আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: জোছনা প্রাচীর

আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি। বিরাট আয়োজন। একটাই সমস্যা মুনা কিছুতেই ড্রেস বাছাই করতে পারছেনা। জোছনার আলোতে ঠিক কোন রংয়ের ড্রেসটা মানাবে সে ব্যাপারে সে কনফিউজড। মায়ের উপর রাগ হচ্ছে,এত বড় একটা আয়োজনে সে এখনও বসে বসে হিন্দী সিরিয়াল দেখছে,অন্যদিকে বাবা অফিস থেকে এখনও ফিরেইনি।

বেলতলা মাঠে আজ জোছনা দেখার প্ল্যান তাদের। বিকালের দিকে বেশ ভীড় থাকলেও রাতের দিকে একদম ফাঁকা হয়ে যায়। আকাশভরা জোছনা,মুনার পাশে তার বাবা মা। ভাবতেই চমকে উঠছে সে। পুরো পরিকল্পনাটা বাবা শেখর ফরিদের।

মায়ের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়লো,সিরিয়াল বোধহয় শেষ হয়েছে “তোমার আব্বু ফোন করেছিলো,সে আসছে”। মায়ের কথা শুনেই লাফিয়ে উঠলো মুনা। ড্রেসের সমাধানও করে দিলো মুনার মা মৌরি ফরিদ। মায়ের স্মার্টনেসে ভীষন হিংসা হচ্ছে তার। আম্মুটা এত জানে কেন? কলিংবেলের শব্দ হল,বাবা আসার আওয়াজ পেয়েই দৌড় দিলো মুনা।

শেখর ঘরে ঢুকেই মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে স্ত্রীকে বলল “ শোন আমরা ডিনার সেরেই বের হব,এক ফ্লাক্স কফি,দুটো মগ,বিছানার চাদর,সিডি প্লেয়ার আর আমার আম্মুর জন্য দূরবীনটা নিতে হবে” মৌরির গাল লাল হয়ে গেছে,খুশীর লাল “এই বয়সে এত ঢং পাও কই? শেখর কোল থেকে মেয়েকে নামাতে নামাতে বলল “ঢং! কই?তোমার হাত ধরে জোছনায় ভিজবো আর আমার আম্মুটা দূরবীন চোখে লাগিয়ে হলুদ একটা আকাশ দেখবে,তুমি বুঝতে পারছো? -কি যে তুমি করনা। মুখের আহ্লাদ লুকাতে পারেনি মৌরি, সারাদিন খেটেখুটি সব ঠিকঠাক করে রেখেছে। কেবল নিজেরটানা স্বামীরটাও ঠিক করে নিয়েছে,জোছনার আলোর সাথে ঠিক কোন কালারটা যাবে এই ভেবেইতো সারাদিন গেল। হালকা নীল শাড়ীর সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ,খোপায় বেলী ফুল নাকি খোলা চুল এটা নিয়ে বেশ দ্বন্ধেই পড়েছিলো। শেষমেষ শেখরকে ফোন দিতেই হলো -আচ্ছা খোপায় বেলী ফুল নাকি খোলা চুল -খোলা চুল -কেন? -চাঁদের জন্য,আমার জন্য -হিহি আচ্ছা খোলাচুলে ভোট দিয়ে খোলাচুলকে চাঁদের আলোয় জিতিয়ে দিলো।

শেখরের জন্য অবশ্য ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী ঠিক করে রাখা হয়েছে। ডিনার শেষে রওনা দিলো পুরো পরিবার। মাঠটা একদম কাছেই। গাড়ীর প্রয়োজন নেই,রাস্তা প্রায় শূণ্য রাত বাজে এগারোটা। তিনজন হাঁটছে,পিছনে সরঞ্জাম নিয়ে কুজো হয়ে হাঁটছে দারোয়ান রহিম মিয়া।

**** মুরাদ উন্মুখ হয়ে বসে আছে চুলার পাশে। আজকে একদম স্পেশাল রাত। কতদিন পর চুলোয় ভালো খাবার চড়েছে। ডাল চড়চড়ির ঘ্রাণে খিদাটাতো দ্বিগুন হয়ে গেল। কোন বেলা আধপ্লেট ভাত,কোন বেলা ভেজা মাড় কিংবা কোন বেলা কোন কিছুহীন কেটে যাবার আজকের ডাল চড়চড়ি,মরিচ পোড়া সাথে গরম ভাততো রীতিমত উৎসব।

অস্থায়ী ইট দিয়ে বানানো চুলা যেন মুরাদের প্রতীক্ষা বুঝতেই পারছে না। মুরাদের বাবা ইটভাঙ্গার কাজ নিয়ে এখানে এসেছে পনের দিন হল,আজ বেতন পেয়েছ। বেলতলা মাঠের এক কোনায় ছেড়া পলিথিনের তাবুতে আজ কে কুপি বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন পড়েনি। আসমান ভাঙ্গা জোছনার কাছে কুপিবাতি নিতান্তই ঠুনকো। তাই কুপিবাতির আজ বিশ্রাম।

মুরাদের তর সইছে না। এরকম দিনে তর সয় না। ঘুম চোখ খেয়ে ফেলছে। বেশ চালাক সে,চালাকি করে চুলার পাশ থেকে উঠে গেল। মাঠটা চক্কর দিলে ঘুমটা কাটবে।

কি সুন্দর আলো,পুরো মাঠ ঝকঝকে। না মাঠে মনযোগ দিতে পারছে না। চুলার পাশে বসে ঘ্রাণ নেয়া তারচেয়ে ভালো কাজ। মুরাদ আবার চুলার পাশে এসেই বসলো। কতক্ষন আর কতক্ষন করতে করতে ঘুমে ঢলে পড়লো।

“বাপ আমার মুরাদ,বাপ আমার উঠ,খাবি উঠ”। ধড়ফড় করে উঠে যায় মুরাদ। কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। সামনে সাজানো ভাতের প্লেট দেখে হামলে পড়ে। ফাঁকা মাঠে আলোর বন্যা নেমেছে।

ঠিক মাঠের মাঝখানে বসে কফি খাচ্ছে শেখর আর মৌরি। মুনা মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। সিডিঁ প্লেয়ারে একে একে বেজে চলেছে জোছনার গান। আকাশ বোধহয় আসক্ত,বোধহয় সেও তাকিয়ে আছে বেলতলা মাঠের দিকে। মাঠের অন্য এক কোণে গোল হয়ে বসে ভাত খাচ্ছে মুরাদ এবং তার মা-বাবা।

চোখ মুখে পরম তৃপ্তি। পৃথিবীর কোন তৃপ্তি যেন ছুঁতে পারেনা। তারা আকাশ দেখছে না,এ আকাশ প্রতিদিনকার আকাশের মত,বাড়তি কিছু ভাতের প্লেটে, জোছনায় না। বরং আজ আকাশেরই বিশেষ দিন,ভাতের প্লেটে ভিন্নতা দেখছে সে প্রাণ খুলে। কেউ খেয়াল করছে না জোছনা এঁকে দিয়েছে অদ্ভুত প্রাচীর!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.