ব্যাংকের গোড়ার কথা
kazi omar Faruk
Email:
ব্যাংকিং কার্যক্রম ঠিক কোন সময়ে শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র হতে এর উৎপত্তিকাল সম্পর্কে এবং এর প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পর্কে যৎসামান্য ধারণা লাভ করা যায়। ব্যাংকের গোড়ার ইতিহাস প্রচ্ছন্ন থাকার মূলে রয়েছে এর লিখিত কোন তথ্য না থাকা। ব্যাংকিং এর কতিপয় কার্যক্রম যেমন ঃ ঋণ সৃষ্টি, মুদ্রার বিনিময় অতি প্রাচীন কালেই শুরু হয়েছিল। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ংঁসবৎরবহ ঢ়ৎরবংঃ (পুরোহিতগণ) কর্র্তৃক অর্থ সম্পদ জমা গ্রহণ করা এবং সুদভিত্তিক ঋণ প্রদান করা হত।
কালের বিবর্তনে যখন ব্যবসা-বাণিজ্যের গণ্ডি প্রসারিত হয়ে পড়ে তখন বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের মুদ্রার মধ্যে বিনিময় আবশ্যক হয়ে পড়ে। রোমান সভ্যতার গোড়ার দিকে একটি শ্রেণীর সৃষ্টি হয় যারা জনসাধারণের অর্থ জমা গ্রহণ করত এবং সুদের বিনিময়ে ঋণ দিত এবং মৌখিক চুক্তি বলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে মুদ্রা প্রেরণ করত। আনুমানিক ৫০০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে রোমানরাই এ বিষয়ে কতিপয় নিয়মের প্রচলন করে।
প্রাচীন কালের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রসারে স্বর্ণকারদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাদের মজবুত আয়রন সেফ থাকত, আর তাই জনসাধারণ মনে করত তাদের কাছে নিজেদের অর্থ সম্পদ জমা রাখলে উক্ত সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জনসাধারণ সাধারণতঃ তাদের সঞ্চিত অর্থ এবং মূল্যবান সম্পদ তাদের কাছে জমা রাখত এবং এ সকল স্বর্ণকাররাও কাগজের রশিদ দেয়ার মাধ্যমে সম্পদ গচ্ছিত রাখার প্রমাণপত্র হস্তান্তর করত। স্বর্ণকারগণ প্রথম দিকে সম্পদ গচ্ছিত রাখার প্রতিদান হিসেবে সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করত।
সমাজের ধনাঢ্য মানুষগুলো তাদের সম্পদ নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করা বা অপর কোন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও পরিচিতজনের কাছে সংরক্ষনের পরিবর্তে সার্ভিস চার্জ দিয়েই স্বর্ণকারদের কাছে সংরক্ষণ করতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ বোধ করত। ফলে সমাজের দরিদ্র শ্রেণী বা অন্যান্য সাধারণ মানুষ প্রয়োজনে নিজেদের জন্য অর্থ সংস্থান করতে প্রায়ই অপারগ হয়ে পড়ত। এমতাবস্থায় এ সকল দরিদ্র শ্রেণী বা সাময়িক অর্থ সংকটে পতিত মানুষগুলো স্বর্ণকার বা যারা অর্থ সম্পদ গচ্ছিত রাখত তাদের শরণাপন্ন হতো।
ঐ সকল গচ্ছিতাগণ এ সুযোগে তাদেরকে উচ্চহার সুদে ঋণ প্রদান করত এবং ঋণ গ্রহীতাগণ নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে জোরপূর্বক ঋণ গ্রহীতাদের স্থাবর-অস্থাবর সহায়-সম্পত্তি দখল করে নিত। এভাবে এ শ্রেণীটি অর্থ লগ্নি করে অর্থ উপার্জন করত।
তারা এক সময় তাদের কাছে অধিক হারে অর্থ জমা রাখতে জনসাধারণকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সুদের একটি অংশ জমার উপর সুদ হিসেবে প্রদান করত। এভাবে প্রাচীন কাল হতেই সুদের ভিত্তিতে অর্থ জমা রাখা ও অর্থ লগ্নি করার ব্যবসা প্রচলিত হয়। সমাজের একটি শ্রেণী সুদের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণ করে সময়মত পরিশোধ করতে না পারার কারণে সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়, অপরদিকে মহাজন শ্রেণীটি বিনা পরিশ্রমে অপরের অর্থ লগ্নি করে সুদ ও দরিদ্রদের সম্পদ দখলের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল বিত্তশালী হয়ে যায়।
ফলে সমাজের অনেকেই এ ব্যবসায় উৎসাহিত হয়ে পড়ে এবং এ ব্যবসায় ব্যাপক প্রসার লাভ করে।
