ষা করছিল অহনাকে । অহনা আসলেই ভালবাসে কি না শুভকে ।

আর শুভ তার পাশে থাকা মেয়েটার আসল পরিচয় দিল । মেয়েটা আসলে শুভ এর বড় বোন যে কি না ২ দিন আগে এসেছে বিদেশ থেকে । সব শুনে অহনা অভিমানী চোখ এ তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন । আর শুভ হাটু গেড়ে বসে অহনা কে বলল - “I love you so much. Will you marry me? “ অহনা আনন্দে কেদে দিল আর দেরি না করে সম্মতি সুচক মাথা নাড়ল ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।