আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Projapoti - The Mysterious Bird

ভালবািস বাংলা নাটক...............

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনেক মেলা হচ্ছে। মোশাররফ করিম গাড়িটা যথাস্থানে রেখে এক কোনায় এসে দাঁড়ালেন। কপাল বেয়ে তাঁর ঘাম ঝরছে। একটু ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসলেন। চারদিকে তাকিয়ে হঠাৎ আনমনে বলে উঠলেন, না জানি কতক্ষণ বসে থাকতে হয়।

মিনিট ১৫ পরই এলেন মৌসুমী। নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজের দিকে তাকিয়ে মৌসুমী সরাসরি প্রশ্ন করলেন, জাহিদ ভাই কোথায়? কথাটা কানে যেতেই মোশাররফ যেন কিছুটা অপমানিত বোধ করলেন। মৌসুমীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন, ‘সহ্যের কিন্তু একটা সীমা আছে। আমি একা এখানে বসে আছি, আমার কথা জিজ্ঞেস না করে জাহিদ হাসানের কথা জানতে চাইছেন আপনি। এর পরও কি আমার মুখ বন্ধ করে রাখাটা ঠিক হবে?’ মোশাররফের কথা শুনে একটু ভড়কে গেলাম।

বলে কী! কিন্তু মৌসুমী হেসেই খুন। ‘মোশাররফ সত্যি অসাধারণ। সারাক্ষণ এমনি করে কথা বলেন। ‘উফ্, এই ছবিটিতে কাজ করতে গিয়ে যে কী আনন্দ পেয়েছি...। ’ মোশাররফ গলা নিচু করে বললেন, ‘বেশি আনন্দ পাইয়েন না, পরে কইলাম আবার দুঃখও পাইতে হইব।

কথায় আছে না, হাসির পরে কান্না, আর আনন্দের পর দুঃখ (হা-হা-হা)। ’ জাহিদ হাসান-মৌসুমী-মোশাররফ করিম—এই তিনজন প্রথমবারের মতো একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। ছবির নাম প্রজাপতি। এনটিভি প্রযোজিত এ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় জাহিদ-মৌসুমী ও মোশাররফ ত্রিভুজ প্রেমের ছবিতে কাজ করছেন। তিনজনকে দুপুর ১২টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছিল।

দুজন এসেছেন। কিন্তু জাহিদ কত দূরে? ‘হ্যালো, কত দূরে আপনি? আপনার জন্য বসে আছেন অন্য দুজন। ’ ‘বসুক। জীবনে আমিও মেলা সময় বইসে আছিলাম। বইসে থাইকলে বিশ্রাম হব।

আইসতাছি। শরীলডা খারাপ করছিল। ’ এমনি করে সিরাজগঞ্জের ভাষায় কথাগুলো বলছিলেন জাহিদ হাসান। মোশাররফের চুল উস্কখুস্ক। মৌসুমী জানতে চাইলেন, রূপসজ্জা করবেন না? মোশাররফ বললেন, ‘আমি তো এ রকমই।

দেখি, প্রয়োজন হলে কাপড় বদলে নেব। ’ মিনিট ২০ পর জাহিদ এলেন। মোশাররফকে জড়িয়ে ধরলেন। এক সময় মঞ্চে তাঁরা দুজনই ছিলেন নাট্যকেন্দ্রের সদস্য। একসঙ্গে বিচ্ছু নাটকে কাজও করেছেন।

ছবি তোলার পালা শেষ করে মধ্যাহ্নভোজনের জন্য তাঁরা তিনজনই চলে এলেন প্রথম আলোতে। ভোজন পর্ব শেষে শুরু হলো আড্ডা। জানতে চাওয়া হলো, তিনজনের প্রথম পরিচয় পর্বের কথা। মোশাররফ করিম বললেন, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিতেই প্রথম দেখলাম মৌসুমীকে। দেখার পর মনে হলো, তিনি এমনই একজন শিল্পী, যাঁকে আসলে সবারই ভালো লাগে।

