আমার খুব কষ্ট হয়, যখন RAJAKAR বানানটা বাংলা বর্ণমালায় লিখা হয়। এটা বর্ণমালার জন্য অপমান।
মাইজগাঁও(ফেঞ্চুগঞ্জ) সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া ট্রেনটার দিকে আঙ্গুল তুললেন মোসাদ্দেক ভাই। ট্রেন যখন মাঝ সেতুতে, তখন তিনি আঙ্গুলের ট্রিগার টেনে দিলেন। হিসেবমত ব্রীজটা তখন বিকট শব্দে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ার কথা, কিন্তু তার বদলে গগনবিদারী অট্টহাসি শোনা গেল।
বিরক্ত চোখে তাকালেন মোসাদ্দেক ভাই;
-'দিলি তো টার্গেট নষ্ট কইরা!'
এই বলে আঙ্গুলে ফুঁ দিয়ে ধোয়া সরালেন। হাতটা কেতাবী ভঙ্গিতে পকেটে ঢুকিয়ে উদাস হয়ে গেলেন। পেছনের হাসির রোল তখনো থামেনি। কুশিয়ারা নদীর উপর ভাসতে থাকা বাঁশের এই ভেলাটার উপর বসে সাত তরুণ যেন মিশে গিয়েছিল ঢেউয়ের সাথে। পলাশ, তুহিন, সজীব, সাইফুল, খালেদ (ভাই), মোসাদ্দেক (ভাই), বাশার (ভাই)।
সদ্য নদী থেকে স্নান করে ওঠা এদের কয়েকজনকে দেখে বোঝাই যাচ্ছেনা গত রাতের ক্লান্তির কথা। ওদের এখানে আসার ইতিহাসটা মোটামুটি ঘটনাবহুল। তাই পাঠকের সুবিধার্থে, কয়েক ঘন্টা পেছন থেকে শুরু করছি।
অগাস্ট ২০০১।
৮.১০ এর বাস থেকে নামতেই খালেদ ভাইয়ের হুঙ্কার, ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নে।
রাতের ট্রেনে ফেঞ্চুগঞ্জ যাব। 'মিল' অফ, সুতরাং 'ইষ্টিকুটুম'-এ খেতে হবে। ড্রেস চেঞ্জ করার সুযোগ পেলাম না। বইগুলো রেখে ব্যাগের ভেতর একটা লুঙ্গি আর একটা তোয়ালে নিয়ে ছুটলাম 'আম্বরখানা'-র দিকে। ইষ্টিকুটুমে পৌঁছে দেখি বাকিরা সবাই এসে পড়েছে।
খেয়ে দেয়ে সোজা রেলস্টেশনে। মাত্র ঘন্টাখানেকের রাস্তা, টিকেট করিনি। করিনি বলাটা ঠিক নয়, সময় পাইনি। কারণ, আমরা স্টেশনে ঢোকামাত্রই দেখি ট্রেন নড়াচড়া শুরু করে দিয়েছে। সুতরাং ননস্টপ দৌড়।
ট্রেনে টিটি একবার এসেছিল। টিকেট চাইতেই মোসাদ্দেক ভাইয়ের মহান বাণীঃ -'মামা, দেখবেন, একদিন আমরাই এই ট্রেনের ভি.আই.পি কেবিনে যাচ্ছি, আর আপনি আমাদের ফুলের শুভেচ্ছা দিচ্ছেন। মামা, আপনি চাননা আমরা অনেক বড় হই! এখন সামান্য ক'টি টাকার জন্য যদি আপনি আমাদের ধরেন, তাহলে বড় হব কি করে? আমাদের মন ভেঙ্গে যাবেনা? মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান। মামা, আপনি জেনে শুনে মসজিদ ভাঙ্গবেন?
মামা কি বুঝলো কে জানে? শুধু বললেন, 'কেন যে আপনারা এরকম করেন!'
টিটি চলে গেল। আমরা ততক্ষণে খালি সিট দখল করে নিয়ে যে যার মত করে বসে পড়েছি।
"ছুটছে রাতের ট্রেন, নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে"
মাইজগাঁও স্টেশনে নামলাম রাত সাড়ে এগারোটায়। ভাগ্য ভালো স্টেশন গেটে কেউ আটকায়নি। এই স্টেশনটা বেশিরভাগ সময়ই দেখি নির্জন থাকে। আর এখন তো মধ্যরাত। স্টেশনে বাইরে এসে দাঁড়ালাম সবাই।
আমরা একটু পেছনে ছিলাম, গিয়ে দেখি খালেদ ভাই তার পকেট হাতড়াচ্ছে।
-'কি হয়েছে? পকেট মার'?
-'না'। বোম ফাটালেন মোসাদ্দেক ভাই। 'খালেদ ঠিকানা লিখা কাগজটা আনতে ভুলে গেছে'।
-'এখন উপায়'?
-'দেখি কি করা যায়'!
-খালেদ ভাইকে উলটে পালটে খোঁজা হল।
নেই।
বাশার ভাই বললেন, 'নাম বললে চিনবেনা লোকে'?
মুখ ঝামটা দিয়ে উঠলেন খালেদ ভাই। 'ও তো এখানে বড় হয়নি, বড় হয়েছে ঢাকায়। ওকে চিনবে কিভাবে? তবে ওর বাবাকে একনামে চিনে সবাই। কাগজটাতে উনার নাম আর ঠিকানা লিখা ছিল।
-'গোলাপি রঙের কাগজ'? জিগ্যেস করলেন মোসাদ্দেক ভাই।
আমরা সবাই ঝট করে তাকালাম উনার দিকে। চোখে আশার আলো।
-'তুই জানলি কিভাবে'?
-'আরে ঐটা দলা করেই তো ট্রেনে বসে কান চুলকালাম আমি! এখন হয়তো ট্রেন লাইন ধরে খুঁজলে পাওয়া যাবে'।
-'দেশে আর কাগজ ছিলনা'! খালেদ ভাই রাগে দিশেহারা।
এখন উপায়? ট্রেন তো আসবে ভোর ছয়টায়! আর এখন বাজে সবে রাত পৌণে বারোটা। আর আমাদের সবার বারোটা বেজে, সে ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেছে কখন! সারারাত স্টেশনে বসে থাকতে হবে সেই সম্ভব অথচ বিরক্তিকর কাজের কথা মনে হতেই সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
(এর ফাঁকে বলে রাখি, আমরা আসলে এসেছি খালেদ ভাইয়ের এক লতানো আত্মীয়ের বাড়িতে। তখন মোবাইলের এতো ছড়াছড়ি ছিলনা, তাই আসার আগে যোগাযোগ করা যায়নি কারো সাথে। আর আমরা তখন ডোন্ট মাইন্ড ফ্যামিলির ছাত্র।
না সাধিলেই যেইখানে খাই, সেইখানে একবার সাধা মানে, অধিকার করিয়া লওয়া। সেই অধিকার ফলানোর জন্যই এখানে আসা এবং অতঃপর এই ঠিকানা বিভ্রাট!)
-'চল এক কাজ করি'।
উপায় বাতলালেন মোসাদ্দেক ভাইই।
আগামী পর্বে সমাপ্য...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।