আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাব্যসমালোচনায় সৈয়দ আলী আহসান রাবেয়া মঈন



কাব্যসমালোচনায় সৈয়দ আলী আহসান রাবেয়া মঈন সৈয়দ আলী আহসানের সমালোচনাকর্মের পরিধি যেমন বহুব্যাপ্ত তেমনই তা মননঋদ্ধ। কিন্তু তাঁর মধ্যে আত্মচারিত্রিক একজন কবি আছে। এবং সৈয়দ আলী আহসানের সমালোচনারূপে খ্যাতির মূলে তাঁর এই কবিসত্তার নিগূঢ় প্রভাব আছে। তাঁর কাব্যজীবনের সূচনা থেকে ‘আমার প্রতিদিনের শব্দ’ পর্যন্ত উভয় সত্তাই সক্রিয়। এই দুই সত্তার অন্তরঙ্গ সম্পর্কটি পরিস্ফুট না হলে সমালোচক সৈয়দ আলী আহসানের স্বরূপ-প্রকৃতিটি ঠিক বোঝা যাবে না।

সৈয়দ আলী আহসানের সাহিত্যিক সত্তাকে পর্যবেক্ষণ করলে উপলব্ধ হয় যে উন্মেষলগ্ন থেকে শেষাবধি তাঁর মধ্যে একজন দোর্দন্ড সমালোচক প্রতাপের সঙ্গে বর্তমান। তাঁর গদ্যসাধনা দেখা যাচ্ছে বিরতিহীন। তাঁর ভেতরে যে কবি রয়েছে- সেই কবিই বরং প্রায়শ: বিরাম নিয়েছে। তাঁর পিত্রালয়ে কবিতাশ্রবণের যে পরিবেশ ছিলো এবং শিশুকাল থেকে গ্রন্থপাঠে তাঁর যে আসক্তি ছিলো- তা-ই তাঁকে কবিতা ও গদ্য এই দুই জাতের রূপসৃষ্টির আকাঙ্খার দিকে নিয়ে এসেছিলো। ছাত্রাবস্থায় যখন থেকে তিনি বক্তৃতা বিতর্ক ইত্যাদি কথা বলার কলাকৌশল আয়ত্ত করেছিলেন সেই সময় থেকে কবিতার ক্ষেত্রে পদার্পন করেন।

সাহিত্যজীবনের অঙ্কুরসময়ে একই সঙ্গে ‘মোহাম্মদী’ ‘সওগাত’ ‘আজাদ’ ‘নবযুগ’ ‘পরিচয়’ ইত্যাদি পত্রিকায় তিনি নিজেকে কবি এবং সমালোচকরূপে উপস্থিত করেন। তাঁর কবিতারচনায় মাঝে মাঝে ছেদ পড়ার কারণ অন্বেষণ করে দেখা গেছে যখন তিনি কাব্যরচনা করছেন তখন যথার্থই তিনি কবিতার প্রেরণায় উদ্বেলিত এবং নূতন শৈলীপ্রাপ্তির কারণে পরিতৃপ্ত। যখন তুলে রাখছেন কবিতার কলম- তখন বুঝতে হবে নূতন কোনো আঙ্গিকের এষণায় তিনি আরাধনারত। তবে কবিতাচর্চায় স্বল্পবিরতি দীর্ঘবিরতি আসলেও আলী আহসান তাঁর ভেতর থেকে আত্মচারিত্রিক কবিপুরুষটিকে আবিষ্কার করে আনতে পেরেছেন, এটিই বড় কথা। ‘সমুদ্রেই যাব’ কাব্যের পর থেকে আলী আহসানের কবিসত্তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, একথা সত্য।

কিন্তু প্রথমাবধি দেখা যায় সমালোচক আলী আহসান কখনও থামেন নি। বরং কবিতার জগৎ থেকে বিদায় নিয়ে সমালোচক হিসেবে তিনি আরও প্রতাপশালী এবং বহুমুখী হয়েছেন। সৈয়দ আলী আহসান একজন শক্তিধর গদ্যশিল্পী এবং একথা তর্কাতীত সত্য যে বাংলা গদ্যধারায় তিনি এক অনুপম শৈলী সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছেন। কবিতার তুলনায় তাঁর গদ্যের পরিমাণও বেশি এবং গদ্যসৃষ্টিতে তিনি সুনিশ্চয় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাঁর গদ্যরচনার মধ্যে সাহিত্যের ইতিহাস ও সমালোচনা আছে, কবিতার বিষয়বস্তু ও তত্ত্বসম্বন্ধীয় আলোচনা আছে, শিল্পের বোধ ও চৈতন্য বিষয়ক আলোচনা আছে, প্রাচীন এবং মধ্যযুগের কাব্যাবলম্বনে গবেষণাধর্মী রচনা আছে আধ্যাত্মবোধ এবং ধর্মের প্রতি অন্তর্লীন বিশ্বাসবিষয়ক রচনা আছে, ভ্রমণের স্বাদসংক্রান্ত রচনা আত্মজীবনী উদ্ঘাটন সম্পর্কিত রচনাও আছে।

