গ্রামবাংলার গল্প বিচিত্রা
********
গল্প ২* ভুতের ভয় ।
আষাঢ় মাস , বর্ষায় পানি চারিদিকে থৈ থৈ । সবে সন্ধ্যা আকাশে তারকার মিটিমিটি হাসি । সৈয়দ পুর গ্রামের একটি উঠানে মজুম আলী তার ছেলেকে
তাগদা দেয় । বাপ লাইট টা জ্বালা আইজ আউল্লারা দিতে অইব ।
বাজান লাইটের
তেল নাই , দূর বোকা সেলবরসের বাজার থাইকা আইজকা আনলাম দেখ তোর
মায়ের টাই । হু আন তাছি
অনেক চেষ্টায় পাম্প লাইট ধরায় বাপ পুত । কয়েকটা ছেলে মেয়ে আলো ছায়ায়
দুষ্টুমি করে ওদেরকে ঘিরে । ছোট গনি বাবার গাঁ ছুয় বাজান আমিও যাব । না বাপ
আরেক দিন , মোহন ভয় দেখায় আমরা যেইহানে যামু হেইহানে থাহে ইয়া বড়
রাক্ষস ।
কথা শুনে গনির আবদার মাটি হয়ে যায় ।
বৈঠা লয়ে হাল ধরে পড়শি মবুল । গ্রাম থেকে ধিরে ধিরে নাও এগিয়ে যায় পশ্চিমে
পাশেই খালিজানা নদী ,তীরে কাশবন আর সারি সারি পাট ক্ষেত । ক্ষনে ক্ষনে নিশাচর পাখিরা ডেকে উটে । মকবুল হটাৎ চি ৎ কার করে ভাইজান সামনের জলা ডা য় পানি দাব্রাইতাছে মনে অয় বড় মাছ ।
টিক আছে নায়ের বাতা এই দিকে ফিরা
নিঝুম রাত , কুঁচ টা সর্বশক্তিতে পানির মধ্য ছুড়ে শিকারি ,একটা বিশাল রুই মাছ উটে আসে নির্জলা পানি ছিটিয়ে । মোহন খুশিতে লাফায় । ছোট বড় বেশ কয়েক টা মাছ ধরা পড়ে নায়ের কূলে শব্দ হয় চড়চড় । এক সময় ওরা জলা বিল নদী পেরিয়ে বহুদুরে চলে আসে । আকাশের দিকে মুখ তুলে বাজখাই গলায় মকবুল
ডাকে ভাইজান সারা আসমান জুড়ে কালা সাজ ঝড় আইব ।
হা তাই ত ফিরতি পথ ধরতে অইব নাও ঘোড়া । মকবুল প্রান পনে বৈটা চালায় অদুরে জলারভিতর থেকে
পেঁচার কর্কশ শব্দ ভেসে আসে । হটাৎ ঘন আধারে ছেয়ে যায় পৃথিবী শুরু হয় ঝড়।
ডেউয়ের ধাক্কায় বারবার দুলে নাও ,ঝমঝম নামে বৃষ্টি । খেকিয়ে উটে মোহন বাজান এখন উপায় ।
প্রচণ্ড বাতাসে দপ করে নিভে যায় বাতি । এক জায়গায় নাও
ভিড়িয়ে অরা ছাতা মাতায় বসে থাকে টায় । বহুক্ষন তাণ্ডব চলে একসময় ধিরেধিরে সব টাণ্ডা হয়ে আসে । জীবনে এত আধার দেখেনি ওরা । চেষ্টা করে মজুম
আলী বাতিটা জালাতে কিন্তু কিছুতেই জলছেনা এদিকে ম্যাচের কাঁটিও শেষ ।
আবার ও ঝোপের ভিতর থেকে বিশ্রী ঘর্ঘর শব্দ কানে আসে ,ভয়ে অজানা আশংকায় শিহরিত হয় তিন জনেই । মজুম আলী তাঁরা দেয় মকবুল আল্লার নাম লইয়া এবার রয়ানা দেই কেমুন ,কি কন ভাইজান আন্ধাইরের মধ্য ত কিছুই দেহা যায়না । বাজান এই দেহ একটা লাইট , হু
। আলোটা ধিরেধিরে অদের দিকে এগিয়ে আসে। মকবুল চেচায় ভাইজান ভয় নাই বাত্তির ফসরে টিক মত এবার পথ দেহুম ।
বৈটা সামনে চলে। জলে শব্দ উটে ঝপাৎ ঝপাৎ সকলে নিরব চলার যেন শেষ নাই । নাও থেকে একটা মাছ হটাৎ লাফিয়ে পড়ে পানিতে শব্দ হয় ঝুপ , বাজান বাজান বড় মাছটা ত ছইলা গেল
দূর ছাই রাখ তর মাছ দেহছ না কেমন বিপদ আল্লাহুর নাম ল । মকবুল নড়েচড়ে বসে কি অলক্ষন কার মুখ দেইখা যে আইলাম বুঝবার পারিনা । এবার সামনের
লাইট টা দপ করে নিভে যায় ।
এবার আবছা আধারে একটা নিকষ কাল মুখ পানির উপরে দাঁড়িয়ে ভেংচি কাটে । মকবুলের হাত থেকে বৈটা পড়ে যায়
মোহন চিৎকার দিয়ে উটে বাজান ভুত/ বুকটা শুকিয়ে কাক হয়ে যায় মজুম আলীর
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে নরম শিশিরের ছোঁয়ায় ওদের জ্ঞান ফিরে ।
[ সেস্থান থেকে ওদের বাড়ী ফিরে ভয় কাটাতে সময় লেগেছিল বহু দিন ]
নাসুদ রানা , রচনা ২/১০/২০১২ইং ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।