হে বিধাতা আমায় শক্তি দাও.........
গিজুর(যদিও এটা ওর আসল নাম নয়)সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় বুয়েট এর কেমিক্যাল ডিপার্টমেন্টে। এক চরম মেধাবী ও ব্যাতিক্রমী প্রতিভার ছেলে ও । ওর কাছ থেকে শোনা ওর লাইফ এর অনেক অভিজ্ঞতার কাহিনি ও আমাকে বলেছিল। তেমনই এক কাহিনি আজ লিখলাম । কাহিনি বললে ভুল হবে , গিজুর কথা অনুযায়ী এটা নাকি সত্য ঘটনা ।
১
গিজুর যখন ঘুম ভাঙলো তখন রাত ১১.০০ টা বাজে । Thermodynamics পড়তে পড়তে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে নিজেও জানেনা। বুয়েটের ড. রশীদ হলের ৩০২ নম্বর রুমে এক অন্ধকারময় পরিবেশ । কিছুখন পরে যখন তার হুঁশ ফিরে এল,তখন তার মনে পড়লো, আজ সকালে হলে নোটিশ দেয়া হয়েছিল যে যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে রাত ৮.০০ টা থেকে মোট ১৮ ঘন্টা কারেন্ট বন্ধ থাকবে । তার উপর আবার পরিবেশটাও এখন ভুতুরে ।
বুয়েট তখন ছুটি দেয়া হয়েছে । ঈদের জন্য ১৫ দিনের ছুটি । ঈদের পর আবার কেমিকাল ডে । আজ ছুটির চতুর্থ দিন চলছে । হলের প্রায় সবাই যে যার বাড়িতে চলে গেছে পরিবারের সাথে ঈদ কাটানোর জন্য, continuous বাঁশ থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য।
গিজুর তিন রুমমেটও চলে গেছে, শুধু সে-ই কেবল রুম এ একা । তার প্ল্যান ছিল ঈদের আগেরদিন বাড়ি যাওয়া এবং এই ছুটির ফাঁকে term এর সিলেবাসের বড় অংশ শেষ করা । তাছাড়া এরই মাঝে সে তার ভায়োলিন ও তবলা-র প্রাকটিস করবে । সাথে করবে আরেকটা গুরুত্বপুর্ন practice…..(ওর source of power সেবন - বজায় রাখার প্রাকটিস)।
ঘুমের ঘোর তখনো কাটেনি , তবুও গিজু উঠে বসলো , মনে মনে ভাবতে থাকল,
“এমন একটা জোস পরিবেশ যদি সবসময় থাকতো তাইলেতো পড়াশোনা ছাড়াও বাকি ব্যাপারগুলাতেও ফাটায়া ফালাইতাম”।
ডাইনিং এখন বন্ধ । তবে গিজুর আপাতত খুধা নেই । সে এখন রুমের অন্ধকার দূর করতে চার্জার লাইট খুজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল । মোবাইলের স্বল্প আলোতে পু্রো রুম খুজেও সে চার্জার লাইট পেলনা । বহু খোজার পরেও যখন লাইট পাওয়া গেলনা তখন সে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে পড়ল ।
এমন সময় পেছন থেকে হটাত একটা কন্ঠ ভেশে আসলো, আধ্ম্যাতিক কন্ঠ-
“ওহে গাঞ্জাবাবা !!…আপনার সঞ্চয়ক বাতি এই দিকে”।
গিজু বুঝতে পারলনা , সেকি ভুল শুনছে? রুমতো ভেতর থেকে লক করা ,তাহলে পেছনে বসে ডাকছে কে? তার মনে হল এটা source of power খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ।
২
এবার কন্ঠটা আবার শোনা গেল,
“গাঞ্জাবাবা এইদিকে আগমন করুন,বুঝিতে পারিতেছি আপনি কিঞ্চিত আতংকিত হইয়াছেন। আমাকে আপনার চিনিবার দরকার নাই । এই কাগজখানা পড়ুন।
মহামতি ভানুসিংহ নিজ হাতে লিখিয়া আমার মারফত আপনাকে দিতে বলিয়াছেন…”
হটাত চার্জার লাইট জ্বলে উঠলো । গাঞ্জাবাবা…থুক্কু গিজু কিছুখখন চোখ বন্ধ করে আয়তুল কুরসি পরার চেষ্টা করল। কিন্তু ওইsource of power effect এর কারনে মুখ থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত বের হওয়া শুরু করল ।
-“জ্বি আজ্ঞে আপনি ভানুসিংহেরই গান গাইতেছেন । এবার দয়া করিয়া উনার প্রেরিত পত্র খানি লইয়া আমাকে বাধিত করিবেন”।
গিজুর তখন মনে হচ্ছিল সে স্বপ্ন দেখছে । এবার মনস্থির করে সে সামনে তাকালো । এক লম্বা চওড়া লোক দাঁড়িয়ে , চেহারা হুবহু বারাক ওবামার মত । শরীরে তেমন কোনো বস্ত্র নাই,কেবলমাত্র কিছু গাঁদা ফুল সমবৃধ্ব গাছ-পাতা দিয়ে বিশেষ স্থান ঢাকা রয়েছে।
লোকটার চেহারা দেখে গিজুর মোটেও খারাপ মনে হলনা।
সে এবার সাহস করে বলল ,
“আরে এই ফুল আর ফুল গাছ তো তিতুমির হল এর। আপনে বিনে অনুমতিতে চুরি করছেন?আর সাধু ভাষা মারবেননা, চলতিতে কথা কন!”