এরপর বিচ্ছু নাটকের শো চলছিল। আমার দায়িত্ব ছিল দর্শকদের টিকিট নিয়ে আসনে বসানো। এমন সময় দেখলাম মৌসুমী এসেছেন। তাঁকে আমি একটি ভালো আসনে বসালাম। কাছ থেকে দেখে বেশ ভালো লাগল।

তখন কি আর ভেবেছি যে একদিন আমি তাঁরই সঙ্গে আবার কাজ করব!’ জাহিদ আর মোশাররফ করিম থিয়েটার করতে এসে পরিচিত হয়েছেন। একই দলের সদস্য তাঁরা। ফলে তাঁদের বোঝাপড়াটাও ছিল চমৎকার। অন্যদিকে জাহিদ-মৌসুমীর পরিচয়টা আসলে বড় পর্দা আর ছোট পর্দার কাজ দেখে। জাহিদ বললেন, ‘একদিন সিনেমা হলে গেলাম কেয়ামত থেকে কেয়ামত দেখতে।

বেশ সুন্দরী মেয়ে। ভালো লাগল ছবি দেখে। তারপর হঠাৎ কায়সার আহমেদ ভালোবাসার দেয়াল নামের একটি নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। পুরো নাটকে আমাদের দুজনের দৃশ্য ছিল দু-তিনটি। বাকিগুলো আলাদা আলাদা।

যে দৃশ্যটি ছিল, সেটিও আবার ছিল বাসরঘরের দৃশ্য। আমি যেহেতু একটু লাজুক স্বভাবের ছেলে, (মোশাররফের কাশি এল, একপলক তাকালেন জাহিদের দিকে, তারপর মাথা নিচু করে মিটিমিটি করে হাসলেন) তাই খুবই জড়তা কাজ করছিল। সিনেমার নায়িকা। তাঁকে সবাই “ম্যাডাম” বলে ডাকেন। সেখানে আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না।

আবার সেই দৃশ্যটি ছিল খুবই অন্তরঙ্গ দৃশ্য। বেশ লজ্জা লাগছিল। আমি আসলে তাকাতেও পারছিলাম না। ’ বলছিলেন জাহিদ। মৌসুমী জাহিদের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘ওই একটি দৃশ্যে কাজ করার পর দেখলাম, দুজনের মধ্যে আর কোনো জড়তা নেই।

এরপর অবলীলায় আমরা গল্প করা শুরু করলাম। একে অন্যের সম্পর্কে জানলাম। আর মোশাররফ করিমকে টিভির পর্দায় দেখার পর সামনাসামনি দেখলাম যোগফল শূন্য নাটকে। সেখানে একসঙ্গে কাজ করলাম। দেখলাম, অসাধারণ এক অভিনেতা তিনি।

’ জাহিদ বললেন, ‘মৌসুমীর সঙ্গে পরিচয় হলো, ধীরে ধীরে আমরা ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। মাঝেমধ্যে দুষ্টমি করে বলি, আগে দেখলে তোমাকে বিয়ে করতাম। আসলে মৌসুমী খুবই মনখোলা একটি মেয়ে। আমি মৌসুমীকে একদিন বলেছি, তোমার সঙ্গে আমার একটি ছবিতে কাজ করা উচিত। আর সত্যি সত্যি সেটা হয়েও গেল।

’ মোশাররফ জানালেন, নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ যেদিন আমাকে বললেন, প্রজাপতি নামের একটা ছবি বানাবেন, এখানে থাকবেন মৌসুমী ও জাহিদ ভাই, আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। আমার কাছে মনে হয়েছিল, জীবনে অনেক নিরীক্ষাধর্মী কাজ করেছি। এটাও এক রকম হোক না। ছবিটা কী রকম। তিনজনের রসায়নটা হলো কী করে? মৌসুমী বললেন, ‘রাজ একদিন আমাকে এসে গল্পটা শোনাল।

যেহেতু জাহিদ ভাই ও মোশাররফ করিমের সঙ্গে আমি কাজ করেছি, আর তাঁদের দুজনের সঙ্গে কাজ করা মানেই হচ্ছে সারাক্ষণ হাসি, তামাশা, আনন্দ-ফুর্তি; তাই বললাম, খুব ভালো হবে। ’ জাহিদ জানালেন, ‘আমাকে যখন গল্প শোনাল, তখন আমি রাজকে বলি, আমি মৌসুমীর স্বামীর চরিত্রটিতে অভিনয় করব। এবং নিজের কিছু ভাবনার কথা ওকে বললাম। দেখলাম যে ব্যাটে-বলে মিলে গেল এবং ছবিটির কাজ শুরু হলো। ’ আর মোশাররফ জানালেন, তিনি একটি অন্য ধারার ছবিতে অভিনয় করতে চেয়েছেন।

