আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাকিস্তানি দালাল,ভারতীয় দালাল



[সচরাচর এই ধরণের বিতর্কে জড়াই না,কিন্তু আজকে না লিখে পারলাম না] পাকিস্তান আর ভারত ২০-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। বাংলাদেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে,কাপ এশিয়াতে থাকবে বলে। বেশ কথা। খেলায় নিজের দেশ না থাকলে কাউকে না কাউকে সমর্থন করে খেলা দেখাই লাগে,সেখানে নিজের সমর্থনের দলটা জিতে গেলে আনন্দ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই দুই দলের ক্ষেত্রে আনন্দের বহিঃপ্রকাশটা যেন একটু অস্বাভাবিক।

ব্লগের ২-১ জন লেখকের লেখার শিরোনাম দেখা যাক। "কংগ্রাচুলেশনস পাকিস্তান"; "এশিয়ার পতাকা এখন ভারতের হাতে"; "আই লাভ ইউ ইন্ডিয়া"; ইত্যাদি। সাথে আছে লাইভ আপডেট,১জনকে দেখা গেলো ৮-১০টা পোস্ট দিয়ে ফেলতে। অন্য দেশ নিয়ে এভাবে লাফানো ঠিক কিনা এ বিষয়ে উপদেশ দিতে গিয়ে বিনা পয়সায় কিছু গালি শোনা লাগলো,রেসিস্ট বললো কেউ,কেউ বললো খেলাই বুঝিনা আমরা,কেউ বললো উগ্র জাতীয়তাবাদী। আধুনিক বিশ্বে অতীত ভুলে উদার হবার উপদেশ শোনা এই প্রথম না,কাজেই গায়ে খুব বেশি জ্বালা ধরেনা এখন।

তবে যারা আমাদের এতটা উদার হবার পরামর্শ দিচ্ছেন,তাদের জন্য কয়েকটা কথা। যাদের খেলা,সংস্কৃতি,আচার নিয়ে আমরা এত উদার,আমাদের প্রতি তাদের অতীত বা বর্তমান আচরণ ঠিক কতটা উদার? পাকিস্তানিদের অতীত ভূমিকা নিয়ে বলার কিছু নেই,অনেক বলেও পাকপ্রেমীদের প্রেম ঘুচানো যায়নি,নতুন করে বললে সেটা চলে যাবে এমন আশা করা অন্যায়। বর্তমান ভূমিকাটাই বলি,যে পাকিস্তান মাঝে মাঝে সুযোগ পেলেই আমাদের ভাই দাবী করে,এই ভাইদের ঘাড় থেকে বিহারী শরণার্থীদের বোঝা তারা এখনো নিজেদের ঘাড়ে নেয়নি,শোধ করেনি আমাদের যুদ্ধকালীন ক্ষতিপূরণের হাজার হাজার কোটি টাকাও,আনুষ্ঠানিক ক্ষমাও চায়নি তাদের অতীত কার্যকলাপের জন্য। খেলার ব্যাপারে আসি,এই সেদিনও নিজের দেশের মাটিতে বাংলাদেশকে টেস্ট ম্যাচে হারাতে রশীদ লতিফ যে জোচ্চুরি করেছিল সেটা কারো ভুলে যাবার কথা না। খেলা খেলাই,এই কথা আর যেই হোক,পাকিস্তান বা ভারত স্বীকার করেনা,বাংলাদেশ তাদের কাছে ছোট দেশ,তাদের কাছে হারার জ্বালা সইতে রাজি নয়।

