ভালবািস বাংলা নাটক...............
একটি
ধারাবাহিকের চরিত্রের পরিণতি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে কী রকম উন্মাদনা তৈরি
হতে পারে তার নমুনা দেখা গেছে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম দিকের দুটি ধারাবাহিক
নাটকে। 'এইসব দিনরাত্রি'র টুনির মৃত্যুতে শোকাহত দর্শক মিছিল করেছে,
'কোথাও কেউ নেই' সিরিজের বাকের ভাইয়ের মুক্তি দাবি করে মিটিং-মিছিল হয়েছে,
দেয়ালে দেয়ালে লেগেছে পোস্টার। লাভ হয়নি। ফাঁসির দড়িতেই ঝুলতে হয়েছে বাকের
ভাইকে। আচ্ছা, বাকের ভাই যদি বেঁচে যেত, তাহলে তার অবস্থা কী হতো।
তারও তো
কিছু কথা বলার ছিল নিশ্চয়ই? আর মুনা, সে কী করছে? তার কি বিয়ে হয়েছে? নাকি
বাকের ভাইয়ের শোকে এখনো বিয়ে করেনি? আর আজ 'রবিবার' নাটকের সে
দাড়ি-গোঁফওয়ালা ঠাণ্ডা মেজাজের বড় চাচা কেমন আছেন? কী করছেন তিনি? এ রকম
নানা প্রশ্ন এসে জড়ো হয় হিমুর মাথায়। শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ
না হলেও ঘামে ভিজছেন তিনি। গরমের তাপে রাস্তার পিচ নরম হয়ে আছে। খালি পায়ে
হাঁটা মুশকিল। আঠার মতো কালো পিচ পায়ে লেগে যাচ্ছে।
মুখভর্তি দাড়ি। গায়ে
হলদে খাদি পাঞ্জাবি। লোকজন কেমন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে এখন
আর মাথা ঘামায় না হিমু। উৎসুক জনতার দিকে তাকিয়ে নিজেও মাঝেমধ্যে চোখ-মুখ
বাঁকা করে ভেংচি কাটে।
বাকের ভাই, বড় চাচা, মিসির আলীকে খুঁজে বের করতে
হবে। মুনার কাছেও যাওয়া দরকার। টিএসসিতে রূপার সঙ্গে দেখা করেই অন্যদের
খুঁজতে বের হতে হবে। এমনটা মনস্থির করে হাঁটতে শুরু করে হিমু। আবারও মাথায়
চলে আসে বড় চাচা, মিসির আলী ও বাকের ভাইয়ের প্রসঙ্গ।
কিছু দূর যাওয়ার পরই
কেউ একজন জোরে 'কাট' বলে চিৎকার করে ওঠে। হিমু হাঁটতে থাকে, দ্রুত হাঁটে।
পেছন থেকে একজন চেঁচিয়ে ওঠে, 'মোশাররফ ভাই, দাঁড়ান, আর যেতে হবে না। ' এবার
দাঁড়ায় হিমু। নিজের মধ্যে ফিরে আসেন হিমুরূপী মোশাররফ করিম।
দ্রুত একজোড়া
স্যান্ডেল আনে প্রোডাকশন বয়। স্যান্ডেল পায়ে দিতে দিতে মোশাররফ বলেন,
'মানুষ যে কেন হিমু হতে চায়, বুঝি না। হিমু হওয়া যে কী কঠিন কাজ, হাড়ে
হাড়ে টের পাচ্ছি। একগাদা দাড়ি, পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়ানো_এটা কল্পনাই করতে
পারি না। '
মোশাররফ করিমের কাছে হিমু হওয়ার কাজটা কঠিন মনে হলেও এ দেশের অসংখ্য
যুবকের প্রিয় চরিত্র হিমু।
তারা হিমু হতে চায়। একটা সময় মোশাররফ নিজেও
হিমু হতে চেয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্য, 'একটা বয়স থাকে পাগলামি করার। হুমায়ূন
আহমেদের হিমু সিরিজের বই পড়ে সে পাগলামিটা আরো বেশি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন।
এখন তা টের পাচ্ছি। '
