হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র
শুরুতেই ব্লগের বিএনপি সমর্থক ব্লগারদের ধন্যবাদ। মূলত দেশের সম্পদ ও স্বার্থ রক্ষায় এবং বিদেশী দালালদের পরিচয় ও চরিত্র উদঘাটনে তাদের প্রতিদিনের কঠোর পরিশ্রমী লড়াই আমাকে এই কাজে হাত দিতে উৎসাহিত করেছে । দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল এই কাজটায় হাত দেয়ার। আমার কাছে আওয়ামীলীগ আর বিএনপি একি গোয়ালের দুই গরু। এই দুই তথাকথিত গনতান্ত্রিক দলই বিদেশী শক্তির স্বার্থ রক্ষা আর দেশের সাধারণ জনগণের পশ্চাত দেশে গদামের পর গদাম দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুভাবে দীর্ঘদিন ধরে পালন করে আসছে।
এই দুই দলেরই শীর্ষ নেতা থেকে একেবারে নিচেরতলার সমর্থকগোষ্টি পরস্পরকে একপাক্ষিক ভাবে দেশ বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ করে জনগণের মাথায় কাঠাল ভাঙতে অত্যন্ত পারঙ্গম। এই ব্লগেও একি অবস্থা।
প্রিয় সাধারণ জনগণ, ব্লগার ভাই বোন, আসেন এদের মুখোশ খুলে দেই। এই মুখোশ খোলার একটা কাজ হিসাবেই এই দুই দলের গনতান্ত্রিক শাসনামলে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সাথে করা দেশবিরোধী চুক্তি, দেশীয় শিল্প বিরোধী স্বিদ্ধান্ত, বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা এবং কোম্পানির সার্থে দেশীয় সার্থ বিরোধী চুক্তি এইসবের একটা লিস্টি করতে বসে গেলাম। এই লিস্টি ধিরে ধিরে তৈরি হবে, অনেক সময় লাগবে।
এই মুহুর্তে লিস্টি তৈরিতে আমাদের টিমে আছেন এই ব্লগেরই কয়েকজন ব্লগার। কেউ কাজে নামতে চাইলে আওয়াজ দিয়েন।
আমাদের আজকের টার্গেট সর্বশেষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার। বর্তমান বিরোধী দল বিএনপি প্রেস বিজ্ঞপ্তী থেকে ব্লগ পর্যন্ত সর্বোত্র দেশীয় স্বার্থ রক্ষার সিপাহীর ভুমিকায় অভিনয়ে নেমে গেছে। দেশের পরাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব নিয়ে সদা সংকিত এই মহান রাজনৈতিক দল তাদের সর্বশেষ মেয়াদে কি কি দেশবিরোধী চুক্তি সম্পাদন করেছে এবং স্বিদ্ধান্ত নিয়েছে তার একটা অসম্পূর্ণ লিস্টি আমরা আজ দেখবো।
(উল্লেখ্যঃ বিগত সময়ে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার সর্বমোট ১৩টি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য চুক্তি সম্পাদন করেছে যার সবগুলোর আসল রূপ উদঘাটন করা সম্ভব না বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৫ এর ‘ক’ ধারার কারনে, এই ধারা অনুযায়ী জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক চুক্তি বিষয়ক সিদ্ধান্ত জনগণকে না জানিয়ে সংসদে গোপন অধিবেশনের মাধ্যমে নেয়া যায়)
১। পিআইএসসিএস (PICES): Personal Identification Secure Comparison and Evaluation System নামক এই চুক্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের আওতাভুক্ত Terrorist Interdiction Program (TIP) এর কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত। আপনারা জানেন যে এই কর্মসূচীর আওতায় মার্কিন সরকার নিজেদের নিরাপত্তার নামে তাদের দেশের সাধারণ জনগণ এবং সন্দেহভাজন অভিবাসীদের ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। আর পিআইএসসিএস চুক্তির মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের জনগণের উপর এই ক্ষমতা খাটানোর ক্ষমতা লাভ করেছে। ২০০৪ সালের ১৮ মে এই চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকায় আসেন মার্কিন সরকারের তৎকালিন দক্ষিন এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ক্রিস্টিনা রোকা।