কিন্তু কাব্যসমালোচক হিসেবে তিনি কতোখানি প্রতাপী এবং প্রোথিতযশা- আমরা এখন বিস্তারিতভাবে সে বিষয়ে পর্যালোচনা করবো। এই পর্যালোচনাকালে আমরা মনে রাখবো নিজের ভেতর থেকে আত্মচারিত্রিক কবিকে তিনি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং কবিতা সম্পর্কে তাঁর বোধ ও প্রতীতী পরিণত এবং চমৎকারভাবে স্বচ্ছ। কবিতার প্রতি কবিদের নিজস্ব অবলোকন যখন তাঁদের গদ্যভাষায় ধরা পড়ে- তখন সেই অবলোকনের একটি আলাদা মূল্য হয়। যেমন একজন জীবনানন্দ দাশ অথবা একজন নজরুল ইসলাম অথবা একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন কবিতা কী, সে সম্পর্কে গদ্যভাষ্য রচনা করেন তখন তাতে আলাদা তাৎপর্য নির্ণীত হয়। কবি সৈয়দ আলী আহসানও তাঁর দেশি-বিদেশি কবিতার প্রকরণ বিষয়ে জারিত প্রজ্ঞা অর্পন করে ‘কবিতার রূপকল্প’ গ্রন্থটি রচনা করেন।

‘কবিতার কথা ও অন্যান্য বিবেচনা’ গ্রন্থে ধরা পড়ে কবিতা সম্পর্কে তাঁর যে প্রত্যয়- তার অন্তরঙ্গ রূপটি। এই গ্রন্থদ্বয়ে অভিব্যক্ত কবিতার রূপকল্প সম্পর্কে তাঁর যে বিশ্বাস, কবিতার শরীর ও আত্মা সম্পর্কে তাঁর যে প্রত্যয়- এই প্রত্যয়ের তৌলে তিনি ওজন করে দেখেছেন মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের কবিকুলের কাব্যসম্ভার। আশ্চর্য হয়ে আমরা লক্ষ্য করি প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের কাব্যকলার বিশ্লেষণে সৈয়দ আলী আহসান সমান পারদর্শী- একইরকম সাবলীল অনায়াস এবং স্বচ্ছন্দ। সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন বাঙলা সাহিত্যের একজন অসাধারণ অধ্যাপক। যদিও তিনি ছিলেন ইংরেজির ছাত্র তবু সাহিত্যকর্মে তাঁর খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠার কথা বিবেচনা করে ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বাঙলা বিভাগে শিক্ষক পদে নিযুক্ত করে।

১৯৪৯ সালে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কর্তৃক সম্পাদিত ‘পদ্মাবতী’ গ্রন্থটি ১৯৫০ সালে বাঙলা বিভাগের পাঠক্রমের মধ্যে তালিকাভুক্ত হলে গ্রন্থের পাঠদানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাঙলা বিভাগের নবীন শিক্ষক সৈয়দ আলী আহসান। ‘পদ্মাবতী’ গ্রন্থের পাঠদানকালে জায়সীর ‘পদুমাবত’ কাব্যের সঙ্গে তিনি পরিচিত হন এবং সে সূত্রে আংশিকভাবে আলাওলের নির্ভরতা ও ব্যতিক্রম তাঁর লক্ষ্যগোচর হয়। এ সময় তিনি আলাওলের নির্ভরতা ও মৌলিকতা বিষয়ে বাঙলা একাডেমী পত্রিকায় ‘আলাওল ও জায়সী’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। আলাওল জায়সীর কাব্যের উপর কতোটা নির্ভরশীল ছিলেন অথবা কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে তিনি মৌলিকতা অর্জন করেছেন- এই দৃষ্টিকোন থেকে আলাওলের কাব্যের মূল্যায়নের প্রচেষ্টা এই প্রথম। আলাওলের জন্মস্থান বিষয়ে ‘মাহে নও’ পত্রিকায় প্রকাশিত অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের ‘আলাওলের জন্মস্থান ও পিতৃভূমি’ শীর্ষক তার একটি প্রবন্ধ এ সময়ে সুধীমহলে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করে।

