আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেরদৌসির শাহনামা: ইসলামপূর্ব পারস্যের লোককথা এবং ইতিহাস-১মপর্ব

নর্দমার রাত, হিরন্ময় তাঁত
০১. আমরা যখন ইশ্কুলে পড়তাম তখন চয়নিকা বা এ জাতীয় নামে একটি গল্পবই আমাদের পাঠ্য তালিকায় থাকতো। ওখানেও দেশ বিদেশের কিছু লোককথা এবং উপকথা আমরা শৈশবে পড়ি। তার মধ্যে একটি ছিলো সোহরাব-রোস্তমের কাহিনি। জেনেছিলাম এটি ইরানি কবি ফেরদৌসি রচিত মহাকাব্য শাহনামা থেকে নেয় একটা কাহিনি। তার অনেকবছর পরে শাহনামার ধারাবাহিক কাহিনিগুলি পড়েছি শৈশবের কৌতূহল থেকে।

০২. শাহনামা হলো দরবারী সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত একটি মহাকাব্য। এটিতে প্রায় ৫০,০০০ দ্বিপদী শ্লোক রয়েছে। যা বর্ণনা করে পারস্যের ইসলামপূর্ব দীর্ঘকালের লোককথা ও ইতিহাস সমূহ। খুরাসান এর জমিদারদের এক পরিবারে জন্মগ্রহণকারি ফেরদৌসি তার শাহনামা লেখা শেষ করেন করেন ১০১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গজনির সুলতান মাহমুদের পৃষ্ঠপোষকতার আশ্বাসে। এবং এই কাব্য মাহমুদকে উৎসর্গ করা হয়।

কিন্তু সুলতান মাহমুদ তার প্রতিশ্রুতি রাখেন নি। শাহনামার উৎস ছিলো জনশ্রুতি সমূহ, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম শতকে সাসানীয় যুগের শেষভাগে পারস্যের পৌরাণিক অতীত এবং ইতিহাস সম্বলিত সরকারি খুদাইনামা, ১০ম শতকের মধ্যভাগে রচিত ‘শাহনামা-ই-আবু মনসুরি’ নামে পরিচিত আবু মনসুরের গ্রন্থটি, কবি দাকিকি রচিত কয়েকহাজার শ্লোক; যিনি তার গ্রন্থটি সম্পন্ন করার আগেই নিহত হন ১০ম শতকের শেষদিকে। ০৩. শাহনামার শুরু হয় পারদাতেস রাজবংশের মাধ্যমে। প্রথম চরিত্র হলেন কিয়ুমার্স; তিনি বাস করেন পর্বতমালায়, শাসন করেন মানুষ, বন্য, পোষা সব প্রাণীকে। সাহস এবং পুরুষত্বসূচক চিতাবাঘের চামড়ার পোষাক পরিহিত কিয়ুমার্স প্রতীকীভাবে প্রকাশ করেন মানব-বিবর্তনের আদি পর্বতটিকে, যেখানে এক গুহাবাসী তার সাহসের মাধ্যমে হয়ে ওঠে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।

তার রাজ-প্রাঙ্গণে ধর্মকে উপস্থাপন করা হয় সেইসব মানুষের মাঝে যারা বিভিন্ন স্থান হতে আসে আত্মিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধসমূহের অনুসন্ধানে। হুশাঙ ছিলেন কিয়ুমার্স এর পৌত্র এবং সাত রাজ্যের রাজা সিয়ামাক এর পুত্র। হুশাঙ জড়িত ছিলেন মর্তলোকে সভ্যতার বিকাশের সাথে। তার অর্জনসমূহের মধ্যে ছিল আগুনের আবিষ্কার, পাথর থেকে লোহার পৃথকীকরণ, কর্মকারদের শিল্পকৌশল, যন্ত্রপাতি এবং অস্ত্রশস্ত্র এবং বীজবপনসহ ভূমিতে সেচ ও চাষাবাদ। অন্যকথায়, এই যুগটিকে দেয়া হয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কলাকৌশল এবং দতা আবিষ্কারের কৃতিত্ব্।

