আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঁহাতি বিড়ম্বনা !!!

বুদ্ধিমত্তা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। আপনি তখনই বুদ্ধিমান যখন আপনার পাশের লোক বোকা !!
আমার হাতের লেখা ভালোনা। শুধু ভালোনা বললে কম বলা হবে খুব বেশীই খারাপ। এই হাতের লেখা নিয়ে স্কুলের টিচারদের কাছেও অনেক বকুনি খেয়েছি। ক্লাসের বন্ধুরাও আমার এই হাতের লেখা নিয়ে দুই একটি মজা করছে ছাড়তো না।

বড় হয়ে অবশ্য এটার একটা প্রত্যুত্তর ঠিক করেছিলাম। আমার খারাপ হাতের লেখা নিয়ে কেউ কিছু বললেই বলতাম, ইশ লেখাটা যদি আরেকটু খারাপ হতো তাহলে আর পড়াশুনাই করতাম না। পরীক্ষার খাতায় যাচ্ছেতাই লিখে দিতাম টিচার আর পড়তে না পেরে ভাবতো হয়তো ঠিকই লিখেছে!! আমার এই খারাপ হাতের লেখার জন্য আমি যতটা দায়ী তার সাথে আরেকটা কারণ হচ্ছে অনেকের মত আমার মা'র কিছু সংস্কারে বিশ্বাস। এই সংস্কার কতটুকু যৌক্তিক আর কতটুকু অযৌক্তির সে বিচারে বা তর্কে যাব না। তবে এই সংস্কার আমার হাতের লেখা খারাপ হওয়ার পেছনে কিছুটা অবদান রেখেছেই বলে কথাগুলো বলা।

অবশ্য মা পরে এটা নিয়ে অনেকবার আফসোসও করেছে। কারণটা খুলেই বলি, আমি আসলে বাঁহাতি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই মা'র হাতে যখন পড়া শিখতে শুরু করেছি তখন কলমটাও ধরেছি বাঁহাতে। কিন্তু আমার সংস্কার মনষ্ক মা নাকি কিছুতেই বাঁ হাতে আমাকে কলম/পেন্সিল ধরতে দিতোনা। এমনও নাকি হয়েছে সুযোগ পেলেই নাকি আমি বাঁহাতে কলম/পেন্সিল ধরতে চাইতাম।

যার কারণে মা যখন আমাকে লিখতে দিত তখন আমার সামনে বসে থাকতো যাতে বাঁহাতে আমি লিখতে চেষ্টা না করি। বিড়ম্বনা এখানেই শেষ হলে কথা ছিলো কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বিশেষ করে মুরুব্বীদের কাছে আমার এই বাঁ হাতের কাজ নিয়ে অনেক কথা শুনেছি যার বেশীরভাগ ছিল সংস্কার নির্ভর যার সাথে কিছুটা ধর্মীয় আবহও জড়িত হতো। আর এটা স্বাভাবিক সংস্কারের সাথে একটা ধর্মীয় আবহ বরাবরই জড়িত থাকে কারণ এগুলো যতটা না প্রমাণ সাপেক্ষ তার চাইতে বেশী বিশ্বাস নির্ভর। কয়েকবার অন্যের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে গিয়ে কথা শুনেছি শুধু বাঁহাতে চামচ ধরার কারণে। যার পর থেকে কোন অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে কাউকে খাবার বেড়ে দেয়া আমি বলতে গেলে চিরতরেই বন্ধ করেছি।

যদিও যারা আমাকে কথা শুনিয়েছে তাদেরই আবার দেখেছি নিজেরা খাওয়ার সময় যখন ডান হাত বন্ধ থাকে তখন বাঁ হাতই খাবার বেড়ে দেয়ার একমাত্র ভরসা। অবশ্য এমন নিয়ম আছে কিনা যে ডান হাত বন্ধ থাকলে বাঁ হাতে খাবার বেড়ে দেয়া যাবে কিন্তু ডান হাত খালি থাকলে যাবেনা সেটা জানিনা। তবে অধিকাংশ মানুষই যেখানে ডানহাতি সেখানে নিয়ম কানুষ সংস্কার সব ডানহাতিদের সুবিধা বিবেচনা করেই হবে এটাই স্বাভাবিক। আর শুধু যে নিয়ম কানুনেই ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ তাই নয়, দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনিষপত্রও সবসময় ডানহাতিদের সুবিধা বিবেচনা করেই তৈরী করা হয়। শার্টের বোতাম থেকে প্যান্টের জিপার কিংবা কম্পিউটার কীবোর্ড।

এবার ঈদের বেশ অনেকদিন বাড়িতে ছিলাম। উপদেশ প্রবণ বাংগালী সমাজ উপদেশ দেয়ার সুযোগ যাতে সহজে না পায় সেজন্য বরাবরই আমি যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করি। হোয়েন ইন রোম ডু লাইক রোমান বা যদ্দেশে যদাচার যাকে বলে কিছুটা তেমন আর কি! তবুও এক বাড়ীতে চায়ের নেমতন্ন রক্ষা করতে গিয়ে এবারও সেই উপদেশ আর এমন আচরণ সহ্য করতে হলো যে সভ্যতা ভদ্রতা সেভাবে অতটা শিখিনি এমন একটা ভাব। কারণটা হচ্ছে চা খেতে গিয়ে বাঁ হাতে কাপের হাতল ধরা। আর একটা দেখেই মুরুব্বী একজন টানা উপদেশ দিয়ে গেলেন আর সে উপদেশের ভেতরে এটাও চলে আসল এভাবে বাঁহাতে খেতে গিয়ে কিভাবে আমি আল্লাহ্‌ এবং রাসুলের নির্দেশেড় অবমাননা করছি।