১৯৫৩ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত যখন সৈয়দ আলী আহসান করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙলা বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন তখন অবসরকালে সময়ক্ষেপণের উপকরণ হিসেবে হিন্দী ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় নিরত হন। হিন্দী অবধী সাহিত্যের আনন্দ ও সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে স্থির করেন সুযোগ পেলে এই আনন্দ ও সৌন্দর্যের স্বাদ বাঙালি পাঠকের কাছে উপস্থিত করবেন। ১৯৬১ সালে বাঙলা একাডেমীতে যোগদানের পর সে সুযোগ আসে এবং তিনি ‘পদ্মাবতী’ অনুবাদ করেন। ‘পদুমাবৎ’ অনুবাদের সফলতা সৈয়দ আলী আহসানকে পরবর্তীকালে হিন্দী সাহিত্যের আরও দুটি অবদান অনুবাদে উদ্বুদ্ধ করে। সে দুটি গ্রন্থ হচ্ছে আব্দুর রহমান বিরচিত ‘সন্দেশ রাসক’ এবং কুতবনকৃত ‘মৃগাবৎ’।

এভাবে তিনি ক্রমশ বাঙলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং গবেষণায় বৃতী হয়ে যান। বাঙলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগ বিষয়ে তাঁর অপর উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘সরহপা: দোহাকোষগীতি’ ‘চর্যাগীতিকা’ ‘চর্যাগীতিপ্রসঙ্গ’ ‘মধুমালতী’ ইত্যাদিÑ যে গ্রন্থগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকাভুক্ত হয়েছে এবং বাঙলা সাহিত্যের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষকদের প্রভূত উপকারে আসছে। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রতি সৈয়দ আলী আহসানের যথেষ্ট শ্রদ্ধা এবং মুগ্ধতা ছিলো। অনেক ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণের একটি প্রেরণা তাঁর মধ্যে কাজ করেছে। ১৯৪৯ সালে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পদ্মাবতী সম্পদনা করেছিলেন।

সৈয়দ আলী আহসান ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ্মাবতী পড়াতে গিয়ে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বইটিকেই অবলম্বন করেছিলেন। পরে গ্রন্থটিকে নুতনভাবে রচনা করার তাঁর ইচ্ছা জাগে। এই গ্রন্থের মাধ্যমেই প্রথম বাঙলা সাহিত্যে তুলনামূলক সমালোচনা প্রবর্তন করেছিলেন সৈয়দ আলী আহসান। এই গ্রন্থে তিনি যে পাঠ নিরূপন পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন সেটা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ পদ্ধতি আমাদের দেশে তো নয়ই ভারতের কোনো পণ্ডিত বা সম্পাদকও অবলম্বন করেননি।

দেখা যায় ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যে কাজগুলো করেছেন সে বিষয়ে সৈয়দ আলী আহসান আরও প্রাগ্রসর চিন্তাভাবনা করেছেন এবং নুতনভাবে লিখেছেন। স্বলিখিত একটি ভূমিকা সংযোজিত করে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লার ‘চর্যাগীতিকা’ যখন তিনি বাঙলা একাডেমী থেকে প্রকাশ করেন তখন নুতনভাবে চর্যাগীতিকা রচনার বাসনা তাঁর মনে ছিলো- সে কারণে পরবর্তীকালে ‘চর্যাগীতিকা’ ও ‘চর্যাগীতিপ্রসঙ্গ’ এই দুটি গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। হিন্দী-অসমীয়া-উড়িয়া ভাষায় চর্যা সম্বন্ধে এযাবৎকৃত সকল গবেষণা পরীক্ষা করে নতুনভাবে তিনি এই গীতিকার পাঠ নির্ধারণ করেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ দেখিয়েছিলেন চর্যার শব্দাবলী বাঙলাভাষার অন্যান্য কাব্যের মধ্যে (যেমন: শ্রীকৃষ্ণকীর্তন) কিভাবে এসেছে। আর সৈয়দ আলী আহসান দেখিয়েছেন যে কেবল বাঙলা ভাষার কাব্য নয় হিন্দী-অবধী অসমীয়া ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার মধ্যেও চর্যাগীতিকার শব্দ কেমন করে ব্যাপকভাবে স্থান করে নিয়েছে।

