---
পৃথিবীর অমিমাংসিত ও রহস্যময় ঘটনাগুলো নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সাপ্তাহিক চক্রজাল অনলাইন সিরিজ । অমিমাংসিত ঘটনাগুলো এ সিরিজে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে। এসব রহস্যের উন্মোচন; মানুষের উপর শয়তানের প্রভাব সম্পর্কিত বিশ্লেষণ, মানব চিন্তা ও কর্মে শয়তানের কার্যপদ্ধতি নিরূপণ এ সিরিজটির লক্ষ্য । ঘটনাগুলো প্রীতিকর নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ভৌতিক ও নৃশংস।
তাই দুর্বল চিত্ত ও সংবেদনশীলদের সিরিজটি এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ রইল।
নির্জনে ঘৃণিত শয়তানের উপাসনাঃ আদম ধর্ম
অস্পৃশ্য প্রপঞ্চ
১১ ই জুলাই ২০০৭। ট্রেনটি জগন্নাথগন্জঘাট থেকে ছুটে চলেছে। ট্রেন চালক আব্দুল মতিন অন্যদিনের মত স্বাভাবিকভাবে বসে আছেন। বেলা তিনটা পনেরো।
ট্রেনটি ময়মনসিংহের কাশর পৌরসভা পার হচ্ছিল। হঠাৎ করে যা ঘটল আব্দুল মতিন তা আশা করে নি। রেলপথের বাঁ পাশ থেকে নয়জন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেলের দিকে আসতে লাগল। ট্রেন থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলেন আব্দুল মতিন। কিন্তু ট্রেনটি যখন থেমেছে ততক্ষণে ট্রেনের চাকায় থেঁৎলে গেছে নয়জন আগন্তুক।
রেল লাইনের ৩ কিলোমিটার জুরে ছড়িয়ে পড়ে খন্ড বিখন্ড লাশ আর রক্ত। ট্রেন চালক আব্দুল মতিন ট্রেন থেকে নেমে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।
পরদিন: প্রথম আলো রিপোর্ট:
ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে একই পরিবারের নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা তিনটা ১৫ মিনিটের দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা, এরা একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছে।
তবে কেন সবাই এভাবে আত্মহত্যা করেছে, সে ব্যাপারে পুলিশ বা এলাকার কেউ কিছু বলতে পারছে না।
পুলিশ জানায়, ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলো হেনা (৬০), তাঁর ছেলে আরিফ (২৫), রাহাত (২০), মেয়ে আখতারী (৪০), মোর্শেদা (২৬), শবনম (১৮), মবি (৩০) এবং মবির দুই সন্তান মৌ (৮) ও মাওলা (৯)। এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এই পরিবারটির বাড়ি রেলপথের পাশেই। দুই দিন আগে বাঁশের বেড়া দিয়ে বাড়িটি ঘেরাও করে ফেলা হয়। এই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহলও ছিল।
এরা এলাকাবাসীর সঙ্গে মিশত না। সমাজ থেকে তারা ছিল একরকম বিচ্ছিন্ন। তারা কোন ধর্মের অনুসারী ছিল এ ব্যাপারেও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, বেলা সোয়া তিনটার দিকে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহের দিকে একটি ট্রেন আসছিল। ট্রেনটি ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকা পার হওয়ার সময় একটি বাসা থেকে নারী ও পুরুষ দলবেঁধে বের হয়ে আসে।
এরপর সবাই একসঙ্গে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ট্রেনের সহকারী চালক ছিলেন মো. এনায়েত হোসেন খান। তিনি বলেন, ২৫৪ ডাউন ট্রেনটি সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জগন্নাথগঞ্জঘাট থেকে ছেড়ে আসে। তিনি কাশর এলাকায় যখন আসেন তখন সময় প্রায় বেলা তিনটা ১০ মিনিট। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ দেখতে পাই, রেলপথের বাঁ পাশ থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেলের দিকে আসতে থাকে।
প্রথমে কিছুই বুঝতে পারিনি। ’
এনায়েত আরও বলেন, ‘একেবারে কাছে চলে আসার পর বুঝতে পারি, তারা রেলে কাটা পড়তে যাচ্ছে। তখন রেলের গতি কমানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুরত্ব এত কম ছিল যে, কিছুই করার ছিল না। ’ রেল বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চোখের সামনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা দেখে ট্রেনচালক আবদুল মতিন ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে এসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থল ও ওই বাড়িতে ভিড় করে। ওই বাড়ির ভেতর গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউই নেই। একটি পাকা ঘর। পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো বড় একটি গর্ত খোঁড়া।
বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাট। রান্নাঘরে কাটা ছোট মাছ পড়ে আছে। তরিতরকারিও কেটেকুটে রাখা হয়েছে।
একই পরিবারের নয়জনের মৃত্যুর খবর শুনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ডায়েরি ও হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করেছে।
এগুলোর কিছু বাংলায় আবার কিছু ইংরেজিতে লেখা। এগুলোয় বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য ছিল।
ইংরেজিতে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল, ‘আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম।
’
