জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়
বিক্ষোভ ঠেকাতে এবং রাজপথ থেকে ইখওয়ান কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে অভ্যুত্থানকারী সেনাবাহিনী নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বহু মানুষের। ইখওয়ানের দাবি মোতাবেক নিহতদের সংখ্যা ২ হাজারের উপরে। আর আহতের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।
এদিকে তাদেরকে উচ্ছেদ করার পর ১ মাসের জরুরী অবস্থা জারী করা সত্ত্বেও প্রতিবাদীরা জরুরী অবস্থা ভেঙ্গে রাজপথে নেমে এসেছে। সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তারা। অপরদিকে সেনাবাহিনী, সরকার এবং জনতার এই বিপরীতমুখী অবস্থানের দরুন সারা দেশে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যত্রতত্র মারা পড়ছে মানুষ। এমনকি মসজিদও এর বাইরে নয়।
মসজিদের ভেতরে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে প্রায় তিনশ লোককে। অন্যদিকে দেশে দেখা দিয়েছে গৃহযুদ্ধের আশংকা। সামরিক বাহিনীর একতরফা দমননীতির ফলে তাদের নিজেদের মধ্যেও ভাঙ্গনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার না করতে দেশ ছেড়ে অষ্ট্রিয়ায় চলে গেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগী ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আল বারাদি। তবে আল বারাদি সামরিক অভ্যুত্থানের অববহিত পরে এই অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
এদিকে, মিশরের সেনানিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে দফায় দফায় সহিংসতায় মানুষের প্রাণহানির পর করণীয় নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ।
এদিকে ব্রাদারহুডের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা সংলাপে না বসে তাদেরকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনায় সরকার এগোচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী হাজেম এল বেবলায়ির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা গেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দু’পক্ষের অনড় অবস্থান এবং ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা মিশরের জন্য চরম আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে।
ওদিকে আবার মুরসির গ্রেফতারকৃত সমর্থকদের ওপর পুলিশের কারাগারে বর্বরোচিত হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে। রাজধানী কায়রোর উপকণ্ঠে একটি কারাগারে রোববার সন্ধ্যায় এ হামলা হয়েছে বলে প্রেসটিভি জানিয়েছে।
মিশরের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা মেনা অবশ্য নিহতের সংখ্যা ৩৬ বলে উল্লেখ করেছে। এ খবরে দাবি করা হয়েছে, মুরসির সমর্থকরা 'জেল ভেঙে' পালানোর চেষ্টা করার সময় তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
মেনার খবরে বলা হয়েছে, অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা বাইরে থেকে কারাবন্দীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। তারা একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অপহরণ করেছে বলেও বার্তা সংস্থাটি দাবি করেছে।
এর আগে মিশরের পুলিশ জানায়, মুরসির সমর্থক ইখওয়ান কর্মীদের কায়রোর উত্তর অংশে অবস্থিত আবু জাবাল কারাগারে স্থানান্তরের সময় তারা 'দাঙ্গা সৃষ্টি করে' পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এ সময় পুলিশ তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। মিশরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইখওয়ানের বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তার 'করণীয়' করেছে মাত্র।
অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলীয় সিনাই উপত্যকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলায় ২৪ জন পুলিশ নিহত হয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশের দু’টি মিনিবাসে রকেট চালিত গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সোমবার সকালে রাফাহ শহরের কাছে এ হামলা হয়।