‘সরহপা/ দোহাকোষগীতি’ নাম দিয়ে যে গ্রন্থটি গবেষণা সম্পাদনা ও অনুবাদ করলেন সৈয়দ আলী আহসান- সেটিরও অনুপ্রেরণা এসেছিলো ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কাছ থেকেই। গ্রন্থের উৎসর্গপত্রে আলী আহসান লিখেছেন ‘মরহুম ডক্টর শহীদুল্লাহ / যিনি আমাকে প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্যে উৎসাহিত করেছিলেন। ’ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্যারিসে অবস্থানকালে এই দোহাকোষ নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন। তিনি শাস্ত্রীয় পাঠ অবলম্বন করে এবং প্যারিসে বিবলিওথেক ন্যাশিওনাল-এ প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপি অবলম্বন করে পাঠ সম্পাদন করেন। পাঠ সম্পাদনার ক্ষেত্রে তিব্বতি অনুবাদ তাঁর সহায়ক হয়েছিলো।

শহীদুল্লাহর গবেষণাসন্দর্ভটি ১৯২৮ সালে প্যারিস থেকে Les Chants Mystiques de kanha et de Saraha-এই নামে প্রকাশিত হয়। নেপাল রাজদরবার গ্রন্থাগারে রক্ষিত তালপাতার পুঁথি অবলম্বন করে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দোহাকোষের পাঠোদ্ধার করেছিলেন এবং ১৯১৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছিলেন। শাস্ত্রীর প্রাপ্ত তথ্যাদির ওপর ভিত্তি করে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কাহ্নপা এবং সরহপার দোহাকোষ ফরাসী ভাষায় অনুবাদ করেন। আলোচনাসূত্রে তিনি দোহাকোষ দুটির ধ্বনিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন এবং কাহ্ন ও সরহর জীবনবৃত্তান্ত উপস্থিত করেন। দোহাকোষগুলোর ব্যাকরণ ও ধ্বনিতত্ত্বও তিনি আলোচনা করেন।

তিনি তাঁর গবেষণা সন্দর্ভে তিব্বতী অনুবাদ ও যুক্ত করেছিলেন। শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালে দোহাকোষটি সংস্কৃত টীকাসহ যেভাবে পেয়েছিলেন সেভাবেই কোনোরূপ সম্পাদনা ছাড়াই মুদ্রিত করেন- দোহাকোষের কোন বঙ্গানুবাদ বা বিশ্লেষণ তিনি দেননি। ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী সর্বপ্রথম দোহাকোষ সম্পাদনা করেন ১৯৩৮ সালে। তবে রাহুল সাংস্কৃতায়নই প্রথম সরহপার দোহাকোষের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপির আবিষ্কারক। তিব্বতের সস্ক্য’ মঠে প্রাপ্ত তালপত্রের এই প্রচীনতম পাণ্ডুলিপির ওপর ভিত্তি করে রাহুল তাঁর গবেষণাগ্রন্থ সম্পাদনা করেন যেটি এই পর্যায়ের সর্বশেষ যথার্থ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ।

সরহপার দোহাকাষ রচনায় সৈয়দ আলী আহসানের বিশেষত্ব হচ্ছে বাঙলা ভাষায় সরহপার দোহাকোষ নিয়ে তিনিই প্রথম আলোচনা করেছেন। পূর্বোক্ত সকলের পাঠ পরীক্ষা করার সুযোগ তিনি পেয়েছেন এবং রাহুলের পাঠকেই তিনি সর্বাংশে গ্রহণ করেছেন। আধুনিক বাঙলা সাহিত্যের সমালোচনায়ও সৈয়দ আলী আহসানের আগ্রহ প্রবল। মধুসূদন-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল- বাঙলা সাহিত্যাঙ্গনের এই প্রধান কবিপুরুষদের সমালোচনায় তিনি প্রবৃত্ত হয়েছিলেন তাঁর সজীব উৎসাহ এবং দৃষ্টিভঙ্গির স্বকীয়তা নিয়ে। শৈশবকালেই তাঁর হৃদয়ে জাগ্রত হয়েছিলো কবি মধুসূদনের প্রতি মুগ্ধতা।