প্রাচীন কালে যখন কাগজি নোটের প্রচলন শুরু হয়নি তখনও সমাজের সম্পদশালী ব্যক্তিগণ দরিদ্র জনসাধারণের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী এই শর্তে কর্জ হিসেবে প্রদান করত যে, সময়ের আবর্তনের সাথে সাথে বর্ধিত হারে কর্জ গ্রহীতা ঋণ ফেরত দিবে। যে কর্জ গ্রহীতা প্রয়োজনের সময় নিজের অভাবী হওয়ার কারণে বর্ধিত হারে পরিশোধের শর্তে মৌলিক চাহিদা পূরণে কর্জ গ্রহণে বাধ্য হত, স্বাভাবিক কারণেই নির্ধারিত সময়ের পরে তাদের অধিকাংশের পক্ষেই স্বাচ্ছন্দে উক্ত কর্জ পরিশোধ করা সম্ভব হত না। কর্জ গ্রহীতারা হয়ত পরবর্তী সময়ের কষ্টার্জিত সম্পদের সিংহভাগ দিয়ে নি®ৃ‹তি পেত অথবা অমানবিক লাঞ্ছনার শিকার হয়ে সর্বহারা হওয়ার ভাগ্যকে বরণ করে নিতে হত।
১৩০০ ঈসায়ী সনের পূর্বে এ সুদী মহাজনী কারবারীদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠেনি।
তবে তারা বিভিন্ন গোত্রবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন সমাজে এ ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র এবং ইসলামের আবির্ভাবের পর মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহ ছাড়া সর্বত্র অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১৩০০ শতাব্দী পর্যন্ত সুদী মহাজনী ব্যবসা চলতে থাকে, যার ক্রমধারায় অপ্রাতিষ্ঠানিক সুদী কারবারের একটি ধারা বর্তমানেও সকল সমাজেই প্রচলিত রয়েছে। আর এ ব্যবসায় ইয়াহুদীরাই ছিল সব থেকে অগ্রগামী। এ সকল মহাজনরা অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে যদিও ছিল সমাজে শক্তিশালী তথাপিও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে কার্য পরিচালনার কারণে ঝুঁকিও কম ছিল না। আর তাই কালের বিবর্তনে এই সুদকে ভিত্তি ও সম্পদকে উপজীব্য করে ক্রমধারায় তাদের কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের প্রয়াস চালায়।
সুদীর্ঘ অতীতকাল হতে সুদভিত্তিক কার্যক্রম প্রচলিত থাকলেও ১৩০০ শতাব্দী পর্যন্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থার কোন সুনির্দিষ্ট কাঠামো গড়ে উঠেনি এবং বাণিজ্যিক ঋণেরও তেমন প্রচলন হয়নি। ১২০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইয়াহুদীরা বাণিজ্যিক ঋণ দেয়া শুরু করে। কারণ তাদের ধারণা মতে বাণিজ্যিক ঋণের সুদ-আসল সহজে আদায়যোগ্য হয়ে থাকে, ফলে বাণিজ্যিক ঋণ দেয়া অধিক লাভজনক ও নিরাপদ।
আধুনিক ব্যাংকিং-এর গোড়াপত্তন হয় ১৫০০ শতাব্দীর শুরুতে ইটালীতে। আধুনিক যুগের ইধহশ শব্দটিও এসেছে ইটালিয়ান শব্দ ইধহপব থেকে যার অর্থ হলো বেঞ্চ বা টুল।
এরূপ নামকরণের কারণ ইটালিয়ান সুদী কারবারীরা রাস্তার ধারে বেঞ্চে বসে তাদের কারবার পরিচালনা করত। তারা অর্থ-সম্পদ জমা গ্রহণ করত, সুদের বিনিময়ে ঋণ প্রদান করত, বৈদেশিক মুদ্রায় বিল অব এক্সচেঞ্জ ক্রয়-বিক্রয় করত এবং লেনদেনের হিসাবাদী সংরক্ষণ করত। ইত্যবসরে বিভিন্ন দেশেও প্রতিযোগিতামূলকভাবে এ ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে। যেমন ঃ ১৪০০ শতাব্দীর দিকে ফ্রান্সে এ ব্যবসা শুরু হয় এবং জার্মানীরাও এ ব্যবসায় বেশ সফলতা লাভ করতে সক্ষম হয়। এ ব্যবসাটি অল্প সময়ের মধ্যে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে যেমন প্রতীয়মান হয় তেমনি এর ঝুঁকি বহুলতাও সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।
১৩০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি ফ্লোরেন্স-এ প্রায় ৮০টি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এদের মধ্যে বার্ডি এবং পেরূইজি ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ১৫ জন কারবারির অংশীদারিত্বে বার্ডি গঠিত হয় যেখানে শতাধিক ক্লার্ক নিযুক্ত ছিল। এ প্রতিষ্ঠানটি সাইপ্রাস থেকে লন্ডন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছিল এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যে তাদের লগ্নি ব্যবসার বিস্তার লাভ করে। কিন্তু ঐ শতাব্দীতেই তাদের পতন আসে যখন তারা বড় বড় ঋণ গ্রহীতাদের থেকে ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়।