হুশাঙ এর পুত্র তাহমুরাসকে এমন একজন রূপে বর্ণনা করা হয় যিনি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করেন অপদেবতাদেরকে। ০৪. জামশেদের রাজত্বকাল ছিলো এক আবিষ্কারের যুগ, অংশত যুদ্ধে অধিকতর সূক্ষ্ম অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজনের তাগিদে। রাজা এবং রাজত্বকে শত্রুদের হাত থেকে রা করার জন্য সৃষ্টি করা হল একটি যোদ্ধাশ্রেণী, মানুষের সামাজিক বিকাশের এক আদি পর্যায়ে যা চিহ্নিত করল একটি দৃঢ় শ্রেণীকাঠামোর সূত্রপাতকে। এখানে ছিল পুরোহিতশ্রেণী, ছিল ক্ষুদ্র চাষী, কৃষক এবং কারিগরগণ। প্রতিটি দলকে নিযুক্ত করা হত বিশেষভাবে নির্বাচিত কাজ সম্পাদনের উদ্দেশে, এবং এমনকি দানবদেরকে দেয়া হতো ইট তৈরি করার জন্য পানি এবং মাটি মেশাবার কাজ।

পাথর এবং জিপসাম ব্যবহার করে তারা নির্মাণ করল স্নানাগার এবং বিশাল আকৃতির রাজপ্রসাদসমূহ। জামশেদ এর সময় যুক্ত হলো একটি নতুন এবং রাজকীয় প্রতীক: ফার-ই-ইজাদি বা দৈবগৌরব, যা তাকে দিলো তার বিখ্যাত সিংহাসন, যেটির উপর তিনি বসেছিলেন উজ্জ্বল সূর্যের মতো। এই ঘটনাটিকে উপলক্ষ করে বছরের প্রথমদিন নওরোজ উৎসবের সূত্রপাত ঘটলো। এইদিন সবাই জড়ো হতো রাজার সিংহাসনের চারদিকে, তার প্রতি প্রদান করত আনুগত্য এবং সম্মান জানাতো মদ, সংগীত ও নৃত্যের মাধ্যমে। ০৫. জামশেদ এর রাজত্বের ৩০০ বছরের শান্তি ও সম্প্রীতি ব্যাহত হলো মানুষের লোভের কারণে।

জামশেদ তার চাইতে শ্রেষ্ঠতর শক্তিসমূহে বিশ্বাস স্থাপন থেকে বিরত থাকলেন এবং নিজেকে একমাত্র ও চূড়ান্ত শাসক হিসেবে গণ্য করতে লাগলেন। তার এই ঘোষণা ভাবিয়ে তুলল পুরোহিতদেরকে এবং অতি শীঘ্রই তিনি তার দৈবগৌরব হারালেন। তার সেনাদল তাকে পরিত্যাগ করল এবং জগৎ নিপতিত হল অনিশ্চয়তার মাঝে। তখন দৃষ্টপটে চলে আসে জাহ্হাক নামক এক বীর, যে তার অজ্ঞতা ও লোভের বশে আত্মা বিক্রি করে দিয়েছিল শয়তানের কাছে। এইখানে আমাদের মনে পড়ে ফাউস্তকে যে শয়তান মেফিস্তোফেলিসের কাছে আত্মা বিক্রি করে দিয়েছিলো।

জাহাক ছিলো আরবের এক সম্মানিত লোকের পুত্র, একজন সত্যিকার বীর, যিনি তার জীবনকালের বেশিরভাগ সময় আসীন ছিলেন ঘোড়ার পৃষ্ঠে। কিন্তু যৌবনসুলভ সারল্য তাকে ঠেলে দিল শয়তানের বাহুবন্ধনে। শয়তান জাহ্হাকের অনুরাগ অর্জন করার জন্য ব্যবহার করে তার প্ররোচনা এবং জাদু, অবশেষে সফল হয়। শয়তান যখন জাহাককে আলিঙ্গন করলো তখন তার কাঁধ থেকে জেগে উঠলো দুটি সাপ। এবং জাহাকের পক্ষে সাপদুটিকে দূর করাটাই কেবল অসম্ভব নয়, উপরন্তু প্রতিদিন এদেরকে মানুষের ছিন্ন মাথা খাবার হিশেবে দিতে হয়।