কৈশোরে জনৈক ডাক্তার আবদুল বারীর কণ্ঠে মেঘনাদবধ কাব্যের আবৃত্তি শুনে তিনি তন্ময় হয়ে পড়েন এবং এই কাব্যপাঠে আগ্রহান্বিত হয়ে ওঠেন- ‘এখনও আমার কানে আমার কিশোর বয়সের আবৃত্তির জয়োল্লাস বেজে ওঠে: ‘তুমিও আইস দেবি, তুমি মধুকরী কল্পনা’ মধুসূদনের সাহায্যেই আমি বাংলা কবিতায় শব্দের তাৎপর্য আবিষ্কার করতে কৌতূহলী হই। কবিতায় যে শব্দের একটি অন্তর্গূঢ় চৈতন্য থাকে মধুসূদনের কবিতা পাঠ না করলে তা অনুভব করা আমার পক্ষে সহজ হতো না। ... আমার কাছে সে বয়সেই মাইকেলকে মহৎ কবি মনে হয়েছিলো কেননা তিনি শব্দের ভূবনে অনায়াসে বিচরণ করেছিলেন। ’ [‘স্রোতোবাহী নদী’, পৃষ্ঠা-১১০-১১১]। এই মুগ্ধতার কারণেই পরবর্তীকালে তিনি মধুসূদনকে অবলম্বন করে ‘কবি মধুসূদন’ গ্রন্থ রচনা করেন।

‘মধুসূদন : কবিকৃতি ও কাব্যাদর্শ’ গ্রন্থটি রচনাকালে সৈয়দ আলী আহসান পূর্ববর্তী সমালোচক শশাঙ্কমোহন সেন এবং মোহিতলাল মজুমদারের তুলনায় ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। সৈয়দ আলী আহসান বহুদিন ধরেই মধুসূদনের কাব্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বি¯তৃত ভূমিকা এবং টীকাভাষ্যসহ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মধুসূদনের সবকটি কাব্যগ্রন্থ পরীক্ষা করেছেন। ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যটি এ সব কটির মধ্যে বিশিষ্টতার দাবি রাখে। তাঁর ‘বীরাঙ্গনা’ সম্পাদনাটি একটি অসাধারণ পাণ্ডিত্য এবং প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে।

এ গ্রন্থের প্রতিটি কবিতাক তিনি বিশ্লেষণ করেছেন এবং কবিতাগুলোর মধ্যে ব্যবহৃত নামবাচক শব্দের এবং বিশ্লেষণের ব্যাখ্যা উপস্থিত করেছেন। শুধুমাত্র তাই নয় প্রতিটি কবিতার মধ্য দিয়ে প্রেমের যে আর্তি প্রকাশিত হয়েছে, কবিতাবিশেষে সে আর্তির বিভিন্নতাকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর বিশ্লেষণের ফলে কবিতায় উল্লিখিত বিভিন্ন নারীচরিত্র তাদের সকল রহস্য উন্মোচন করে আমাদের দৃষ্টির সমক্ষে এসেছে। সৈয়দ আলী আহসানই প্রথম ব্যক্তি এবং এ পর্যন্ত শেষ ব্যক্তি যিনি ‘বীরাঙ্গণা’ কাব্যের সঙ্গে মূল ল্যাটিন কাব্যের তুলনা করেছেন এবং তুলনায় মধুসূদনের নির্ভরতা যেমন দেখিয়েছেন তেমনি স্বাতন্ত্র্যও উন্মোচন করেছেন। আমার বিবেচনায় মধুসূদনের ‘বীরাঙ্গণা’ কাব্যের বিশ্লেষণ আর কেউ এতো মধুর এবং সুশৃঙ্খলভাবে পাঠকের কাছে উপস্থিত করতে পারেননি।

অন্যান্য যে সকল আলোচক ‘বীরাঙ্গনা’র কথা বলেছেন, তাঁরা ‘বীরাঙ্গনা’র ওপর ওভিদের প্রভাবের কথাই বলেছেন কিন্তু প্রভাবের বৈশিষ্ট্য মাত্রা এবং গুরুত্ব কেউ বিশ্লেষণ করেন নি। এতে মনে হয় কেউ মূল গ্রন্থটি স্পর্শ করে দেখেন নি। সৈয়দ আলী আহসানই প্রথম যিনি ‘বীরঙ্গনা’র প্রতিটি পত্রের সঙ্গে ওভিদের পত্রগুলোর সমান্তরালতা সন্ধান করেছেন এবং সার্থকভাবে বিদেশি প্রভাব চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সৈয়দ আলী আহসান গ্রীক ফেইট এবং নেমেসিসের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন এবং ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’ এর অনুশীলনটি কিভাবে ঘটেছে তার পরিচয় উদ্ঘাটন করেছেন। ‘ফেইট’ এবং ‘নেমেসিস’ সংক্রান্ত বিষয়টি শশাঙ্কমোহনের আলোচনায় প্রথম স্পষ্ট হয়।