-“কি করব গাঞ্জাবাবা । ভানুর সময়কাল থেকা time travelling কইরা আমি যখন এই কালে আইসা পলাশী আসলাম, তখন একদল ডাকাতবৃন্দ আমার কাছে কিছুই না পাইয়া আমার কাপড় লিয়ে গেলে । কিন্তু এই চিঠীটা লেবার পারেনাই । আর হল এর বাগানের কাছ দিয়া এত নিরজন রাতে কেও দেখবার আগে লজ্জা নিবারনের লাগি কিছু গাছ নষ্ট করছি,তুমি বাবা তিতুমির হল এর প্রভোস্ট রে কইয়োনা”।
ওবামা সাহেব গিজুকে কাগজটা দিলেন। গিজু ভাল করে ধরতে পারলনা, কাগজটা মাটিতে পড়ে গেলো। । কাগজটার মাটি থেকে তুলে ভাঁজ খোলার পর যখন গিজু আবার সামনে তাকাল …লোকটা তখন যেন হাওয়ায় মিশে গেছে। আশেপাশে তাকিয়েও লোকশুন্য রুম ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছেনা ।
অজানা রহস্যময় messenger এর এভাবে অকালে গমন করায় গিজু তৃতীয় বারের মত ভয় পেল, কিন্তু একই সাথে চিঠিটার প্রতি ব্যাপক কৌতুহল এর কারনে সে আবার স্বাভাবিক হয়ে আসল।
৩
এবার গিজু চিঠিটা পরা শুরু করল , গোটা গোটা ও তীখনো হাতের লেখা । গুরুচন্দালী ভাষায় যেন এক কাব্যিক ভঙ্গিতে লেখা। কেন যেনো মনে হতে লাগলো লেখাগুলো তার খুব চেনা , এর সাথে যেনো তার কোনো আত্মিক সম্বন্ধ আছে…
“ জয় হো গাঞ্জা
বহুদিন তোমার সাথে কথা হয়না গেজেল বন্ধু । তোমার কি একটুও মন চাইলনা আমার সাথে যোগা্যোগ করিবার?অবশ্য মন চাইলেও পারতানা , তুমিতো আর কালজ়য়ী খমোতা রাখনা আমার মত ,যে চাইলা আর যখন খুশি যেকোনো যায়গায় জাইতে পারবা ।
তবে তুমি আমার লাইফে বহুত ইম্পরতান্ত বটে। আমি সত্য বলিতেছি বন্ধু –
পাহিয়াছি নবেল
খাইয়াছি কদবেল
হইয়াছি কবিদের রাজা
তবুও ভুলিনাই তোমার খাওয়ানো গাঞ্জা
আমার মনে আছে মিতা, আমি একদিন শিতলখখার বুকে নৌকায় রাত্রি ভ্রমন কইরা প্রকৃতি দর্শন করিতেছিলাম। এমন সময় সময়দূত আসিলেন, আমাকে বলিলেন,
“রবি তোমাকে আজ একটা miracle এর সাথে পরিচয় করায়ে দেবো । তারে তুমি গাঞ্জাবাবা নামে জানবা। তোমার সাহিত্যসত্বায় এর প্রভাব পরবে কি পরবেনা সেইটা নিরভর করবে হাইগেনবারগ এর অনিশ্চয়তা নীতির উপর”।
তারপর আর কি বলিবার আছে? সবই ত তুমি জানো । নৌকায় আমার চোখের সামনে তুমি হাযির হইলা একশ কেজি গাঞ্জা নিয়া। নৌকা প্রায় ডুবেডুবে অবস্থা । মাঝি পাগলায় আতংকিত হয়া আমদেরকে শিতলখখার পাড়ে নামাইয়া দিল ।
তোমারে আমি যেই তোমার পরিচয় জিগগাসা করতে যাব , অমনি তুমি তোমার কালেকশন থেকে একত্টু গাঞ্জা বাহির কইরা দিয়া আমারে বল্লা টেস্ট করতে।
আমি সেই যে টানখানা দিছিলাম…উহ গাঞ্জাদাদা আর কি বলব!!