ভারতের কথায় আসা যাক এবার। খেলা নিয়েই থাকি আজকে। বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ সফরের ব্যাপারে বিসিসিআইয়ের চরম নাক উঁচু মনোভাবের কথা কি ভারতপ্রেমীরা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? নাকি এক গালে চড় খেয়ে আরেক গাল পেতে দেয়াটাই নীতি? ভারত কিন্তু সেই নীতি মানেনা,প্রমাণ চাই কারো? মন্দিরা বেদী আর ইএসপিএনের ভাড়াটে কমেন্টেটরদের বিষোদ্গারের কথাও কি কারো মনে নেই নাকি? খেলা তো খেলাই,ভারত তো বাংলাদেশের কাছে ১টা খেলাই হারলো,কিন্তু তারপর ১টা আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের কৃতিত্বকে খাটো করার যে প্রাণপণ ভারতীয় প্রয়াস,সেটা দেখার পরও শুধু এশিয়ান দল বলে উদারতা দেখিয়ে ভারতকে সমর্থন দেয়ার উদারতা আমার নেই বলেই আমি গর্বিত। বাকি বিশ্বকাপটাতেও ভারতীয়দের ঐ জ্বালা মেটেনি,বাংলাদেশের প্রতিটা খেলাতে এরা বাংলাদেশকে হেয় করার চেষ্টা করেছে,এই সংকীর্ণমনাদের প্রতিটা কথার জন্য এই জীবনে মনে হয়না ঐ দলকে ক্ষমা করতে পারবো। যাই হোক,ভারত বা পাকিস্তানের দোষ গাওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য না,উদ্দেশ্যটা ছিলো,আমাদের ঠিক কতটা বাংলাদেশি হওয়া উচিত,বা সম্ভব,সেটা একটু বোঝার চেষ্টা করা।

আন্তর্জাতিকতা দোষের কিছু না,কিন্তু সেটা নিজের জাতিসত্বাকে খাটো করে নয়,অথচ আমাদের ভারত বা পাকপ্রেম সেটাই মাঝে মাঝে ভাবতে বাধ্য করে। একটু দেখা যাক এই দুই দেশের জাতীয়তাবাদ কোন পর্যায়ে। আমাদের মেয়েরা "আফ্রিদি ম্যারি মি" প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে থাকে,কোন পাকিস্তানি মেয়েকে দেখলাম না "মাশরাফি ম্যারি মি" সাইনবোর্ড নিয়ে ঘুরতে। আমাদের ঘরে পোস্টার থাকে যুবরাজ আর শচীনের,কোন ভারতীয়র ঘরে কি আশরাফুল বা তামিমের পোস্টার থাকে? হিন্দি সিরিয়াল না দেখলে অনেকের ঘুম হয়না,বাংলাদেশের নাটক কয়জন ভারতীয় দেখে? পাকিস্তানি সেমাই না হলে আমাদের ঈদ হয়না,বাংলাদেশের সেমাই কয়টা পাকিস্তানির ঘরে যায়? আমাদের স্যাটেলাইট চ্যানেলের ভারতে প্রবেশাধিকার নেই,ভারতের টিভি চ্যানেলের বন্যা এই দেশে। উদারনীতি কাদের সাথে দেখাবো? ১৯৪৭ এর পর থেকে ভারতীয়রা কোন বিদেশি পণ্য ব্যবহার করেনি,প্রশংসনীয় দেশপ্রেম।

ফলাফল,এখন ভারতীয়দের বাজার অন্য দেশ,কিন্তু ভারতের বাজার তাদের নিজেদেরই দখলে। অথচ পাক-ভারতের পণ্যে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব। উদারনীতির ফলাফল? ভারতীয় সংস্কৃতি যেখানে ইংরেজের সংস্কৃতিকেই দখল করে ফেলতে যাচ্ছে,আমাদের ঘরে ঘরে তখন হিন্দি সিনেমার রাজত্ব,শিশুর মুখে এখন ভারতীয় সিরিয়ালের বুলি। এই না হলে আর দেশপ্রেম আর বাংলাদেশি উদারতা! কথায় কথায় অনেকদূর চলে এসেছি,শেষ করা দরকার। একটা প্রশ্ন দিয়েই শেষ করি,ভারত-পাকিস্তানের অনেক কিছুই তো আমাদের ভালো লাগে,ভারতের নায়িকা ভালো লাগে,পাকিস্তানের সুদর্শন খেলোয়াড়দের ভালো লাগে,হিন্দি গান আমাদের পছন্দ,উর্দু গজলও পছন্দ,তো,ভারতীয় আর পাকিস্তানিদের আন্তরিক দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদটাও আমাদের পছন্দের তালিকায় একটু রাখা যায়না আর সেটাকে অনুসরণ করা যায়না? নাকি ব্যাধিই সংক্রামক,স্বাস্থ্য নয়?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.