পঙ্খিরাজে চাদেঁর দেশে
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক লেখক আবদুল মান্নান সৈয়দকে বিদায় জানিয়েছে স্বজন, শুভানুধ্যায়ী-সাহিত্য পরিবারের বন্ধুরা। সোমবার বিকালে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বিকাল তিনটার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
বাংলা একাডেমীতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর পর আবদুল মান্নান সৈয়দের মৃতদেহ নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। এখানে ৩য় ও শেষ নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকালে গ্রিন রোড মসজিদে প্রথম জানাযা শেষে আবদুল মান্নান সৈয়দের মরদেহ নেয়া হয় বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে। সেখানে নজরুল মঞ্চে রাখা হয় লাশ। এ সময় কবি-সাহিত্যিকসহ সর্বস্তরের মানুষ বাংলা সাহিত্যের এই দিকপালকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। বাংলা একাডেমী, নজরুল ইন্সটিটিউট এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও এ সময় শ্রদ্ধা জানানো হয় এই শক্তিমান লেখককে। বেলা পৌনে ১২টায় এখানে মরহুমের ২য় জানাযা হয়।
আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পর্কে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, তিনি প্রচন্ড তোলপাড় করার শক্তি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভুত হয়েছিলেন। কবিতায় তিনি এনেছেন পরাবাস্তববাদী অনন্য বৈভব। তার উদ্ভাবনী শক্তি ও ব্যঞ্জনা সৃষ্টি তার ভাষাকে করে তুলেছে ব্যতিক্রমী। দুই বাংলাতেই তার মতো সাহিত্য সমালোচক খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশ্ব সাহিত্য সম্পর্কে ছিল তার অগাধ ধারণা।
সৈয়দ শামসুল হক বলেন, এখনকার সময়ে তার মতো বড় মাপের লেখক আমি দেখি না। কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় আশ্চর্য কথা সৃষ্টি করেছেন তিনি। বর্তমানে সাহিত্যে অবনমন ঘটছে। এ থেকে রক্ষা মান্নান সৈয়দের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল।
মৃত্যুকালে আবদুল মান্নান সৈয়দের বয়স হয়েছিল ৬৭।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সায়রা সৈয়দ এবং একমাত্র মেয়ে জিনান শম্পাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
১৯৪৩ সালের ৩ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগণায় জন্মগ্রহণ করেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। ১৯৫৮ সালে ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা ও ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্মান ও ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনে তিনি জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপনা এবং নজরুল ইন্সটিটিউটে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহিত্য ভুবনে পরাবাস্তব ধারার কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দের আবির্ভাব ঘটে। শুধু কবিতার লেখাতেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই লেখক। কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী কাজেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি। সব্যসাচী এই লেখকের অন্যতম কৃতিত্ব হলো কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা।
বাংলা একাডেমী থেকে নজরুল বিষয়ক ১১ খন্ডের গবেষণাগ্রন্থ সম্পাদনাও করেছেন তিনি।
সাহিত্য সাধনার দীর্ঘ জীবনে আবদুল মান্নান সৈয়দ অনেকগুলো পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, নজরুল পদক, কবি তালিম হোসেন পুরস্কার, লেখিকা সংঘ পুরস্কার ইত্যাদি। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ, জ্যোৎস্না রৌদ্রের চিকিৎসা, সংবেদন ও জলতরঙ্গ, নির্বাচিত কবিতা, পরাবাস্তব কবিতা, মাছ সিরিজ ও আমার সনেট।
আবদুল মান্নান সৈয়দের উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-শুদ্ধতম কবিতা, জীবনানন্দ দাশের কবিতা, নির্বাচিত প্রবন্ধ, নজরুল ইসলাম, কবি ও কবিতা, করতলে মহাদেশ, দশ দিগন্তে দ্রষ্টা, বেগম রোকেয়া, আমার বিশ্বাস, ছন্দ, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, সৈয়দ মুর্তজা আলী, ফররুখ আহম্মদ ইত্যাদি।
ছোট গল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-সত্যের মতো বদমাশ, চলো যাই পরোক্ষে, মৃত্যুর অধিক লাল ক্ষুধা, নেকড়ে হায়েনা আর তিন পরী ইত্যাদি।
তার রচিত কয়েকটি উপন্যাস হলো- পরিপ্রেক্ষিতের দাসদাসী, কলকাতা, পোড়ামাটির কাজ, অ-তে অজগর, হে সংসার হে লতা, ক্ষুধা প্রেম আগুন ইত্যাদি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।