ইউরোপ ও আমেরিকাই হলো আধুনিক ব্যাংকিং-এর চধৎবহঃ পড়ঁহঃৎু. এ সকল দেশে ব্যাংকের সুবাদে যেমন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত হয়েছিল তেমনি এ ব্যাংকিং ব্যবসার সুদের কুফলের কারণেই বহু মানুষের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম সরকার কর্র্তৃক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৯১ খ্রীষ্টাব্দে। ২০ বছর মেয়াদে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির মেয়াদ ১৮১১ সালে শেষ হয়। এ ব্যাংকটি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। এ ব্যাংকটি ঋণদান, সিকিউরিটি ক্রয়-বিক্রয়, ডিপোজিট গ্রহণ ছাড়াও কাগজী নোটের প্রচলনসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যাদী পরিচালনা করত।
জনসাধারণের অর্থ-সম্পদ গচ্ছিত রেখে কাগজী নোট এ শর্তে ইস্যু করল যে, চাহিবা মাত্র এর বাহককে এর বিনিময় মূল্য স্বর্ণ বা রৌপ্যের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। কিন্তু যখন ১৮১১ সালে উক্ত ব্যাংকের অনুমোদিত মেয়াদ ২০ বছর উত্তীর্ণ হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস অনুমতি নবায়নে অস্বীকৃতি জানালো, যদিও এটি একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর মধ্যে পরিচিত হয়েছিল। পরবর্তীতে জনসাধারণ তাদের রক্ষিত সম্পদের নিশ্চয়তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতে থাকে এবং জনসাধারণের উদ্বিগ্নতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা উক্ত ব্যাংকের প্রচলিত নোটের মূল্যের বিষয়ে সন্ধিগ্ন হয়ে পড়ে। এক সময় জনসাধারণ ব্যাংকের পূর্বশর্তানুসারে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা সরবরাহের জন্য কাগজী নোট উপস্থাপন করে।
কিন্তু ঐ সময়ে সেই ব্যাংকের কাছে উক্ত কাগজী নোটসমূহ ফেরত নেয়ার মত যথেষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা সংরক্ষিত ছিল না। ফলে তারা কাগজী মুদ্রার সাথে স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার বিনিময় বন্ধ করে দেয়। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই কাগজী নোটসমূহ মূল্যহীন হয়ে পড়ে। এই বিপজ্জনক অবস্থার কারণে বহু ব্যাংকই ব্যর্থতায় পতিত হয়। আর যখন ব্যাংকসমূহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল তখন বহু মানুষ তাদের সমগ্র জীবনের সকল সঞ্চিত সম্পদ হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে ১৮১৬ খ্রীষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করে। ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দে এ ব্যাংকটিও সরকারী স্বীকৃতি হারায়।
যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৩ সালে ঘধঃরড়হধষ ইধহশরহম অপঃ নামে একটি আইন প্রণয়ন করে। তার পূর্বে ১৮৩৭ সাল থেকে যে কোন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের আইন সভার নিয়ম পরিপালন সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরকারী প্রতিনিধির কাছে জামানত রেখে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত। এ ব্যবস্থায়ও বহু ব্যাংকের পতন ঘটে এবং বহু মানুষ তাদের সঞ্চয় হারিয়ে ভাগ্যাহত হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘধঃরড়হধষ ইধহশরহম অপঃ পাশ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের মোট ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৩,০০০। এ সকল ব্যাংকসমূহ গ্রাম ও শহরে বিস্তার লাভ করে কৃষক ও শিল্পপতিদেরকে সুদভিত্তিক ঋণ প্রদান করত। ব্যাংকসমূহকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস কর্তৃক নিয়োজিত ঘধঃরড়হধষ গড়হরঃড়ৎু ঈড়সসরংংরড়হ এর সুপারিশক্রমে ঋবফবৎধষ জবংবৎাব অপঃ প্রণয়ন করে। এর ফলে ডিপোজিটরদের দুর্ভোগ কিছুটা হ্রাস পেলেও বিড়ম্বনা থেকেই যায়। ব্যাংকসমূহ আর্থিক বহুমুখী বিপণীতে পরিণত হয়।
