আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মালঞ্চে'র সে রাতে মনে হয়েছিলো 'আহা জীবন এতো ছোটো ক্যানে?'


ব্যবসা বানিজ্য, চিকিৎসা অথবা ভ্রমন যে কারনেই হোক আমাদের অনেককে প্রায়শই কোলকাতা যেতে হয়। কোলকাতার যান্ত্রিকতায় যারা দুচারদিনেই হাপিয়ে ওঠেন তারা ইচ্ছে করলেই কাছাকাছি চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা মালঞ্চ টুরিষ্ট লজে কাটিয়ে আসতে পারেন কিছুটা সময়। ভারতের একটি ট্যুরিষ্ট পত্রিকার মাধ্যমে এর সন্ধান পেয়ে আমরা কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম মালঞ্চে। সড়কপথে কোলকাতা পৌছে দুদিন সেখানে থেকে মালঞ্চে যাবার সিদ্ধান্ত নেই। একদিন খুব ভোরে ধর্মতলার বাস ষ্ট্যান্ড থেকে এল-২০ নম্বর বাসে উঠে বসি।

বাসটি ঘন্টাখানেক শহুরে পথ পাড়ি দিয়ে পৌছে ব্যারাকপুর চিড়িয়া মোড় এ। এখানে নেমে একটি রিক্সা নিয়ে সোজা মালঞ্চে। মালঞ্চে পৌছেই মূগ্ধ হয়ে যাই এর প্রাকৃতিক শোভা দেখে। গংগা নদীর একদম তীর ঘেষে অসংখ্য মেহগিনি, দেবদারু আর ক্যাসুরিনা গাছের নীচে এর অবস্থান। পূর্বের কাঠের বাংলোগুলোর পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে সিরামিক ইটের তৈরী আধুনিক ডিজাইনের দোতলা বাংলো।

বাংলোর ম্যানেজার সাহেব আমাদের বাংলাদেশী পরিচয় পেয়ে যত্ন করে রুমে নিয়ে গেলেন। বিশাল রুম, দুদিকেই জানালা। নদী তীরের দেয়ালজোরা গ্রীলছাড়া জানালাটি বিশাল আকৃতির। রুমের মাঝে বড় আকৃতির দুটো এবং বাচ্চাদের একটি খাট। অনায়াসে ৪ জন থাকা যায় ভাড়া ৮০০ টাকা।

দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম ব্যারাকপুর শহর দেখতে। মফস্বল শহর, অনেকটা আমাদের বরিশালের মতো। সেখান থেকে রাজ্য পুলিশ সদও দপ্তরের মাঝ দিয়ে গেলাম মঙ্গল পান্ডে পার্কে। সাজানো গোছানো অনেক গাছের সারির ফাকে ফাকে বাধানো বেঞ্চ বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে বিকেলটা কাটিয়ে দিলাম। তবে মালঞ্চের সবচে আকর্ষনীয় দিক হলো এখানে রাত কাটানো।

রাত দশটা নাগাদ রুমের বাতি নিভিয়ে বাংলোর সামনে চেয়ার নিয়ে দুজনে বসলাম। ম্যানেজার খানিকন সংগ দিয়ে বিদায় নিলেন। আমরা বসে রইলাম। চাদনী রাত, সামনে কলকল নদী, নদীর মাঝে দু একটি মাছ ধরার নৌকা। ওপাড়ে দেখা যাচ্ছে নাম না জানা শহরের ঝলমলে আলো, মাঝে মাঝে নিশাচর পাখির ডাক- আমাদের আচ্ছন্ন করে ফেলেছিলো।

এসব কিছুকেই মনে হচ্ছিলো বাস্তবতা আর আমরা দুজনেই যেনো অবাস্তব। আমাদের মনে পুরুনো হাহাকারটা ঘিরে ধরলো- 'আহা জীবন এতো ছোটো ক্যানে?' রাতের শেষ ভাগ পর্যন্ত নির্বাক হয়ে বসেছিলাম সেখানে। পরদিন সকালে উঠে গেলাম গান্ধীঘাট। মহাত্তা গান্ধী নাকি এ ঘাটে গোছল করতেন, তাই এই নাম। শান বাধানো এই ঘাটে অনেক নারী পুরষকে গোছল করতে দেখলাম।

এখানে গোছল করলে পূন্যলাভ হয় এই আশাতেই দুর দুরান্ত থেকে লোকজন গোছল করতে আসেন। এর পাশেই রয়েছে একটি পার্ক। আমরা পার্কে মনিংওয়াকটা সেরে নিলাম। এবার বিদায়ের পালা। মন চাইছিলো না বরেকম একটি জায়গা ছেড়ে আসতে।

কিন্তু হাতে সময় কম। তাই দুপুর ১২ টা নাগাদ রওনা দিলাম কোলকাতার উদ্দেশ্যে। পেছনে ফেলে এলাম নদীপাড়ের নির্জনতা, নির্মল পরিবেশ আর মালঞ্চের কর্মীদের চমৎকার ব্যাবহার।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.