আমি অবাক চোখে বিশ্ব দেখি, দৃশ্য সাজাই চোখের তারায়......
আম্মা মার্কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় বারবার সতর্ক করে দিতেন, `কোনো জিনিষ নিয়ে গো ধরা যাবে না। যেটা কিনে দেবো, সেটা নিয়েই খুশি থাকবা। ঠিক আছে?'
মোটেই ঠিক নাই। আমার বন্ধুদের মতো আমিও নিজের ইচ্ছামতো জামা কাপড় কিনতে চাইতাম। কিন্তু আম্মা যেসব কিনে দিতেন সেগুলা আমার পছন্দ ছিল না।
কিন্তু এই কথা বলা যাবে না। তাই মুখ শক্ত করে বহু কষ্টে বলতাম, `ঠিক আছে। '
বাংলাদেশের হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের মতো ঈদ উপলক্ষে আমার জন্যও বরাদ্দ করা হতো এক জোড়া বাটার স্যান্ডেল। যেই স্যান্ডেল দেখা মাত্রই আমার বমিভাব উদ্রেগ হতো। কিন্তু আম্মার ভয়ে কিছুই বলেত পারতাম না।
একবার একটা জুতা খুব পছন্দ হইল। কান্না কান্না কন্ঠে আম্মাকে বললাম। তিনি আমার কান্নায় কান দিলেন। চোখ লাল করে বললেন, `মার্কেটে ঠোকার সময় কী বলেছিলাম মনে নাই। '
আমি উত্তর দেই না।
পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকি। আম্মা বলেন, `চলো। '
আমার পা এগোয় না। মার্কেটে ভীষণ ভীড়। এরমধ্যেই আম্মা ঠাশ্ করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন গালে।
আমি চুপচাপ তার পিছু হাঁটা ধরলাম। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সামলানোর চেষ্টা করছি তবু হেচকি উঠছেই। আম্মা বারবার ধমক দিচ্ছেন, `থামো। '
আমি থামতে পারিনা।
মার্কেট সেরে বাসায় যাই। বিকেল গড়িয়ে রাত হয়। আমার কান্না থামেনা। আব্বা বাসায় এসে দেখেন আমি কাঁদছি। কারন জিজ্ঞেস করলেন।
আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আব্বাকে দেখেই আমার কান্না আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আম্মা ঘটনা বললেন। আব্বা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, `এখন গিয়ে দোকান চিনতে পারবে?'
আমি অবাক চোখে আব্বার দিকে তাকাই।
আব্বা আবার জিজ্ঞেস করেন, `যে দোকানের জুতা পছন্দ হয়েছে, সেই দোকানটা মনে আছে?'
আমি বহু কষ্টে কান্না থামিয়ে বলি, `আছে।
'
ঘন্টাখানেক পর আমি বাসায় ঢুকছি। আমার মুখভর্তি হাসি। চোখে আনন্দের ঝলক। একহাতে পছন্দের সেই জুতা। অন্য হাতে আব্বার হাত ধরে আছি।
জুতার খালি প্যাকেট আব্বার হাতে। আমি প্যাকেট ছাড়া জুতা নিয়েই বাসায় গেলাম। রাতে ঘুমালাম জুতা জড়িয়ে ধরে।
পরদিন নামায পড়তে গিয়ে আমার সেই জুতাগুলো চুরি হয়ে গেল। তারপর আমার সে কী কান্না!.....
কাল মার্কেটে গিয়ে সেই দিনগুলো মনে পড়ে গেল।
পছন্দের পোষাক না কিনে দেওয়ায় একটা পিচ্চি মার্কেটের মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পিচ্চির মা বেশ রাগী রাগী কণ্ঠে শাষাচ্ছেন পিচ্চিটাকে।
আমি শৈশবে হারিয়ে গেলাম। এখনও আমার আম্মা আমার জন্য ঈদের জামা কাপড় জুতো কিনে আনেন। নিজের ইচ্ছেমতোই কিনে আনেন।
আমি সঙ্গে যাই না। আম্মা যা আনেন এখন আমার তাই পছন্দ হয়। নিজেও কিনি, কিন্তু ঈদের দিন কেবল আম্মার দেয়া কপড়ই পড়ি।
কাল কী মনে হলো কী জানে। নিজের জন্য কিছুই কিনলাম না।
সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিনবো না। আজ রাতে আম্মার সঙ্গে মার্কেটে যাবো। আম্মা যা কিনে দেবেন তাই পড়ে ঈদ কাটাবো। আমি আবার শৈশবে ফিরে যেতে চাই। আজকে কী আম্মা মার্কেটে ঠোকার আগে সেই সাবধানী বাণী শোনাবেন আমাকে? `কোনো জিনিষ নিয়ে গো ধরা যাবে না।
যেটা কিনে দেবো, সেটা নিয়েই খুশি থাকবা। ঠিক আছে?'
আমি এখন আর অনিচ্ছা না, নিজের ইচ্ছাতেই বলতে চাই, `ঠিক আছে। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।