১৯২০ সালে প্রায় ৬,০০০ ব্যাংকের কার্যক্রম রহিত করা হয়। এ অবস্থায়ও বহু ডিপোজিটর তাদের সম্পদ আংশিক হারায়। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ব্যর্থ ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০,০০০। এ সকল ব্যাংকসমূহের ব্যর্থতার মূলে ছিল ঋণ গ্রহীতারা প্রায়ই তাদের গৃহীত ঋণ লাভজনকভাবে ব্যবহারে সক্ষম হয়নি। ফলে সুদে-আসলে বৃহৎ অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়।
ফলে ব্যাংকসমূহ ঋণের অর্থ আদায় করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তারল্যের অভাবে ব্যর্থতায় পতিত হয় যার চূড়ান্ত পরিণতি ভোগ করতে হয় আমানতকারীদেরকে।
যুক্তরাষ্ট্র ব্যাংকিং খাতের এ বিপর্যয় রোধকল্পে ১৯১৩ সালে ঋবফবৎধষ জবংবৎাব ঝুংঃবস এর আওতায় ঋবফবৎধষ জবংবৎাব ইধহশ নামক কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সকল ব্যাংকসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করতো। এতদসত্ত্বেও সুদভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থার ঝুঁকি থেকেই যায়। ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র এ নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইধহশরহম অপঃ পরিবর্তন করে বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ ব্যাংকের কার্যক্রম পৃথক করে দেয় এবং ডিপোজিটরদের সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়ে ডিপোজিটরদেরকে আশ্বস্ত করার লক্ষ্যে ঋবফবৎধষ উবঢ়ড়ংরঃড়ৎ ওহংঁৎধহপব ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ (ঋউওঈ) প্রতিষ্ঠা করে।
এ সকল ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে ঝুুঁকিসমূহ ঋণ গ্রহীতাদের উপর স্থানান্তর করে এবং ব্যাংকের লিকেজসমূহকে গোপন করে ব্যাংকিং কাঠামোকে সুদর্শন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিদ্যমান ব্যাংকসমূহ আপাতঃ দৃষ্টিতে উন্নতি লাভ করে। ব্যবসায়িকভাবে বেশ চাহিদানুসারে তাদের সেবার মান ও ধরন সম্প্রসারিত করে। অপরদিকে কর্তৃপক্ষ ১৯৩০ এর ব্যাংক ফেইলিউরকে স্মরণে রেখে এ সময় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন প্রাপ্তির প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত কঠিনকরণসহ বিভিন্ন প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ব্যর্থতা ঠেকানোর প্রচেষ্টা চালায়। তথাপিও ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে প্রায় পাঁচটি ব্যাংক ব্যর্থ হয়।
এই ফেইলিউরের ঘটনায় যাতে ব্যাংকিং ব্যবসায় ধ্বস নেমে না আসে সেজন্য ঋবফবৎধষ উবঢ়ড়ংরঃড়ৎ ওহংঁৎধহপব ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ (ঋউওঈ) এর সহযোগিতায় অন্যান্য ব্যাংকসমূহ এই পাঁচটি ব্যাংককে আত্মীভূত করে নেয়। ফলে ডিপোজিটররা এ যাত্রায় বেঁচে যায়। তথাপিও ব্যাংক ফেইলিউরের ক্রমধারা প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮২ সালে প্রায় ৪৬টি ব্যাংক দেউলিয়া হয় এবং প্রায় প্রতিবছরই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৮৭ সাল হতে ১৯৯০ সালের মধ্যে প্রায় ২০০ ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