তবে হামলায় কারা জড়িত ছিল তা নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে ইখওয়ান কর্মীরাই এই কাজ করে থাকতে পারে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে মিশর এখন এক অগ্নিগর্ভ। একটার পর একটা সংঘর্ষ এবং হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিশরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু সবচাইতে উষ্কানীমূলক এবং বিপদজনক খেলাটি খেলছে সৌদি আরবের রাজকীয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে খবরে প্রকাশ সৌদি বাদশাহ সামরিক বাহিনীকে ১ শ কোটি ডলার ঘুষ প্রদান করে অভ্যুত্থান ঘটাতে প্ররোচিত করেছে। এত মানুষের প্রাণহানীর পরে ও সৌদি রাজপরিবার সেনাবাহিনীকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। সামরিক সরকারকে এই হত্যাকাণ্ডে চাপ প্রয়োগ না করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। সৌদি সরকার এমন সময় এই হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করলো যখন মিশর পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ব্রাসেলসএ চলতি সপ্তাহেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রোববার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের সাথে এক বৈঠকের পর সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স সৌদ আল ফয়সাল এ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন সৌদি রাজতন্ত্র ও প্রশাসন মিশরের ঘটনায় খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আড়ালে বসে তারাই মূলত কলকাঠি নাড়ছে। তাদের ভয় মিশরের পথ অনুসরণ করে না আবার তার দেশের মানুষ রাজতন্ত্রের ‘তখ্ত-তাউশের’ প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তাদের ভোগ বিলাসীতায় না আবার মানুষ বাঁধ সাধে। অথচ ইসলামের পত্তন যে মাটিতে হয়েছে, যারা আল্লাহর ঘর ক্বাবার রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আছেন তাদের কোনমতেই মিশরের জনগণের প্রতি এই আচরণ প্রদর্শন করা উচিত হয় নি। বরং উচিত ছিলো তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে উভয় পক্ষের বিবাদ মিটমাট করে দেওয়া।
মিশরে বিবদমান দু’টি পক্ষই অন্ততপক্ষে দাবিদার হোলেও মুসলমান। এই দুইটি অংশ পরস্পর পরস্পরের সাথে লড়াই করে মূলত নিজেদের শক্তিকে আরো নষ্ট করছে। লাভবান হচ্ছে পার্শ¦বর্তী দখলদার শক্তি ইসরাইল। রসুলের জন্মভূমিতে আজ যারা প্রতিষ্ঠিত, উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক ক্বাবা যেখানে উপস্থিত- সেই তারাই যখন জাতির ঐক্যের এমন ক্ষতি করতে পারে; তখন তাদেরকে মুসলমান মনে করতে মানুষের সন্দেহ আসতেই পারে। মনেই হতে পারে যে তাদের সাথে ইহুদিদের যোগসাজস রয়েছে।
কারণ মিশরের কোমর ভেঙ্গে দিতে পারলে ইসরাইল যথাযথই খুশি হবে। ফিলিস্তিনকে গিলে খাওয়াটা তাদের জন্য আরো নিরাপদ হয়ে উঠবে। এই কাজটাই তারা সহজ করে দিচ্ছে।
তাই মিশরের সার্বিক পরিস্থিতিতে বলা যায়- যারা রাজপথে, মাঠে ময়দানে লড়াই করছে- তাদের লড়াইটা মূলত সেনাবাহিনীর সাথে নয়। লড়াইটা সৌদি আরবের সাথে।
তাই সৌদি আরবের রাজতান্ত্রিক সরকার এত এত নগদ ডলার ব্যয় করছে- লাজ লজ্জা খুইয়ে মিশরের খুনি সামরিক সরকারকে হত্যাকাণ্ডে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। আর অন্যদিকে ইখওয়ানও কোন ইসলাম শিখে এভাবে নিরস্ত্র অবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীর সম্মুখীন হচ্ছে? এটাকে কি ঈমান বলে, নাকি এটা বোকামী? ইসলাম এই অর্থেই আত্মহত্যাকে নিষেধ করেছে। রসুলাল্লাহ মক্কায় থাকতে বিরোধীদের অত্যাচারেও প্রতিবাদ করেন নি এজন্য যে তিনি তখনও শক্তি অর্জন করতে পারেন নি ততদিন তিনি সংঘর্ষ এড়িয়ে চলেছেন। তিনি একটি মদিনা জীবনের জন্য অপেক্ষা করেছেন। যখন তাঁর হাতে মদিনা এসেছে তখন তিনি আর কাউকে পরোয়া করেন নি।
মক্কায় থাকা অবস্থায় লড়াই করতে যাওয়াটাও সেই আত্মহত্যার সামিল ছিল। কামানের সামনে গুলতি মারা, ঢিল মারার মত বোকামী অন্তত ইসলাম অনুমোদন দেয় না, আল্লাহ এত অবিবেচক নন। কাজেই শক্তি যদি না থাকে তবে সবর করুন, শক্তি অর্জন করুন। খামোখা সাধারণ মানুষকে এভাবে কাতারে কাতারে মৃত্যু কূপে নিক্ষেপ করার কোন মানে নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।