এক।
ঈদের ৫দিন আগে উমরাহ পালন করতে গিয়েছিলাম। অনেকের চিন্তা, সৌদিতেই থাকেন, উমরাহতে যাওয়া এমন আর কি!আমিও তাই বলি। হিসেবটা সময়ের।
বাংলাদেশ থেকে বিমানে আসতে লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা আর আমায় বাসে ঠায় বসে থাকতে হয়েছে ১৭ ঘন্টা শুধু যাবার সময় ! আসতে লেগেছে ১৩ ঘন্টা।
এর মাঝে ধর্মীয় আচারগুলো পালন করতে অনেকগুলো ঘণ্টা চলে গিয়েছিল।
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে ফিরেছি ঈদের দিন ভোর ৪টায়। এদেশে নাকি সকাল ৬টার আগে ঈদের জামাত শেষ।
আর ডাকাডাকিও করা হয় না 'জামাত তৈয়ার', 'জামাত তৈয়ার' বলে।
তাই ক্লান্ত শরীরটা নরম বিছানার দিকে টানলেও শুলাম না।
আগে ভেবেছিলাম রোযা হয়তো ২৯টি হবে এবং আমার ঈদ মক্কা থেকে আসার পথে কোথাও হয়ে যাবে।
ঈদ স্পেশাল রান্নার আয়োজন ছিল না। ভাবছিলাম এই সকালে কার বাসায় হানা দিতে যাবো !
নিকট আত্নীয় কেউ নেই। অগত্যা বন্ধুর বাসায় ছুটলাম।
ঈদের জামাত পড়ে ক্ষীর-পায়েস হজম করে একটু গা এলাতে এলাতে জুম্মার নামাজের সময় হয়ে গেল।
ঘুম দিলাম ;লম্বা ঘুম। জেগে উঠলাম প্রচণ্ড পেট ব্যথা আর বমি নিয়ে।
গোটা রাত হাসপাতালে।
সকালে ফিরে এলাম নিজ ঠিকানায়।
ফুড পয়জনিং কেন হলো ভাবছিলাম।
গোটা পরিবেশ নির্জন, সবাই চলে গেছে ছুটি কাটাতে।
দুই।
এক বন্ধু ফোন করলো। বললো, 'চলে আসো এখানে, পার্টি হচ্ছে। 'কিসের পার্টি?আরে আগে আসো না !
তার ওখানে গিয়ে দেখলাম ২৮/৩০ জনের জমায়েত ; খুউব হৈ চৈ হচ্ছে।
জানা গেল, এদেশে ‘থাইল্যান্ডি’ নামে একটি লটারি খেলা হয় অত্যন্ত গোপনে, সৌদি আইন অনুযায়ী এসব অবৈধ।
বলা হয় যে এই লটারির আয়োজন করা হয় থাইল্যান্ড থেকে। ড্র হয় সেখান থেকে। গোটা সৌদি জুড়ে এদের রয়েছে সুবিশাল নেটওয়ার্ক।
প্রবাসীদের এক বিরাট অংশ রাতারাতি ধনী হবার স্বপ্নে এই লটারি নিয়মিত খেলে থাকে বলে শোনা যায়।
ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য যার আদ্যক্ষর ‘ক’ দিয়ে শুরু ,মূলত এরাই এর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে প্রকাশ।
স্হানীয় মুদ্রায় ২। ৫। ১০। ২০।
৫০। ….যার যত খুশি টাকা বাজি ধরতে হয়। যে কোন তিনটি নাম্বার উপর থেকে নিচে।
ডান থেকে বামে লিখতে হয় যেমন ৮৭০ বা ৮০৭। প্রতি মাসে ১ এবং ১৫ তারিখে ড্র হয়।
এই লটারির মোহে পড়ে অনেক বাঙালি সর্বস্ব খুইয়েছে। নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
হঠাৎ করে নাকি একজনের ভাগ্য খুলে গেছে! সে অনেক টাকা পেয়ে গেছে।
তার আনন্দে দুম্বা জবেহ্ হয়েছে।
এখানে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশই শুধু বলাবলি করছিল, ইশ্ মাত্র একটা নাম্বার, উফঃ!
সামনে দিয়া গেল, কেউ বললো, 'তোর পীর বাবায় কি কয়!’আরে ধ্যাৎ ! শালায় ভাওতাবাজ!
আমি ক্রমান্বয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি! তাদের মুখের দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকি; এদের ৯০ ভাগই অশিক্ষিত, অদক্ষ শ্রমিক - যাদের মাসিক বেতন অস্বাভাবিকভাবে কম।
আজকে যিনি লটারি জিতেছেন তাকে খুউব সচ্ছল মনে হলো!
মনে একটি আশঙ্কার কথা উঁকি দিয়ে গেল ; হতাশ হয়ে পড়া এই নিরীহ লোকগুলোকে উজ্জীবিত করতে এটি আয়োজকদের কোনো ‘মার্কেটিং প্লান’ নয়তো!হবে হয়তো তাই।
অনেকের হাতে দেখলাম একজন নামকরা প্রকাশক, সম্পাদকের ম্যাগাজিন। ম্যাগাজিনটি 'একটি বিশেষ' ঘরানার বলেও পরিচিত।
এখানে এটির বিপুল জনপ্রিয়তার (একটি বিশেষ মহলে সমাদৃত) একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় সব বিজ্ঞাপন!
বাংলাদেশের যত ভণ্ড, স্বপ্নে প্রাপ্ত বটিকা বিক্রেতা, রুহানি-শক্তি, আধ্যাত্মিক সাধকের ১০০ ভাগ গ্যারান্টি, কবরেজ মশাইগণ ক্যান্সারসহ সকল চিকিৎসার গ্যারান্টি দিয়ে থাকেন!
এই পত্রিকার কয়েকটি বিজ্ঞাপনে দেখা গেলো সাধক বাবা তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার বলে লটারির নির্ধারিত সংখ্যাগুলো টেলিফোনে বলে দেন।
এসব আবার গ্যারান্টিও দেয়া হয়েছে!শেষ।
বুজরুকি, ভণ্ডামি প্রতিদিন আমাদের চোখের সামনে অহরহ ঘটছে।
বিপদগ্রস্ত লোকজন সন্তান লাভের আশায়, প্রেম-প্রণয়ে সাফল্য, কায়-কারবারে উন্নতি, বিদেশ গমন, যৌন-স্বাস্হ্য, ক্যান্সারসহ নানা জটিলতায় তাদের কাছে ছুটছে!
কত সহজে, প্রকাশ্যে এরা জনগণকে প্রতারিত করছে।
গোটা বিশ্ব যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে বশ করে শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে যাচ্ছে আমরা তখনও অন্ধবিশ্বাস নিয়ে ছুটে চলেছি ভণ্ডপীরের দরগায়,
ভণ্ড সাধক, যাদুটোনা, বাণমারা করে বশীকরণ করতে।
এসব দেখার জন্য কেউ কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না।
আপনার কী মনে হয়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।