ফলশ্র“তিতে ডিপোজিটররা প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারায়। এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য ইউ এস ব্যাংকিং পদ্ধতিকে ঝুঁকিমুক্ত করার লক্ষ্যে যে ঋউওঈ এর সৃষ্টি হয়েছিল তা-ই এই ২০০ ব্যাংকের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। এ সকল ব্যাংকসমূহ ওহংঁৎধহপব এর উপর নির্ভর করে ঋণ দানের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় উদারতা প্রদর্শন করে। তারা মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঝুঁকি বহুল ও অলাভজনক খাতে ঋণ বিতরণ করতে থাকে। ফলে ঐ সকল ঋণ অনাদায়ের কারণে ব্যাংকসমূহের ব্যর্থতা ত্বরান্বিত হয়।
কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়। পর্যালোচনায় দেখা গেছে পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই ব্যাংক ফেইলিউরের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংকের ফেইলিউরের অন্যতম কারণ হলো সুদ। এ সকল সুদী ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করে অনেক ঋণ গ্রহীতাই তা লাভজনকভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না। ফলে ব্যাংক পুনরায় তার উপর সুদ যোগ করে মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেয়।
এভাবে বছরের পর বছর ঋণের সুদ যোগ করে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে থাকে। সুদের টাকা ব্যাংক আয় খাতে হিসাবভুক্ত করে। এতে করে ঋণ গ্রহীতার ঋণের ভার কেবলই বৃদ্ধি পেতে থাকে। অথচ তার কাছে ঐ পরিমাণ সম্পদ থাকে না। ব্যাংক ঋণের সুদকে আয় খাতে হিসাবভুক্ত করে, আর সুদের টাকা আদায় না হওয়ায় মূল ঋণের সাথে যুক্ত করে সম্পদ হিসেবে প্রদর্শন করে।
অথচ তার এ সম্পদের বিপরীতে বাস্তবে কোন সম্পদ ঋণ গ্রহীতার কাছে থাকে না। স্বাভাবিক কারণেই ব্যাংক কখনও যদি ঐ ঋণের টাকা আদায় করতে চায় তা আদায় হওয়া সম্ভব নয়। আর তাই ডিপোজিটরদের দাবী পূরণ অসম্ভব হয়ে পড়ে, যার পরিণতি হলো ব্যাংকের ব্যর্থতা। তথাপিও বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক অবস্থার কারণে শত সমস্যা ও অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেই মানুষ এ প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য। আর তাই ব্যাংকসমূহও গ্রাহকদের অর্থ ব্যবহার করে বহাল তবিয়তেই টিকে আছে এবং নিজেদের প্রসার ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে।
প্রথাগত [ঈড়হাবহঃরড়হধষ] ব্যাংকের কার্যক্রম
ব্যাংক নাম ধারণ করে যে সকল প্রতিষ্ঠান কাজ করছে ধরন অনুসারে তাদেরকে কতগুলো শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন ঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয়ী ব্যাংক, বিনিয়োগ ব্যাংক, সঞ্চয়ী ও ঋণ দান সমবায় ব্যাংক, ক্রেডিট ইউনিয়ন, মার্চেন্ট ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক যেমন ঃ শিল্প ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ইত্যাদি। প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থায় এ সকল ব্যাংকসমূহ তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় কতিপয় সেবা বিক্রয় করে থাকে। মানুষের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত জীবনধারাকে সহজসাধ্য করতে এ সকল কার্যাদি কেবল উপকারীই নয়, বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত সেবার বিনিময় হলো সুদের আদান-প্রদান।
এই সুদের আদান-প্রদানের কারণে দুনিয়াতে এই সেবাসমূহের কল্যাণের অন্তরালে যেমন অসংখ্য অকল্যাণের আগমন ঘটে তেমনি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে ধৃষ্টতা প্রদর্শনের কারণে আখিরাতের জীবনের জন্যও অপেক্ষমান থাকবে চরম ধ্বংস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।