ধারণা হয় শশাঙ্কমোহনের কাছ থেকে সূত্রটা নিয়ে সৈয়দ আলী আহসান বিষয়টি নতুন করে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর বিশ্লেষণের পদ্ধতি শশাঙ্কমোহনের পদ্ধতি থেকে আলাদা। শশাঙ্কমোহন সেনের আলোচনার মধ্যে একটি গভীর রসাবেশ আছে; সৈয়দ আলী আহসানের আলোচনাটি অত্যন্ত নির্মোহ এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রমাণিত। তবে ‘মেঘনাদবধ কাব্যে মানবভাগ্য’ প্রবন্ধটির মধ্যে বিশ্লেষণের সঙ্গে আবেগ এসেছে এবং একপ্রকার তন্ময়তাও এসেছে। তবুও মোটামুটিভাবে বলা যায় মধুসূদনের ওপর সৈয়দ আলী আহসানের সবকটি আলোচনাই বিশ্লেষণধর্মী- কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুলনামূলক এবং সামগ্রিকভাবে মূল্য নির্ধারণের একটি সঙ্গত চেষ্টা।

মধুসূদনের ক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে কাব্যগত রসাবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছেন এবং আলোচনা কখনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হতে দেননি। অর্থাৎ কবিতা পাঠের ফলে পাঠক হিসেবে তাঁর যে আনন্দ-শিহরণ তা তিনি প্রকাশ করতে চাননি। তিনি চেয়েছেন যেনো পাঠক তাঁর বিশ্লেষণের সাহায্যে মধুসূদনের কাব্যের রসনিবেদনকে যথার্থভাবে অনুভব করতে পারে। আলোচনার ক্ষেত্রে সৈয়দ আলী আহসানের ভাষা অত্যন্ত শানিত এবং যুক্তিগ্রাহ্য। এই পদ্ধতিটি পাশ্চাত্যের সমালোচনার বিশ্লেষণপদ্ধতির উপর তৈরি হয়েছে।

এলিয়ট তাঁর বিভিন্ন সমালোচনামূলক প্রবন্ধে এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করেছেন এবং বর্তমানকালে পাশ্চাত্যজগতে এই পদ্ধতিটিই স্বীকৃত পদ্ধতি। কিছুকাল আগে পাশ্চাত্য সমালোচনার মধ্যে তন্ময়তার একটা স্থান ছিলো। ব্রাডলী তাঁর শেক্সপীরীয়ান ট্রাজেডি নামক গ্রন্থে একটি অনবদ্য ভাষার চাতুর্যে নিজের অভিনিবেশকে প্রকাশ করেছেন এবং একটি আবেগগত উচ্চারণের মধ্য দিয়ে শেক্সপীয়রকে বিশ্লেষণ করবার চেষ্টা করেছেন, যার ফলে এই রচনাটি একটি মৌলিক রচনার সৃষ্টিধর্মী আবেশ নির্মাণ করে। মোহিতলাল ব্রাডলীর রচনারীতিকে অনুসরণ করেছেন। তাই তাঁর সমালোচনার মধ্যে তাঁর নিজের সম্মোহিত অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়।

সৈয়দ আলী আহসান এ ধারার সমালোচক নন। তিনি কবি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সমালোচনায় কবিতার আবেশ আনেন নি। সমালোচনার ক্ষেত্রে তিনি মোহহীন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষক, বিশেষ করে মধুসূদনের ক্ষেত্রে। শৈশব থেকেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি সৈয়দ আলী আহসানের মুগ্ধতা ছিলো প্রবল। আলী আহসান যখন স্কুলের ছাত্র তখন এস এন কিউ জুলফিকার আলী নামে এক দীপ্তিমান তরুণ শিক্ষক তাঁর পাঠক্রিয়ার মাধ্যমে সাহিত্যের রুদ্ধদ্বার কিশোর আহসানের মনের সমক্ষে প্রথম উন্মোচন করেন।