সাপদুটির মাথা কেটে জাহাক আপ্রাণ চেষ্টা করেন এদেরকে হত্যা করতে, কিন্তু প্রতিবার গজিয়ে ওঠে নতুন মাথা। ইতোমধ্যে রাজমতা, রাজমুকুট এবং সিংহাসন হারিয়ে ফেলেছিলেন জামশেদ। তিনি তার লোকজনকে তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন জাহাক এবং শয়তানের বাহুর নাগালে, যখন তারা ছিল একজন নতুন শাসকের সন্ধানে। একজন আরব হওয়া সত্ত্বেও জাহাককে নতুন রাজা হিসেবে সম্ভাষণ জানানো হল। অতঃপর তিনি বিয়ে করলেন জামশেদের দুই কন্যা শেহেরনাজ এবং আর্নাভাজকে।

তার শাসন টিকে থাকলো একহাজার বছর ধরে, যে সময়টিতে সাম্রাজ্যটির উপর নেমে এল অন্ধকার, কারণ সাপগুলোর উদ্দেশে প্রতিদিন উৎসর্গ করা হতো যুবকদেরকে। জাহাক স্বপ্নে জেনে গেলেন তার মৃত্যুকে, যাতে সাইপ্রেস গাছের মতো দীর্ঘ এক বীর আবির্ভূত হলো ষাঁড়ের মাথাসদৃশ এক রাজদণ্ড নিয়ে। এই যুবক তাকে পরাস্ত করলো, তাকে বেঁধে ফেললো এবং তাকে নিক্ষেপ করলো একটি কূয়ার মধ্যে। জাহাককে পুরোহিত বলেছিলেন, স্বপ্নটি সত্যি হবে। ফেরাইদুন নামে চাঁদের সমান উঁচু এক বীর কোমরবন্ধ, মুকুট, সিংহাসনের রাজকীয় সম্মানের সন্ধানে নামবে।

০৬. যথাসময়ে ফেরাইদুন তাইগ্রিস নদী পার হয়ে সবলে জাহাককে পরাস্ত এবং হত্যা করেন। এবং তার দুইপত্নিকে রানী করে করে রাজ্যশাসন করেন। পাঁচশো বছরব্যাপী ফেরাইদুনের দীর্ঘ শাসনকাল নির্দেশ করে উন্নতি এবং ঐক্যের এক কাল, এবং যা নির্দেশ করে তার রাজত্ব ও তার জনতার বিরাজমান শক্তিকে। তারপরও শুরু হলো শুভ এবং অশুভর সংঘাত, যখন ফেরাইদুন তার সাম্রাজ্যকে ভাগ করে দিলেন তার তিনপুত্রের মধ্যে এবং তাদের মধ্যে সূত্রপাত ঘটলো বিদ্বেষের। সালম এবং তুর নামে দুই ভাইয়ের জন্ম হয়েছিলো শোহেরনাজের গর্ভে, অন্যদিকে আইরাজ ছিল তার বোন আর্নাভাজের পুত্র।

ফেরাইদুন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সালমকে দিলেন সাম্রাজ্যের পশ্চিমাংশ, এবং তার দ্বিতীয় পুত্র তুরকে দেয়া হল তুরান। কিন্তু সাম্রাজ্যের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইরান এবং ফেরাইদুনের স্বর্ণ-সিংহাসন পেলেন তাদের সৎভাই আইরাজ। যদিও কনিষ্ঠতম, তবু তিনি নিজেকে প্রমাণ করলেন তিনজনের মধ্যে সবচাইতে জ্ঞানী এবং সাহসীরূপে। রাজ্যভাগের ব্যাপারে সালম এর অসন্তোষ এবং ক্রোধ শীঘ্রই হয়ে উঠলো অনিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং তুর এর সাহায্য নিয়ে তিনি হত্যা করলেন সৎভাই আইরাজকে। ভাই কর্তৃক ভাইয়ের হত্যাকে চিহ্নিত করা হল শয়তানের বিজয় এবং পারস্যপুরাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বের সূত্রপাত রূপে।

ইরান এবং তুরান রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘ এবং নিরবচ্ছিন্ন সংঘাত, যা সূচিত হল রাজা মানুচিহ্ শাসন দ্বারা, যিনি ছিলেন আইরাজের পৌত্র। অসংখ্য লড়াইয়ের কারণ ছিল দুটি রাজ্যের মধ্যে শত্রুতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা, উভয় পই উপস্থাপন করল কিছু বিখ্যাত বীর, কিন্তু ইরানিরা সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করলো তুরানিদের। ০৭. রুস্তম তার সারাটা জীবন কাটিয়ে দেন তুরানের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ইরানের সীমানা রক্ষা করে, যেমনটি করেছিলেন তার পিতা জাল এবং তার পিতামহ সাম। রুস্তম খ্যাতি পেলেন এমন একটি সময়ে যখন ভূমি এবং রাজমুকুটের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ইরান এবং তুরান নিরবচ্ছিন্ন সংঘাতে লিপ্ত। সব ইরানি বীরকে বর্ণনা করা হল সাহসী, পুণ্যবান এবং রাজাদের রাজার সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত বলে, যার জন্য তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিত এবং তাদের প্রিয়তম কাউকে উৎসর্গ করতে পারত।

