আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রলয়ের স্মৃতি!

দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল... বাইরে হিমহিম বাতাস শুরু হয়েছে। আজ ক'দিন ধরে হিসেবটা ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না! মংলার কাছেই রামপাল। রামপালের হরিপদ, মায়া আর রুবীনা'রা কেমন আছেন কে জানে! শেষমেষ আর যেতে পারলাম না। সন্ধ্যায় ঝলমলিয়ায় আমার এক সহকারী আছে মিঠুন, মিঠুনকে ফোন করে খবরা খবর নিলাম।

এখন পর্য্যন্ত ওরা ভালো আছে, বৃষ্টি হচ্ছে থেকে থেকে বাদবাকী ওরা নিরাপদেই আছে। খবরে বলল কোথাও কোথাও ঝড় শুরু হয়ে গেছে। রাত যত বাড়ছে কেমন যেনো একটা অস্থিরতা আমার! লিভিং রুমে বসে টিভি দেখছি, নিউজ চ্যানেল গুলো প্রতিনিয়ত আপডেট দিচ্ছে। স্ক্রলে চলছে বিভিন্ন সতর্কবানী, নিরাপদ আশ্রয়ের সর্বশেষ স্বচিত্র খবরা খবর। শেষ মুহুর্ত পর্য্যন্ত মানুষ তাঁর বাড়ি ঘর, ভীটে মাটি, গোয়াল গরু কিছুই ছেড়ে যেতে চায় না।

আকাশে মেঘ বৃষ্টি, সমুদ্র উতলা। জীবনের মায়া ভুলে যায় তবুও মানুষ ছেড়ে যেতে চায় না সংসারের মায়ার আসবাব, উঠানের বাতাবী লেবুর গাছ, গোয়ালে বাধা গরু আর গরুর চোখের মায়া! লাইলী আপুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ যে সন্দীপে সাইক্লোন হইছিল ঐটা কত সালেরে আপু? সত্তরে! হুম সত্তরের সেই ভয়াল প্রলয়ের সময় আমি কোলের অবোধ শিশু। দুপুর নাগাদ আব্বা অপেক্ষা করে ছিলেন, ভেবে ছিলেন পানি হয়ত শুধু উঠান পর্য্যন্তই উঠবে আমাদের আর বাড়ী ছেড়ে অন্য কোথায়ও আশ্রয় নিতে যেতে হবে না। দুপুর হতে হতে পানি উঠান ছাপিয়ে ঘরের ভীটি তার পর আস্তে আস্তে ঘরের ভেতর চলে আসতে থাকে। আব্বা আমাদের সাত ভাই/বোন আমাদের এক ছোট মামা, বাড়ীর কাজের লোক, আম্মা আর দাদুদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্য কোমড় জলে নামেন! বসত্তর সালে দূর্যোগ মোকাবেলা আর আজকের মোকাবেলা আকাশপাতাল ব্যাবধান।

চল্লিশ বছর আগে সুযোগ সুবিধা সতর্কতা অনেক অপ্রতুল ছিল। আব্বা বাড়ীর পেছন দিয়ে উঁচু পধ ধরে ধরে কোমর জল ঠেলে ঠেলে চলছেন আর পিছে পিছে আমাদের সমস্ত পরিবার। স্রেফ এভাবেই সেদিন সংসারের মানুষ গুলো প্রকৃতির নির্মমতার কাছে ছিল চরম অসহায়! চারিদিকে হতে সাগরের জল তখন আমাদের ঘিরে ধরেছে। আব্বার একটা পায়ের হাটুর জয়েন্টটা ভাঙ্গা ছিল, হাটতে হটতে ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারেন নাই। পা ফসকে একটা পুকুরের ভেতর পড়ে যান।

আব্বার কোলে ছিলাম আমি, আমি আব্বার হাত ফসকে পানিতে পড়ে যাই চোখের পলকে... হায়রে জীবন, সে দিনই সাঙ্গ হয়ে যেতে পারতো সব! জানি না উপকুলের মানুষ গুলো কেমন আছেন আজকের এই রাতে! যে যেভাবেই যেখানেই আছেন আপনারা সবাই নিরাপদে থাকুন, মঙ্গলে থাকুন। আমাদের এই জাতি যুদ্ধ করেই বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে চিরকাল। জয় বাংলা! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।