অল্পদিনের মধধেই আমার টেবিলে কালি কলম এর যায়গা দখল করিল গাঞ্জার প্যাকেট । আমার শয়নে শ্বপনে শুধুই তখন গাঞ্জা…
গাজার পরে গাজা জমেছে
নেশা ধরে আসে
আমি একা বসে আছি
গাঞ্জাবাবার পাশে
আমি মনেস্থির করলাম গীতাঞ্জলি জলাঞ্জলি দিয়া গাঞ্জাঞ্জলি রচনা করিব। তুমি কথা দিছিলা আমারে এ বিষয়ে সাহায্য করবা । আমাদের টারগেট ছিল আমরা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারা জন্ম দিব—গাঞ্জুটে সাহিত্য ধারা।
আমি যে কত ছ্যাকা খাইছিলাম তাতো তুমি জানই ।
অবশ্য তোমার থেকে অনেক অনেক কমই খাইছিলাম । তুমিই আমারে গাঞ্জা নামক ওষূধটা দিয়া ছ্যাকার অ্যাফেক্ট থেকে বাচাইছিলা। তুমিই আমারে দীখখা দিছিলা যে -
নারীই কেবল পুরুষের জন্য নয়, পুরুষও পুরুষের জন্য
।
তুমি আমারে বলিয়াছিলা যে পাশ্চাত্যে নাকি পুরুষ পুরুষ ভালবাসা হয়। ইহাকে আংরেজিতে gay বলে।
তুমি জান তুমি যাবার পর এই বিষয়টা আমি আমার এলাকার সবাইরে বুঝাইতে চাইছিলাম , কিন্তু কেও বুঝেনাই ।
তোমার এই লেকচার তাদের কে copy-paste মারার পর তারা খালি হা কইরা তাকাইয়া ছিল, আর মাসী বলিয়াছিল ,
“হ্যা রে রবি এটাত সত্যি যে তুই গেয়ে না,তুই কলিকাতার শহুরে বেটা"। ।
তাহারা কেহই gay জিনিসটা বুঝেনাই…বুঝেনাই তোমার প্রতি আমার ভালবাসা । তোমারে বলি-
সন্ধ্যা বেলায়
চিপাপাড়ায়
গাহিয়া তোমার গান
তোমারই কথা ভাবিয়া আমি
দিয়াছি গাঞ্জায় টান
এখন আমার ইংরেজির অবস্থা চো বিউটিপুল , একমাত্র তোমার গাঞ্জার জন্যই যা সম্ভব হইছে…এরপর?? তুমি কিভাবে যে চইলা গেলা …বড় কস্ট পাইলাম …অবশ্য আমিই চাইসিলাম যাতে তুমি তারাতারি ভাগ…আমাদের জোড়াসাঁকোর পরিবারের সব টাকা যেভাবে তুমি গাঞ্জার পিছে ঢালতাছিলা আমার আর কিই বা উপায় ছিল…সময়দূতরে ডাইকা তোমার প**য় লাথথি মাইরা খেদায়া দিছি।
কিন্তু এখন তোমারে খুব মিছ করতাছি
…
আইজ এই পরজন্তই থাক আমার আবার গাঞ্জায় টান মারবার লাগব……শুধু শুনিয়া রাখো-
এমন দিনে ক্যানো তুমি
গ্যালে আমায় ছেড়ে
নেশার গান
গায় এই প্রান
গাঞ্জাবাবার তরে
৪
গিজুর মাথাব্যাথা শুরু হতে লাগলো …চিঠির লেখাগুলো ধীরে ধীরে কেমন যেন পাল্টাতে শুরু করলো……গিজু এখন অল্প কিছু লাইন ই দেখতে পাচ্ছে তাও আবার লেখা……
এই তঅমার কি চমচ্চা…
কি অয়েচে তমার
এমন করচো ক্যানো
Thermodynamix পড়ো
সজোরে নিজের মাথা নিজেই ঝারা দিল গিজু , এবার স্পস্ট দেখতে পেল , তার হাতে আসলে thermodynamics এর বই এবং সে পড়ছিল chapter 8
.
-“মনে হয় কালকে একটু বেশি খাইয়া ফালাইছিলাম এজন্যি উল্টাপাল্টা দেখছি। আরে আর আমার নাম তো গিজু না…আমার নাম ত রাফি…এরপর থেইকা খাওয়া কমাইতে হইব”।
৫
রুমের দরজা খুললো রাফি । ঘড়িতে তখন সকাল ৬.০০টা বাজে । বারান্দায় বেরিয়ে আসলো সে ।
বাহিরের স্নিগ্ধ বাতাশ তার এলকেশ ছুঁয়ে গেল । আকাশে ভাসমান মেঘপুঞ্জের দিকে তাকিয়ে রাফি ভাবল –
“বাড়ি যাতি হবে, বাড়ি”।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।