এটি বিশেষভাবে সত্য রুস্তমের ক্ষেত্রে , যা দেখা যায় তার পুত্র সোহরাব এর কিংবদন্তিতে। রুস্তম হয়ে উঠেন পারস্যপুরাণের অন্যতম শ্রেষ্ঠবীর, যিনি ছিলেন দৈহিকশক্তি, আত্মিক শুদ্ধতার এক প্রতীক। রোস্তমের পিতা জাল বর্ণিত হয় বিশদভাবে এবং তার জন্ম ও বিকাশকে সংশ্লিষ্ট করা হয় কিংবদন্তির পাখি সিমুর্ঘ, এই পাখিটি রুস্তমের জীবনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিপদের সময় এটি তাকে একাধিক বার রা করে। দীর্ঘকাল কোনো সন্তানের জন্মের প্রতীক্ষায় থাকা তার পিতা-মাতার গৃহে যখন জাল-এর জন্ম হলো, তার পিতার আনন্দ পরিণত হল দুঃখ এবং চরম অসহায়ত্বে, যখন তিনি দেখলেন নবজাতকটিকে। শিশুটির শরীরকে বর্ণনা করা হলো রূপার মতো শুভ্র বলে, তার মুখমণ্ডল ছিলো স্বর্গীয়, কিন্তু তার চুল ছিলো বৃদ্ধের চুলের মতো শাদা।

সাম বিরল বৈশিষ্ট্যময় উত্তরাধিকারীকে দেখে এতোটাই বিপন্ন বোধ করলেন যে, তিনি জগতের প্রতি নিরাসক্ত হয়ে পড়লেন। সাম অবশেষে তার শিশুকে ফেলে আসেন আলবুর্জ পর্বতমালায়, যা সূর্যের কাছাকাছি এবং মানুষ থেকে অনেক দূরে। শিশুটি বেঁচে গেলো সিমুর্ঘ নামক একটি পাখি কর্তৃক, যখন পাখিটি আলবুর্জ পর্বতমালার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল শাবকের জন্য খাদ্যের সন্ধানে। সে পরিত্যক্ত শিশুটিকে নেয় তার ছোটো শাবকের খাবার হিসেবে, কিন্তু একটি কন্ঠস্বর তাকে বলল যে, ‘মায়ের স্তন্য পানের যোগ্য এই শিশুটির যত্ন নাও, যেন এই বীজ থেকে বেড়ে ওঠে একটি মানুষ। এভাবে জাল বড় হতে থাকলো সিমুর্ঘ এবং তার পরিবারের সাথে।

ইতোমধ্যে সাম-এর রাজপ্রাঙ্গণে ছড়িয়ে পড়লো জালের বেঁচে থাকার খবর। এবং যখন সাম তার পণ্ডিতবর্গকে তার স্বপ্ন সম্বন্ধে অবহিত করলেন যেই স্বপ্নে এক ঘোরসওয়ার তাকে তার পুত্র জীবিত থাকার কথা বলল, তারা তাকে সেখানে যেতে ও তার পুত্রকে উদ্ধার করতে অনুরোধ করলেন। পর্বতের শিখরে উঠে সাম ঈশ্বরের কাছে মা চেয়ে এবং তার পরিত্যক্ত শিশুকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করলেন, যাকে তিনি আর শয়তান আহরিমানের পুত্র বলে ভাবলেন না। উপর থেকে পর্যবেণ করে ‘সিমুর্ঘ’ তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারল কেনো সাম পর্বতে এসেছেন। সে জালকে অনুরোধ করলো তার পিতার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য, কারণ তার বাসস্থানটি শ্রেষ্ঠতম বীরের পুত্রের জন্য এখন আর উপযুক্ত নয়, সেই পুত্র যে একদিন রাজা হবে।