হিমুর কল্যাণেই এবার হিমুর সঙ্গে টিভি পর্দায় হাজির হচ্ছেন বাকের ভাই,
মুনা, বড় চাচা ও মিসির আলী। হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস থেকে
হিমু, বড় চাচা, মিসির আলী ও বাকের ভাই চরিত্রগুলো নিয়ে রেদওয়ান রনি
নির্মাণ করছেন সাত পর্বের নাটক। হিমুকে ঘিরেই এ চরিত্রগুলো হাজির হবে
নাটকে।
রূপার সঙ্গে দেখা করার পর্ব শেষ।
হিমুকে এখন যেতে হবে বাকের ভাই ও মিসির
আলীর কাছে। মহাখালীর কলেরা হাসপাতালের ভেতর একটা সরু গলি। সেখানেই দেখা হয়
বাকের ভাইয়ের সঙ্গে। সেই মোটরসাইকেল, হাতে একটা চেইন, চেনা কালো চশমা,
চুল-দাড়ি সবই তো ঠিক আছে। 'কি মিয়া, কী দেখছ।
চিনতে পারছ না?' বাকের
ভাইরূপী আসাদুজ্জামান নূরের কথা শুনে মুখ খোলেন মোশাররফ_'যে বাকের ভাই
ছিলেন স্বপ্নের নায়ক, আজ তাঁরই সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি। অভিনয় করছি। এ বিষয়টা
ভাবতেই শরীরে কেমন অনুভূতি হয়। ' করিম নিজেও বাকের ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে
মিছিল করেছিলেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, 'আমি তো নিজেও কখনো ভাবিনি আবারও
বাকের ভাইরূপে নাটকে আসতে পারব।
' চলতে থাকে হিমু আর বাকের ভাইয়ের গল্প।
কিছুক্ষণ পরই মিসির আলী হাজির। মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করছেন আশীষ
খন্দকার। তিনি এর আগেও এ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন 'নিষাদ' নাটকে। হিমুর
'দ্বিতীয় প্রহর' বইতে হিমু ও মিসির আলীর দেখা হয়েছিল।
এ নাটকে চরিত্র দুটি
দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হলেন। রাত বাড়ে। হিমু, মিসির আলী আর বাকের ভাই
চরিত্রের রহস্যও বাড়তে থাকে। এ বিশ্বের নানা রহস্যময় বিষয় নিয়েই কথা চলতে
থাকে তাঁদের। কিন্তু বড় চাচা কোথায়? নাটকে বড় চাচার ভূমিকায় আজ রবিবারের
আলী যাকেরকেই দেখা যাবে।
মুনা চরিত্রেও সুবর্ণা মুস্তাফাই আছেন। 'বড় চাচা
একটু অন্য ধাঁচের মানুষ। রাতবিরাতে নয়, দিনের বেলায় দেখা করতে হবে তাঁর
সঙ্গে। কী বলেন, রনি?' কথাটা বলেই হাসলেন মোশাররফ। দাড়ি-গোঁফ খুলছেন তিনি।
মিসির আলী আর বাকের ভাইও বাস্তবজীবনে ফিরছেন। পরিচালকের যাওয়ার উপায় নেই।
পরদিনের শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বললেন, 'নির্মাতা হিসেবে যখন কাজ
শুরু করি তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল হিমুকে নিয়ে কাজ করব। কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল
না।
এবার দেশ টিভি সুযোগটা করে দিয়েছে। তাই শুধু হিমু নয়, হুমায়ূন আহমেদের
অন্য জনপ্রিয় চরিত্রগুলোকেও এক সুতায় বেঁধে নেওয়ার একটা চেষ্টা করেছি। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।