এ ছাড়া ‘সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব’ ইত্যাদি ধরনের বেশ কিছু মন্তব্য ছিল। স্থানীয় লোকজন বলছে, পরিবারটি খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী। কিন্তু পুলিশ বাড়িতে এ রকম কোনো প্রমাণ পায়নি। খ্রিষ্ট ধর্ম কিংবা যিশুখ্রিষ্টের ওপর লেখা কোনো বই বাড়িটিতে পাওয়া যায়নি। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক মো. শামসুল আলম মন্তব্য করেন, ঘটনা যেভাবেই ঘটুক, এটা খুবই রহস্যজনক।
তদন্ত ছাড়া এই মুহুর্তে কিছু বলা সম্ভব নয়। ওই পরিবারের জীবিত কাউকে পাওয়া যায়নি। আশপাশের লোকজনও তাদের ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছে না। তবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ পরিবারের সদস্যরা সম্পুর্ণ ব্যতিক্রম এক ধরনের ধর্মীয় ভাবধারায় বিশ্বাসী বলে মনে হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র পেয়েছি, তাতে এটাই মনে হচ্ছে।
’
পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় রেলওয়ের পুলিশ মামলা করবে। ময়মনসিংহ পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মোজাম্মেল হক ইউসুফ বলেন, এ পরিবারটির সঙ্গে এলাকার কারোর সম্পর্ক ছিল না। কেউ এ বাসায় আসত না। তারাও এলাকার কারও বাসায় যেত না। তিনি আরও বলেন, আশপাশের কোনো পরিবারের সঙ্গে তাদের খারাপ সম্পর্ক বা রেষারেষি ছিল না।
স্থানীয় ফারুক হাসান বলেন, ট্রেনে কেটে মারা যাওয়া হেনার স্বামী আনোয়ার দরবেশ অনেক আগে মারা যান। আনোয়ার দরবেশও ছিলেন রহস্যময় এক মানুষ। তিনি বলেন, এলাকায় পরিবারটি একেবারে বিছিন্ন ছিল। এরা কোথাও যেত না।
ইত্তেফাক রিপোর্ট:
ময়মনসিংহ শহরতলী কাশর ইটখলা এলাকায় একই পরিবারের ৯ জন একসাথে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
গতকাল বুধবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে এই ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি জানতে এবং তাদের লাশ এক নজর দেখতে আসা শত শত কৌতূহলি জনতার ভিড় সামলাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এই ঘটনার পরপর এই রেলপথে ট্রেন চলাচল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়ায় উভয় পথে যাতায়াতকারী একাধিক ট্রেনের যাত্রীসাধারণের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ডিসি মোঃ শামসুল আলম, এসপি মোঃ রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে শহরের কাশর ইটখলাস্থ নিজ বাড়ির সামনের রেলপথে জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ অভিমুখী জিএম এক্সপ্রেস নামের ২৫৪ নং একটি চলন্ত ট্রেনের নিচে মৃত আনোয়ার ফকিরের স্ত্রী হেনা আনোয়ার (৬০) পুত্র আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), কন্যা আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি মৌলা আনোয়ার (৮) এবং নাতনী মৌ আনোয়ারকে (১০) সাথে নিয়ে একযোগে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পরে রেলপথের ৩ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে তাদের পড়ে থাকা লাশের একাধিক খণ্ডিত অংশ সংগ্রহ করে জিআরপি পুলিশ হেফাজতে নেয়।
পরিবারটির এমন হৃদয়বিদারক পরিণতির কারণ অনুসন্ধানে স্থানীয় প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, শহরের কাশর ইটখলা এলাকায় আশির দশকে জমি কিনে বাড়ি করেন আনোয়ার ফকির নামের এক ব্যক্তি। একজন আধ্যাত্মিক সাধক হিসাবে পরিচয় ছিল আনোয়ার ফকিরের। তবে স্থানীয় প্রতিবেশীদের সাথে তাদের কোন সখ্যতা ছিল না। পরিবারটি ছিল একঘরের মত।
সূত্র জানায়, গত প্রায় ৫/৬ বছর পূর্বে আনোয়ার ফকির মারা যাবার পর তার লাশের দাফন ও কবর দেয়া নিয়ে তার পরিবার এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। যে কারণে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুর পর এই পরিবারটিতে একদিকে শুরু হয় প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ এবং অন্যদিকে অভাব-অনটন। আর এসব কারণে এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভর করে এক ধরনের হতাশা। যার ফলস্বরূপ আনোয়ার ফকিরের বিধবা পত্নী হেনা আনোয়ার অনেকটা বাধ্য হয়ে তার ২ পুত্র ও ৪ কন্যা এবং নাতি-নাতনীদের নিয়ে একযোগে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে এই পরিণতির শিকার হতে বাধ্য হয়। অবশ্য এর সত্যতাও মেলে এই পরিবারটির বাড়িতে প্রবেশ করলে।
চারদিকে বাঁশের বেড়া দেয়া একতলা দালানের এই বাড়ির এক পাশের উঠনের মধ্যে তারা একটি বিশাল আকৃতির কবর খুঁড়ে রাখেন। আর বাসার বারান্দায় পাওয়া যায় একটি লাশের কফিন। বাসার অভ্যন্তরের প্রতিটি কক্ষে ছিল সাজানো-গুছানো এবং পরিপাটি। ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলোও তারা রেখে গেছে সাজিয়ে-গুছিয়ে। এসব দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তারা তাদের এই আত্মহত্যার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বেশ ক’দিন আগে থেকেই।
পুলিশ বাসার অভ্যন্তর থেকে হাতের লেখা ৩টি ডায়েরি উদ্ধার করেছে।
আরো জানতে সপ্তাহান্তে চোখ রাখুন: http://www.chokrojal.tk/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।