আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চেতনআলীর চেতন যন্ত্রটা যেভাবে অচেতন হয়

সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে

সংসার ঠিকঠাক চালাতে হলে একটা যন্ত্র দরকার। মুরব্বীরা বলেন সংসারধর্ম বড় ধর্ম। যারা এই ধর্ম পালনে ব্যর্থ তাদের জীবন মিছে। তাই একটা যন্ত্র দরকার । কেউ কেউ এটাকে বলেন চেতন যন্ত্র।

আজকে এমনই এক চেতন যন্ত্রের অচেতন হয়ে যাওয়া অর্থ্যাৎ যন্ত্রটা কিভাবে বিকল হয়ে যায় তার গল্প শোনাব। চেতন আলী সকলের কাছে বলে বেড়ায় যে তার একটা চেতন যন্ত্র আছে। মানুষের চোখছানা বড়া হয়ে যায়। সমীহ করে চলে। বলে এই না হলে বাপের ব্যাটা।

চেতন আলী খুশিতে টগবগ টগবগ করে। তার চেতনার গল্প মানুষের মুখে মুখে। প্রশংসায় সে দিশেহারা। চেতন আলীর এমনি করে করে একদিন সংসারে আর মন বসেনা। সংসারের কাজ না করে শুধু এদিক সেদিক ঘোরে।

ঘরওয়ালী ভাবে মানুষটার কি হল? কেমন উদাসীন উদাসীন ভাব!তার দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। একদিন পথে চেতন আলীর তেল ব্যবসায়ীদের সাথে পরিচয় হয়ে যায়। সে তার মনের অবস্থা তেল ব্যবসায়ীদের কাছে খুলে বলে। তেল্লারা তাকে তেলাতে থাকে। -আপনারতো দেখি মাশাআল্লাহ দশ আঙ্গুল কপাল।

আপনার কপালে এত সুন্দর চেতনার তিলক থাকতে কোন সমস্যাই সমস্যা না। আপনার কোন চিন্তা নাই । -এই লন এক শিশি। এটা মালিশ করেন। আর আয়েশ করেন....আর আয়েশ করেন।

যখন আয়েশ করতে যাবেন তখন একটু সাবধান থাকবেন। লোকে আপনার খায়েশটাকে সুন্দরভাবে নেবে না। নানা রকম কথা বলবে। আর তখনই আপনি দেরি না করে চেতন কাঠিটা নাড়া দিবেন। দেখবেন সব চুপ হয়ে যাবে।

মানুষ আপনার আয়েশের কথা ভুইলা থাকব। চেতন আলী শরীর ঝাড়া দিয়ে উঠে। উঠবেইতো। যার এত চেতন শক্তি তার কি আর ছোট একটা সংসারে পইড়া থাকলে চলে। গড়ে তোলে হেরেমখানা।

সংসার?আরে ধ্যাৎ। ওসবে আর মন বসে না। তার এখন আয়েশ করার খায়েশ। ওদিকে সংসারে বিরাট অশান্তি। ঘরওয়ালী ছেলেপুলে নিয়ে যারপর নাই কষ্টে দিনাতিপাত করে।

মানুষ দেখে আফসুস করে। বলে আহা! কি সুন্দর সোনার সংসার কি হইয়া গেল। চেতন আলী বাহিরওয়ালীদের পেছনে অবিরাম ছুটতে থাকে। রাজ্যের সকল সুন্দরীদেরকে সে জোর করে হেরেমখানায় নিয়ে আসে। তার কিছুটা বদনাম হয় বটে।

কিন্ত্ সে সবাইকে চেতনার তিলক দেখায়। এভাবে চলছে। মানুষ ক্ষুব্ধ হয়তো আছে চেতনার তিলক! আয়েশ চলছে................. আয়েশ চলছে..............তবুও খায়েশ শেষ হয়না। চেতন যন্ত্রটা দূর্বল হলেই তেল ব্যবসায়ীদের কাছে দৌড় দেয়। তারা চেতন আলীকে অভয় দেয়।

বলে- -ধূর মিয়া!খামাখা চিন্তা করেন। আমাদের কাছে চেতন তেলের কোন অভাব আছে নাকি?এই দেখেন কত রকমের তেল। শান্ডার তেল ,জোঁকের তেল......... হাজারটা তেলের শিশি দেখায়। আর বলে এসব তেল মালিশ করতে থাকেন। খুশিতে চিকন আলী টগবগ করে উঠে।

তেল ব্যবসায়ীরা বলে ক্যারি অন..ক্যারি অন। উই উইশ ইউর এনজয়েবল আয়েশ.. চেতন আলী সংসার করবে না বলে সংসারটা আহা !সোনার সংসারটা ভেঙ্গে তছনছ করে। সংসারের সবকিছু লুটপাট করে । দু'হাটে হেরমখানায় খরচ করে। একসময় একটা ঝড় উঠে।

অবস্থা বেগতিক দেখে তেল ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। হেরেমখানার বাহিরওয়ালীরা তাকে ঝেকে ধরে। চেতন আলীর উপর ক্ষেপে উঠে। চেতন যন্ত্রটা আর কাজ করেনা। সবাই মিলে চেতন আলীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে।

চেতন আলীর মৃত্যু ঘটে। তারপর আসে একদল ডাক্তার । এসকল ডাক্তার সবসময় দুর্ঘটনার পরেই আসে। তারা অসুখের আগে না দিতে পারে সতর্কবাণী না পারে অসুস্থ্যরোগীর চিকিৎসা করতে। তারা মানুষ মারা গেলে শুধু কারণটা বলতে পারে ।

অবশ্য তখন এতে কারো কিছু যায় আসে না। চেতন আলীর বেলায়ও তাই হলো। তারা তার পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট দেয়। তাতে লেখা ছিল -অমিতব্যয়ির মত ,কুপাত্রে, যেখানে সেখানে চেতন অঙ্গের ব্যবহার এবং চেতন অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর তেল অনবরত মালিশ করার ফলে চেতন অঙ্গটি অকার্যকর অথ্যাৎ অচেতন হয়ে পড়ে। তারপর মানুষ চেতন আলীর শোক পালন করে।

মানুষ বলতে থাকে চেতন আলীর সুন্দর বউয়ের কথা। সুন্দর সংসারের কথা। ছেলেপুলের কথা। তারা আক্ষেপ করে বলে আহা! কি সংসার কি হইয়া গেল! (দুর্বল রুপক গল্প )

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.