এই শিক্ষকের কাছে প্রথম আলী আহসান রবীন্দ্রনাথের কবিতার ব্যাখ্যা শুনেছেন, ক্রমশ: বড় হয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাঠ করেছেন এবং বিচিত্ররূপা একটি পৃথিবীতে প্রবেশ করেছেন। এই সর্বাগ্রাসী প্রতিভার প্রতি মুগ্ধতার কারণে আলী আহসান পরবর্তীকালে লেখেন ‘রবীন্দ্রনাথ: কাব্যবিচারের ভূমিকা’ এবং ‘রবীন্দ্র কাব্যপাঠ’ গ্রন্থ দুটি। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অনেক সময়েই তিনি যে একান্ত নিজের মতো করে ভেবেছেন তার স্বাক্ষর রয়েছে লেখকের ‘পুরোনো রাজনামচার পাতা’য়, ‘আজ সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি বক্তৃতা দিলাম। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের কবিতাগুলো সম্পর্কে আমি বললাম যে, পৃথিবীতে পুরুষ এবং রমনীর প্রেমের আকর্ষণের মধ্যে যে বিচিত্র অভিব্যক্তি আছে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে তা অনুপস্থিত। রবীন্দ্রনাথের কাছে মানুষ হচ্ছে চিত্তবৃত্তির একটি লীলা যেখানে দেহ অনুপস্থিত এবং সেই কারণে øায়ুকোষের সচলতাও অনুপস্থিত।

মানবদেহের একটি সঞ্জীবনী শক্তি আছে। সেই শক্তির বলে মানুষ কামনা করে অসম্ভবকে, ব্যর্থ হয়, বঞ্চনায় নির্যাতিত হয়, কিন্তু তবুও মানুষ তার কামনাকে মিথ্যা হতে দেয় না। রবীন্দ্রনাথের মধ্যে প্রেমের এই অভিব্যক্তি খুঁজে পাই না, রবীন্দ্রনাথের কাব্যের প্রেম একটি উদার অনুভূতির মতো; কখনও তা উচ্চারোলে ফেটে পড়ে না। অনেকটা বৈষ্ণবীয় আবহ সেগুলোর মধ্যে আছে। এই বৈষ্ণবীয় লীলাচাপল্য এবং অলৌকিকের সঙ্গে সেতুবন্ধন রবীন্দ্রনাথের প্রেমের মধ্যে একটি বিশেষ রসাবেশ সৃষ্টি করেছে যেখানে পার্থিব জীবনের স্বীকারোক্তি নেই।

আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনই এর জন্য দায়ী। তাঁর পরিবেশ এবং জীবনক্ষেত্রে তাঁর সম্মানিত অবস্থান তাঁকে সাধারণ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও আকাক্সক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম এলেও তাঁকে তিনি সঙ্গোপনে রেখেছেন। প্রথম জীবনে ভ্রাতৃবধূর সঙ্গে তার একটি সম্পর্কের আভাস পাওয়া যায় এবং পরিণত বয়সে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে। তাঁর কবিতা ও গান অনুসন্ধান করলে এ দুটি প্রেমের স্পর্শ ক্ষীণভাবে কখনও কখনও অনুভূত হয় কিন্তু প্রবলভাবে কখনও নয়।

’ ‘রবীন্দ্রনাথ: কাব্যবিচারের ভূমিকা’ গ্রন্থটি বিখ্যাত রবীন্দ্রগবেষক আচার্য ডক্টর প্রবোধচন্দ্র সেনকে উৎসর্গীকৃত। তিনি ১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি গ্রন্থটি পেয়ে লেখককে যে দীর্ঘ পত্র লেখেন সেই পত্রের শেষাংশে গ্রন্থটি সম্পর্কে একট মহার্ঘ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন আছে। সেখান থেকে কিয়দংশ উদ্বৃত করছি: ‘সূর্যের আলো হীরক খন্ডের উপরে পড়ে প্রতিচ্ছুরিত হয়, মৃৎখন্ড সে আলোক প্রতিচ্ছুরিত করতে পারে না। আমাদের অক্ষম হৃৎপিন্ডও তেমনি কাব্যের আলোক প্রতিফলিত করতে পারে না, যাঁর হৃদয় কাব্যের আলোকে হীরকখন্ডের মতো প্রতিচ্ছুরিত করতে পারে তিনিই যথার্থ সমালোচক। শ্রেষ্ঠ কবির ন্যায় শ্রেষ্ঠ সমালাচকও দুর্লভ।

