"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্রাহর জন্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম ও তাঁর পরিবার, সাহাবীদের এবং যারা তাদের অনুসরণ করে তাদের সকলের উপর আল্রাহর শান্তি বর্ষিত হোক।
একজন মুসলিমকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীলতা প্রকাশ করতে হয়। আর সে আনুগত্যশীলতা তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বিষয় তিনটি হলো: “কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই দৃঢ়, নিখাঁদ, খাঁটি বিশ্বাস স্থাপন”, “আনুগত্যের স্বীকৃতি অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন” এবং “নৈতিক বিচার বিশ্লেষণ ও আন্তরিক আচার-ব্যবহার”।
বিশ্বাসটি আবার কোনভাবেই শুধু চিন্তার মধ্যে আবদ্ধ রাখা যাবে না, যেমন: শুধু চিন্তা করলাম আমি বিশ্বাস করি বা আমার বিশ্বাস এই রকম হোক ইচ্ছা করি কিন্তু বাস্তবে তা অনুপস্থিত।
বিশ্বাসটি হবে সেই অনুযায়ী যেভাবে আল্লাহ তাআলা চান যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্য, নিয়তের প্রতি আনুগত্য এবং মহান আল্লাহর সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রতি ভয়ের আনুগত্য। বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্যশীল কর্মসম্পাদন তখনই সম্ভব হবে যখন ভিতরের এবং বাইরের কাজগুলো এমন পন্থায় করা, যে পন্থা মহান আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন।
একজন মুসলিম আল্রাহকে বিশ্বাস করে, এখন বিশ্বাসের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে অবশ্যই নামাজ পড়তে হবে কেননা তা না হলে বিশ্বাসের আনুগত্য অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন হলো না।
ছোট একটি উদারহরণ দিই, সবার কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে উঠবে:
"(স্মরণ কর) যখন আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম, তোমরা সবাই আদমকে সিজদা কর, তখন তারা সবাই সিজদা করলো, কিন্তু ইবলীস ছাড়া (সে সিজদা করলো না); সে ছিল (আসলে) জ্বীনদেরই একজন, সে তার মালিকের আদেশের নাফরমানী করলো" (সূরা আল কাহাফ : ৫০)
দেখুন, ইবলিস কিন্তু আল্লাহকে বিশ্বাস করতো কিন্তু সে তার বিশ্বাসের আনুগত্য অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করে নি(সিজদা করে নি), আল্লাহর আদেশ অমান্য করলো।
যার ফলে সে বিতাড়িত হয়ে গেল।
"আল্লাহ তাআলা বললেন, যাও (দূর হয়ে যাও এখান থেকে , তাদের মধ্যে) যারা তোমার(শয়তানের) আনুগত্য করবে, তোমাদের সবার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম, আর (জাহান্নামের) শাস্তিও পুরোপুরি দেওয়া হবে। " (সূরা বনী ইসরাঈল:৬৩)
নামাজ না পড়লে শয়তানকেই অনুসরণ করা হয়,শয়তানের আনুগত্য করা হয়, কারণ শয়তান আল্লাহর আদেশ অমান্য করে সিজদা করে নি যদিও সে আল্লাহকে বিশ্বাস করতো।
"আবু হুরাইরা (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত পাঠ করে, অতঃপর সিজদা করে তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে একপাশে সরে দাঁড়ায় এবং বলতে থাকে, হায় আমার পোড়া কপাল, আদম সন্তানকে সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হলো সে সিজদা করলো। ফলে তার জন্য জান্নাত, আর আমাকেও সিজদার নির্দেশ করা হয়েছিল কিন্তু আমি অস্বীকার করেছিলাম, তাই আমার জন্য জাহান্নাম। " (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)
"আবু যুবাইর (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মাঝখানে নামায বর্জন করাই হচ্ছে ব্যবধান।
"*** (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)
***মানুষকে শিরক ও কুফর থেকে দূরে রাখার একমাত্র প্রাচীর হচ্ছে নামাজ। নামাজ তাকে এসব জঘন্য কাজে লিপ্ত হতে বাধা দেয়। যখন সে নামাজ ত্যাগ করে তখন তার মাঝে শিরকী কার্যকলাপ ও কুফরী ঢুকে যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন: "নিঃসন্দেহে নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে"। (সূরা আল আনকাবূত - ৪৫)
তিনি (স) বলেছেন: “আমাদের দলভুক্ত হতে নামায তাদের আলাদা করে দেয় যারা নামায ছেড়ে দেয়, যারাই নামায ছেড়ে দিবে তারাই কাফির”।
আত-তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত,২৬১; আলবানী কর্তৃক সহিহ হাদীস রূপে বর্ণিত।
"আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি আল্লাহর নিকট বেশী প্রিয়? তিনি বললেনঃ সময়মতো নামাজ আদায় করা। " (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)
তাই আসুন আমরা আমাদের বিশ্বাসের আনুগত্য অনুযায়ী আল্লাহ আদেশ মেনে চলি, শয়তানের আনুগত্য পরিত্যাগ করি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় করুন। আমীন।
(এই লেখাটি পূর্বে ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৫ এই সামু ব্লগে একবার প্রকাশিত হয়েছিল)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।