শার্শায় ওসিকে কষে চড় মারলেন এমপি শেখ আফিলউদ্দিন
যশোরব্যুরো
মতাসীন দলের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন শার্শা থানার ওসি এনামুল হকের গাল কষে থাপ্পড় মেরেছেন। এরপর কিল-ঘুষি মেরে তার পরনের জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার বিকালে শার্শার আফিল জুট মিলের ভেতরে। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শনিবার রাতে শার্শা উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের পারইঘুপি গ্রামে আবদুল হামিদ নামে এক যুবক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। বিএনপি তাকে যুবদলের নেতা বলে দাবি করেছে।
নিহত আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ অন্তত অর্ধডজন মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে আবদুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে রোববার শার্শা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সূত্র মতে, যশোর-১ আসন (শার্শা) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের সঙ্গে মামলা রেকর্ডের ব্যাপারে কোন পরামর্শ না করায় তিনি সংশিষ্ট থানার ওসি এনামূল হকের আচরণে ুব্ধ হন। বিকালে এমপির লোকজন ওসি এনামূল হককে আফিল জুট মিলে আসার জন্য খবর দেন।
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওসি এনামূল হক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখেন, সেখানে এমপি শেখ আফিল উদ্দিন অবস্থান করছেন। এরপর যুবদল নেতা আবদুল হামিদ হত্যার ব্যাপারে কেন মামলা নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ওসির কাছে কৈফিয়ৎ চাওয়া হয়। কিন্তু ওসির বক্তব্য মনোপূত না হওয়ায় এমপি শেখ আফিল উদ্দিন ুব্ধ হয়ে তাকে গালাগাল করেন। ওসি এনামূল হক যুগান্তরকে জানান, গালাগালের এক পর্যায়ে এমপি তাকে গালে সজোরে থাপ্পড় মারেন। এরপর এমপির লোকজন তাকে কিল-ঘুষি মারেন এবং পরনের জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলেন।
তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে শার্শা থানা থেকে চলে যাওয়ারও হুমকি দেয়া হয়। ওসি আরও জানান, ঘটনাস্থলে দারোগা আসাদ না থাকলে তাকে আরও হেনস্থা করা হতো। দারোগা আসাদ এক পর্যায়ে কৌশলে ওসিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। ওসি জানান, ঘটনাটি ঊধ্বর্তন কর্তৃপকে অবহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এমপি শেখ আফিল উদ্দিন যুগান্তরের কাছে প্রশ্ন রেখে জানতে চান, ওসিকে তিনি থাপ্পড় মেরেছেন এমন কথা সাংবাদিকরা বিশ্বাস করেন কিনা? সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ওসি বাদী হয়ে মারধরের অভিযোগ এনে সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনসহ চারজনের বিরুদ্ধে শার্শা থানায় জিডি করেছেন।
এদিকে থানা আওয়ামী লীগ এমপির সঙ্গে ওসির অশালীন আচরণে প্রতিবাদ ও তার অপসারণের দাবিতে আজ শার্শা থানা ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শার্শা থানার ওসি এনামুল হক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে বলেন, সমপ্রতি শার্শার দুটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের (রতন ও মজু) ক্লু উদ্ঘাটন করেছে থানা পুলিশ। এ দুটি মামলায় গ্রেফতার আসামিরা আদালতে দাঁড়িয়ে দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। মামলা দুটি থেকে খুনিদের রেহাই দিতে আমাকে ২০ লাখ টাকা করে অফার করা হয়েছিল। কিন্তু আমি এই অফার ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।
হত্যাকাণ্ড দুটির সঙ্গে জড়িতরা আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসী হওয়ায় সংসদ সদস্য আমার ওপর চটেছেন। সর্বশেষ যুবদল নেতা আব্দুল হামিদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীদের নামে মামলা হওয়ায় সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন ওসিকে ডেকে নিয়ে মারপিট করেন বলে ওসি অভিযোগ করেন।
এদিকে ওসির সঙ্গে গতকাল টেলিফোনে কথা বলেছেন আইজিপি নূর মোহাম্মদ ও খুলনার ডিআইজি হেমায়েত হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যশোরের পুলিশ সুপার দিদার আহমেদ শার্শা গিয়ে ঘটনার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এ ব্যাপারে আইজিপি কী বলেছেন ওসি তা জানাতে অস্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন টেলিফোনে ডেকে নিয়ে শার্শা থানার ওসি এনামুল হককে মারপিট করেন। এ খবর গতকাল বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়। এতে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্ট মহলে। ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয় জনমনে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।