কালিদাসকে দেড় হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে গ্যায়টে ও রবীন্দ্রনাথের মতো সমালোচকের জন্য। এখন আমরা কালিদাসকে যেভাবে বুঝি এই দুজনের আবির্ভাবের পূর্বে সেভাবে বোঝা সম্ভব ছিলো না। আলোক প্রতিচ্ছুরিত করাও এক প্রকার সৃষ্টি। অন্ধকারে প্রদীপশিখা তিমিরাচ্ছন্ন পথকে নূতন করে সৃষ্টি করে। যথার্থ সমালোচকের হাতের দীপশিখাও তেমনি কাব্যের পথকে সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিগোচর করে, তাদের চোখে নূতন দৃষ্টি দিয়ে কাব্যের সৌন্দর্যলোককে অভাবিত আভায় উদ্ভাসিত করে।

আপনার এই বইখানিও সঞ্চারিনী দীপশিখার মতোই পাঠকচিত্তকে রবীন্দ্রসাহিত্যসরনীতে চালিয়ে নিয়ে চলেছে অপূর্ব নন্দনলোকের আশায়, অন্তত: আমার তাই মনে হয়েছে। পথের এদিকে ওদিকে কতো হীরের টুকরো পড়েছিলো সাধারণ নুড়ির মতো। আপনার হাতের দীপশিখা থেকে আলো পড়তে সেগুলি ঝকঝক করে উঠলো। বোঝা গেলো সেগুলি সাধারণ নুড়ি নয়, হীরের টুকরো। আর কোনো সমালোচনা পড়েই আমার চমক লাগেনি।

তখনই বুঝতে পারলাম যথার্থ কবিসত্তাই অন্য কবিসত্তাকে উদ্ঘাটিত করতে পারে, উদভাসিত করতে পারে। ’ পত্রের অন্যত্র ডক্টর প্রবোধচন্দ্র সেন লিখছেন, ‘এই কয়দিনে আপনার ‘রবীন্দ্রনাথ’ বইটি অনেকখানি পড়া হয়েছে। পড়ে আমি বিস্মিত, মুগ্ধ, অভিভূত। এটা অত্যুক্তি নয়। রবীন্দ্রসাহিত্যের এমন বিচার এর পূর্বে আমি পড়িনি।

সব বিচারই যেনো মস্তিষ্কপ্রসূত, সাহিত্যিক ন্যায়সূত্রের ছকে ফেলে পরিমাপ করার প্রকাশ অথবা নিছক উচ্ছ্বাস নয়। আপনার এই বিচার যেনো এক কবিসত্তা দিয়ে আর এক কবিসত্তাকে প্রকাশ করা। এ বিচার লজিকের বিচারও নয়, ভাবাবেগের উচ্ছ্বাস তো নয়ই। ’ ১৩৮১ সালে প্রকাশিত হয় সৈয়দ আলী আহসানের ‘রবীন্দ্রনাথ: কাব্যবিচারের ভূমিকা’ গ্রন্থটি। গ্রন্থটি সমগ্র রবীন্দ্রকাব্যপাঠের ভূমিকাস্বরূপ।

রবীন্দ্রনাথের ওপর এ পর্যন্ত যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই হয় রবীন্দ্রনাথের জীবনকালের আলোকে রবীন্দ্রকাব্য বুঝবার চেষ্টা অথবা রবীন্দ্রনাথের কবিতাকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের সাহায্যে পাঠকের সামনে তুলে ধরবার চেষ্টা; কিন্তু কোনো গ্রন্থেই রবীন্দ্রনাথের শব্দব্যবহারের মৌলিক তাৎপর্য প্রকাশ করবার চেষ্টা নেই। সৈয়দ আলী আহসানের উদ্দেশ্য ছিলো রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শব্দ ব্যবহারের বিচিত্র তাৎপর্য পরীক্ষা করা। এতোক্ষণের আলোচনায় এ কথা সংশয়াতীতরূপে প্রমাণিত হলো যে, সৈয়দ আলী আহসান যেমন একজন আত্মচারিত্রিক কবি তেমনি কাব্যসমালোচক হিসেবেও তিনি একজন প্রতাপী পুরুষ। রাবেয়া মঈন অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ল

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.