আমি বিদ্রোহী
হাকিমপুরে বাসের চাপায় স্কুল ছাত্রের মৃত্যু। সড়ক অবরোধ। বিক্ষুব্ধ জনতা স্থাপন করল তিনটি স্পীড ব্রেকার
রিবেল মনোয়ার
পরীক্ষা দেওয়া হলো না শিশিরের। বাবার মটর সাইকেলে চড়ে স্কুলে পরীক্ষা দিতে এসে চলন্ত বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয় শিমুল হোসেন শিশির (৭)। একই সাথে আহত হন মটর সাইকেল চালক বাবা মাহবুব আলম (জুয়েল)।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা পরিষদ গেটের কাছে। এসময় স্থানিয় বিক্ষুব্দ জনতা ঘাতক বাসটি আটক করে ভাংচুর করেছে। দীর্ঘ ৭ ঘন্টা পর যান চলাচল শুরু হয়।
স্কুল ছাত্র শিশিরের নিহতের খবর স্কুলে এবং তার পালপাড়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসি এবং স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তাদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসি, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় এসে বিক্ষোভ করে। তারা বাসের চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন এবং উপজেলা গেটের সামনে গতি রোধকের দাবীতে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে হিলি-জয়পুরহাট সড়ক ৭ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। এসময় সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ আজকের (মঙ্গলবার) স্কুলের সকল পরীক্ষা বন্ধ রেখে একদিনের ছুটি ঘোষনা করে। শিমুল হোসেন (শিশির) হাকিমপুর শিশু নিকেতন স্কুলের (কেজি স্কুল) প্রথম শ্রেনীর ছাত্র।
স্কুলটি উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং শিশিরের পরিবার জানান, শিশির প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও বাবার মটর সাইকেলে চড়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল স্কুলে। গতকাল মঙ্গলবার ছিল তার বাংলা পরীক্ষা। সকাল পৌনে ৯টার সময় মটর সাইকেল আরোহী পিতা-পুত্র উপজেলা পরিষদের গেটের কাছে পৌছালে এসময় জযপুরহাট থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি যাত্রীবাহি বাস তাদের ধাক্কা দেয়। এসময় পেছনে বসা শিশির ছিটকে বাসের নীচে চাপা পড়ে মাথা থেতলে গেলে স্থানিয় লোকজন দ্রুত তাকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
একই সঙ্গে শিশিরের বাবা জুয়েলও হাতে ও বুকে আঘাত পেয়ে আহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর শিশিরের মৃত্যু হয়। দুপুর ৩টা পর্যন্ত শিশিরের লাশ হাসপাতালে ছিল। বর্তমানে তার বাবা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
সকাল ১১টায় পালপাড়া গ্রামে শিশিরের বাড়ীতে গেলে দেখা যায় তার মা শিউলি আক্তার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে অঙ্গান হয়ে পড়ে আছেন।
মাঝে মাঝে তার ঞ্জান ফিরলেও ছেলের মৃত্যুর কথা মনে হয়ে বার বার মূর্চা যান। প্রতিবেশিরাও শিশিরের বাড়ীতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শিশিরের মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম।
হাকিমপুর শিশু নিকেতন স্কুলের (কেজি স্কুল) অধ্যক্ষ শ্রী সুনীল বসাক বলেন, দীর্ঘ দুই যুগেও এই স্কুলের কোনো ছাত্র-ছাত্রী দূর্ঘটনার শিকার হয়নি। শিশিরের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা শোকাহত।
ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক নূরল আলম শুভ জানান, বাসের চাপায় শিশিরের মৃত্যুতে স্কুলের সকল পরীক্ষা বন্ধ রেখে গতকাল মঙ্গলবার স্কুল একদিনের ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার মতিয়ার রহমান জানান, মটর সাইকেল আরোহী তার ছেলেকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্তরে ঢুকার ৮/১০ হাত আগে এসময় দক্ষিন দিক থেকে দ্রুত গতিতে একটি যাত্রী বাস এসে তাদের ধাক্কা দিলে তার ছেলে বাসের নীচে পড়ে। এসময় শিশুটিকে বাসের নীচ থেকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘাতক বাসের চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন এবং উপজেলা গেটের সামনে গতি রোধকের দাবীতে বিক্ষুব্ধ জনতা হিলি-জয়পুরহাট সড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এসময় হিলি জয়পুরহাট সড়কে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিকেল ৪টায় উপজেলা প্রশাসন গতিরোধক স্থাপনের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা অবরোধ তুলে নেয়। এরপর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। শিশিরের পরিবার সুত্রে জানাগেছে, হাসপাতাল থেকে শিশিরের লাশ বাড়ীতে আনা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় শিশিরকে কেন্দ্রিয় কবরস্থানে দাফন করা হবে।
হাকিমপুর থানার অফিসার ইন-চার্জ মো. মাহমুদুল আলম জানান, স্থানিয় মদ্ধ্যস্থাতায় স্কুল ছাত্র শিশিরের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে। স্থানিয় লোকজন সড়কে তিনটি গতিরোধক স্থাপন করেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর রেজা শাহিন বলেন, উপজেলা গেটের দক্ষিনে একটি এবং উত্তর পাশে দুইটি গতিরোধক স্থাপন করার আশ্বাসে ক্ষুব্ধ লোকজন অবরোধ তুলে নিয়েছে। তবে ঘাতক বাসের চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কে বা কারা উপজেলা গেট থেকে শান্তির মোড় পর্যন্ত তিনটি গতিরোধক স্থাপন করেছে।
সড়কে গতিরোধক স্থাপন করতে হলে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতির দরকার হয় বলে তিনি জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।