একটি সমঝোতা সাক্ষরের মাধ্যমে তখন এই চুক্তির প্রথম ধাপ সম্পন্ন করা হয়। এ চুক্তি অনুযায়ী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী যেকোনো তৎপড়তাকে সন্ত্রাসী তৎপরতা আখ্যা দিয়ে মার্কিন সরকার তার বিচার করতে পারবে। এমনকি আমাদের সরকারের সহযোগিতায় যেকোন সন্দেহভাজন বাংলাদেশী নাগরিকের গতিবিধি অনুসরণ করার জন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত প্রযুতি ব্যাবহার করবে। তারা বিনা বাধায় বাংলাদেশের যেকোন নাগরিকের টেলিফোনের আড়ি পাততে পারবে, গোপনে ছবি তুলতে কিংবা কন্ঠস্বর রেকর্ড করতে পারবে। সেই সাথে বিমান, নৌ ও স্থল বন্দরে যাতায়াতকারী যেকোন যাত্রীকে তল্লাশি করতে পারবে।
চুক্তি অনুযায়ী ২০০৫ সালেই তৎকালিন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে মার্কিন গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়ে যায়।
২। বিশ্বব্যাংকের দায়মুক্তি বিলঃ ৩১ অক্টোবর ২০০৪ সালে তৎকালিন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ‘আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা অধ্যাদেশ-২০০৪’ নামে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করেন। এই বিল অনুযায়ী, “বিশ্বব্যাংক এদেশে সব ধরণের আইনগত পদ্ধতি থেকে দায় মুক্ত থাকবে। এর বিরুদ্ধে কোনো সংস্থা, কর্তৃপক্ষ কিংবা ব্যক্তি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না এবং বিশ্বব্যাংকের কোনো সপত্তি জব্দ করতে পারবে না।
এমনকি এর সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যবে না”। অর্থাৎ বিশ্বব্যাংক আমাদের ওপর যতখুশি মাতবরি করবে, আমরা কিছুই বলতে পারবো না।
৩। টিফা (TIFA): Trade and Investment Framework Agreement চুক্তিটি একি সাথে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী একটি চুক্তি। এই চুক্তিও বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে সম্পাদিত হয়।
এই চুক্তির ফলে বানিজ্যিক সম্পর্কের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সল্পোন্নত দেশগুলোর সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। সেই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেসব বানিজ্যিক বিরোধ রয়েছে সেইসব বিরোধ বহুপাক্ষিকভাবে নিরসনের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ।
এ চুক্তির ফলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে মেধাসত্ত্ব আইনের আওতায় সফটওয়্যার লাইসেন্স এর জন্য বছরে ৫০ কোটি ডলার প্রদান করতে হবে এবং অ-শুল্ক বাধা দূর করার নামে শ্রমমান, পরিবেশ ইত্যাদি অজুহাতে বাংলাদেশে মার্কিন খবরদারী আরো বৃদ্ধি পাবে।
আজকের পর্ব এইখানেই শেষ। এমনিতেই বড় পোস্ট দেয়া নিয়ে আমার বদনাম আছে।
জনস্বার্থে ছোট পোস্ট দিলাম। আগামী পর্বে আওয়ামী-বিএনপি যৌথ প্রযোজনার হানা, সোফা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চুক্তি সংক্রান্ত তথ্য থাকবে। গত আওয়ামী আমলে তৎপরতা শুরু হওয়া সোফা চুক্তি উপরোক্ত যেকোন চুক্তির চাইতে অনেক বেশী দেশীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি যার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সাবেক বিএনপি এবং বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারও দেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখেছে। এই পর্বে শুধু বিএনপির আমল নিয়ে বলা হয়েছে দেখে লীগ সমর্থকরা বেশি খুশি হইয়েন না, আপনাদের বিষয়েও বিস্তারিত আসবে। আর বিএনপি সমর্থকরা দেশের স্বার্থ আর সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাইলে দলত্যাগ কইরা আইসেন, নাইলে বুঝুম ফাক বুলি ছাড়তাছেন।
বিশেষ ধন্যবাদঃ হাসান তারিক চৌধুরী সোহেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।