তাই এই রসায়নের অংশ হয়েছেন। কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে মৌসুমী বললেন, ‘এই দুজন যদি একটি দৃশ্যে থাকেন, সেখানে আমার কি আর কিছু করার থাকে? দেখা গেল, পরিচালক একটি দৃশ্যে এক ধরনের সংলাপ লিখেছেন। ক্যামেরা তৈরি হওয়ার পর দুজন এমনভাবে সংলাপ আওড়াতে থাকেন আর এত বেশি তাৎক্ষণিকভাবে অভিনয় আঙ্গিক পরিবর্তন করেন যে আমি নিজেই থ হয়ে যাই। ক্যামেরাও চলতে থাকে। ফলে নিজেকে বাঁচাতে তখন ওঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেতে হয়।

এ কারণে আমার মনে হয়, নতুন যে কারও পক্ষে হুট করে তাঁদের দুজনের সঙ্গে কাজ করাটা অনেক কঠিন একটি কাজ। যেমন দেখা গেল, আমার জন্য অনেক কঠিন একটি দৃশ্য আছে এবং খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে সংলাপ দিচ্ছি, তখনই দুজন এমনভাবে অভিনয় করা শুরু করবে যে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। হেসে দিয়েছি অনেকবারই। ’ জাহিদ বললেন, ‘ছবিতে কাজ করেছি আসলে অনেক হাসি আর আনন্দের মধ্য দিয়ে। কোনো একটি দৃশ্যে কাজ করার পর মোশাররফকে বলেছি, ভাই, ঠিক আছিল তো।

নইলে বলো, আবার করি। মোশাররফ যতক্ষণ না বলেছে যে ঠিক ছিল, ততক্ষণ আমি সন্তুষ্টি পেতাম না। আসলে এই যে আমাদের একটি ইউনিটি গড়ে উঠেছে, এটা এককথায় বলব অসাধারণ। আমার একটা দুর্বলতা হচ্ছে যে আমি নাচতে পারি না। এ ছবির একটি গানে একটু সামান্য নাচের কাজ ছিল।

এখন আমার কথা হচ্ছে, ঘরের মধ্যে আমার (স্ত্রী) নাচের মানুষ আছে। তারপরও নাচটা আমি ওইরকম ভালো পারি না। এ কারণে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠানে গেলে আমি খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই। কয়েক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে জোর করে আমাকে নাচতে দেওয়া হলো। আমি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে সোজা গাড়িতে করে উঠে বাসায় চলে এলাম।

তেমনি এ ছবিতেও নাচানাচিটা করতে পারিনি। ’ মোশাররফের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, মৌসুমী যেহেতু ছোটবেলার বান্ধবী, তাই বড় হওয়ার পর সেই ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরেই এগোতে চায়। ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রজাপতিতে আমরা এমন কিছু কাজ করেছি, যে কাজগুলো আমাদের সিনেমার দর্শকদের ভালো লাগবে। ভালো লাগার সব ধরনের উপাদান দিয়েই ছবিটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আর মৌসুমী যে ইম্প্রোভাইজেশনের কথা বললেন, আসলে এই ইম্প্রোভাইজেশনগুলো কিন্তু ছবির বড় একটি উপাদান হয়ে ওঠে, যেটা আমরা দেখতে পারব প্রজাপতি ছবিতে।

’ বলছিলেন মোশাররফ। ছবি থেকে প্রত্যাশা কী? তিনজনই বললেন, ‘একটি ভালো ছবি হয়েছে এবং ছবিটি দেখার জন্য মানুষ প্রেক্ষাগৃহে ছুটবে এবং আমরা পরবর্তী সময়ে আরও ভালো ছবি আপনাদের উপহার দিতে পারব। ’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।