বালকবীরটি তার পিতার কাছে ফেরার পূর্বে সিমুর্ঘপাখি তাকে দিল তার একটি পালক যা জ্বলে উঠবে বিপদ বা যন্ত্রণার কালে, এবং সে তার কাছে প্রতিজ্ঞা করল যে, সে তৎক্ষণাৎ তার কাছে এসে হাজির হবে। জাল ফিরে এলেন জাবুলিস্তান, তার পিতার রাজত্বে। এর কিছুকাল পর তার সাথে দেখা হল কাবুলের রাজকন্যা রুদারের এবং তিনি তাকে বিয়ে করলেন, এবং তাদের গৃহে জন্ম হল রুস্তম-এর। ০৮. উদ্ঘাটিত হল সিমুর্ঘপাখির জাদুক্ষমতা। রুদারে প্রসববেদনা হতে বাঁচানোর জন্য মরিয়া প্রচেষ্টায় সন্তানটির জন্মের সময় জাল জ্বালিয়ে দিলেন সিমুর্ঘ এর পালকটি।

এক অন্ধকার আকাশ হতে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে এলো জাদুর পাখিটি এবং শান্তভাবে জালকে বলল যে, তিনি শীঘ্রই এমন এক সন্তানের পিতা হবেন, যার থাকবে সাইপ্রেস গাছের মতো উচ্চতা এবং হাতির সমান শক্তি, সেই শিশুটির কোনো স্বাভাবিক জন্ম হবে না, শিশুটিকে বের করতে হবে মায়ের পেট কেটে। সিমুর্ঘ এর দেয়া ওষুধের ক্রিয়ায় এবং তার পালকের মালিশের ফলে রুদারে অস্ত্রপাচারের ব্যথা থেকে পুরোপুরি নিরাময় প্রাপ্ত হল। শিশুটির নাম রাখা হলো রুস্তম, যার সম্বন্ধে বলা হয়ে থাকে যে, যখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১ দিন তখন তাকে মনে হতো এক বছর বয়সী। রুস্তম পরিণত হলেন এমন শক্তি ও উচ্চতা সম্পন্ন এক সিংহসদৃশ মানুষে, যে তিনি সহজেই একটি গর্জনরত হাতিকে মোকাবেলা এবং তার রাজদণ্ডের সাহায্যে একে তাৎক্ষণিকভাবে বধ করতে পারতেন। রুস্তমের বীরত্বসূচক কাজ এবং লড়াই অসংখ্য, এবং তার সাহসিকতা ও মতা আরো কার্যকরী হল তার অসাধারণ সাহসী ঘোড়া, রাখস্ এর কারণে।

তারা একত্রে সম্পন্ন করেছে দুঃসাহসিক অভিযানসমূহ। তারা সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করে এক সিংহকে, অতিক্রম করে একটি মরুভূমি, মুখোমুখি হয় ড্রাগনের, হত্যা করে এক ডাইনীকে এবং অবশেষে হত্যা করে দিভ নামক শ্বেতদানবদের, যারা আটকে রেখেছে রাজাদের রাজা কেক্যাভাসকে। অন্যান্য বীরদের একটি সেনাদলের নেতৃত্ব দিয়ে তারা ফিরিয়ে আনলেন রাজক্ষমতা এবং কেক্যাভাস বিজয়ীর বেশে ফিরে এলেন ইরানে। ইতোমধ্যে তুরানের রাজা আফ্রাসিয়াব-এর উস্কানিতে ইরান এবং তুরানের মধ্যে শত্রুতা চলতে থাকলো, তিনি ইরান আক্রমণের প্রতিটি সুযোগ গ্রহণ করতে থাকলেন। কিন্তু রুস্তমের সাহসিকতা এবং কে ক্যাভাসের প্রতি তার একনিষ্ঠতার কারণে ইরানি সেনাদল সচরাচর সেইসব আক্রমণ ঠেকাতে সমর্থ হল।

তবু ইরান এবং কেক্যাভাসের প্রতি এই একনিষ্ঠতার কারণেই রুস্তম ধরা পড়লেন আফ্রাসিয়াবের ফাঁদে। এগুলোর একটি তাকে বাধ্য করলো পুত্রকে হত্যা করতে। শেষপর্ব -------------------------------------------------------------------------- সূত্র: ১. World of myths by Felipe Fernández-Armesto ২. অন্তর্জাল ------------------------------------------------------------------------------- উৎসর্গ: দীপান্বিতা, কল্যাণীয়া
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।