এবং যেহেতু উনি আমাকে শাসন করার অধিকার রাখেন সেহেতু এটাও বলে দিলেন ভবিষ্যতে এমন কাজ যাতে আমি না করি। আমার কিছু বলার নাই, এমন পরিস্থিতিতে আমি আগেও অনেকবার পড়েছি কিন্তু অভ্যাস এবং বাঁহাত বেশী চলার কারণে সচেতন ভাবে ডান হাতে কিছু না ধরলে অবচেতনে সেটা আমার বাঁ হাতেই চলে আসে। যেমন ঘড়ির ফিতে বাঁহাত দিয়ে বাঁধা আমার জন্য সুবিধাজনক মনে হয় বলে ডান হাতে ঘড়ি পড়া এখন শুধু অভ্যাসই নই বরং বাঁহাতে ঘড়ি পড়লে বেশ অস্বস্থিও হয় যেমনটা হয় ডান হাতে কাপ বা মগের হাতল ধরে চা বা কফি খেতে। আর যে কারণেই হয়তো কোন একদিন অবচেতনে ঐ মুরুব্বীর সামনেই হয়তো অবচেতবে আবার বাঁ হাতে কাপের হাতল ধরবো তখন মুরুব্বী ভাববেন বা বলবেন যে তার উপদেশ আমি অগ্রাহ্য করেছি। আর যেটা আমার প্রতি উনার আন্তরিকতায় আবশ্যিক ভাবেই ফাটল ধরাবে।

যেমনটা আগেও অনেকে সাথে হয়েছে। বলা বাহুল্য ছুরি চামচ কালচারের বাইরে থেকে খাবার টেবিলে বাঁ হাতে ছুরি ধরার কারণেও একবার এক ভারতীয় আন্টির কাছে শুনেছিলাম এটা নিয়ম বহির্ভুত এবং দৃষ্টিকটু। যদিও আমি এখনও জানিনা সঠিক নিয়মটা কি, আর জানার ইচ্ছাও নেই। যেহেতু বাঁ হাতে ছুরি ধরেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি তাহলে হতে পারে ডানহাতিরা ডান হাতে ছুরি ধরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বলেই এমন নিয়ম বানিয়েছে!! এবার ইন্টারনেট ঘেঁটে বাঁহাতিদের ব্যাপারে কিছু তথ্যঃ => সাধারণত ৫/৭% মানুষ বাঁহাতি হয়ে থাকে। => ১৯৯৬ সাল থেকে ১৩ আগস্টকে বাঁহাতি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

=> ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় কালে কালে বাঁহাতিদের বাম হাতের অধিক ব্যবহারকে একটি বদভ্যাস বা শয়তানের প্ররোচনা হিসেবে দেখা হয়েছে। => ইংরেজী left শব্দটি এংলো-স্যাক্সন শব্দ lyft হতে এসেছে। যার অর্থ দুর্বল, অব্যবহার্য্য। => সেমেটিক ধর্মগুলোতে সাধারণতঃ ডান হাতকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাইবেলে ডান হাতের কথা উল্লেখ আছে ১০০ বার এবং প্রতিবারই পজেটিভ ভাবে আর বাম হাতের উল্লেখ আছে ২৫ বার এবং প্রতিবারই নেগেটিভ ভাবে।

=> বিয়ের আংটি বাম হাতে পড়ানো হয় কেন এটা নিয়ে একটি তত্ত্বে বলা হয়, প্রাচীন মিশরে বাম হাতকে অপূর্ণতার প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। যেখানে আংটি পড়িয়ে দুইজন অপুর্ণতাকে পুর্ণতা প্রদান করা হয়। => টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ফেন্সিং, ক্রিকেট, বেজবল প্রভৃতি খেলায় বাঁহাতিরা ডানহাতিদের চাইলে বেশী সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে একজন বাঁহাতি পোলো খেলার অনুপযুক্ত। => ডিজনীর Phineas and Ferb কার্টুন সিরিজের প্রধান চরিত্রগুলোর সবাই বাঁহাতি।

=> এক গবেষণায় দেখানো হয় যে বাঁহাতিরা ডানহাতিদের চাইতে গড়ে নয় বছর কম বাঁচে। => জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত বাঁহাতি ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে অন্যতম লিওনার্দো ডা ভিঞ্চি, মাইকেলএঞ্জেলো, ভিনসেন্ট ভ্যানগক, আইজ্যাক নিউটন, বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, নেপোলিয়ান, মোটজার্ট, বব ডিলন, মহাত্না গান্ধী, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, হুগো চ্যাভেজ, বিল ক্লিনটন, জর্জ বুশ, বারাক ওবামা, ওসামা বিন লাদেন, জেমস ক্যামেরন, টম ক্রুজ, ব্রুস উইলিস, এঞ্জেলিনা জোলি, জুলিয়া রবার্টস, মেরিলিন মনোরো, জিম ক্যারি, অপেরাহ উইফ্রে, অমিতাভ বচ্চন।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।