salehin.arshady@gmail.com
আরাফাত, শ্যামলা করে সেই ছেলে টা...বয়সের তুলনায় আমাদের থেকে লম্বা, মাথায় এক ঝাঁক কোকড়ানো চুল, চোখে মুখে গ্রাম্য সারল্য আর বাবা-মা’র এর বুক স্বপ্ন নিয়ে হোস্টেলে আসল। এই সহজ সরল চরিত্রের কারনে তাকে কম কষ্ট আর যন্ত্রনা সহ্য করে হয়নি। তার কথা-বার্তায় হাল্কা আঞ্চলিক টান চলে আসত বলে প্রথম প্রথম আমরা অমানুষের মত তাকে ক্ষেপাতাম। ক্ষেত বলে টিজ করতাম। সবসময় তাকে ইগনোর করার চেষ্টা করতাম।
কিন্তু সে কখনোই তার কষ্ট গুলোকে আমাদের সামনে প্রকাশ করে নি। মুখ বুজেঁ আমাদের সব অত্যাচাত সে সহ্য করে গেছে। আমরা যত তাকে এভয়েড করতাম সে ততই আমাদের আপন ভেবে কাছে চলে আসত। সেই সারল্য দিয়েই সে আমাদের মন জয় করে নিল। আমাদের বুঝিয়ে দিল, এই ছেলে অন্য ধাতুতে গড়া।
একে রাগানো সম্ভব না। আমাদের অনুতপ্ত হতে বাধ্য করল। হয়ে গেল আমাদের কাছের মানুষদের একজন।
মনে পড়ে তোর-
আমাদের হাউসে (আমাদের ব্যাচে) তুই ছাড়া আর কেউ সাংস্কৃতি মনা ছিল না। সব কিছুতেই আগ্রহ ছিল তোর।
মনে পড়ে একবার উপস্তিত বক্তৃতা প্রতিযোগীতায় “আমার মা” টপিকে অসাধারন এক লেকচার দিয়ে তুই পুরস্কার পেয়ে গেলি। সেদিন আমিও একটা প্রাইজ পেয়েছিলাম (ক্রাফটস এ)। প্রাইজ পেয়ে উলটা আরো নার্ভাস হয়ে গেলাম। খুশীর চাইতে ভয় বেশী পাচ্ছিলাম। পরদিন আমাদের প্রাইজ দিবে স্বয়ং কর্নেল কায়সার (আমাদের তখনকার যম)।
এই পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু প্রাইজ নেয়ার পর নাকি আবার থ্যাঙ্কিং স্পিচ ও দেয়া লাগবে। খাইসে আমারে...। কোনদিন আমি স্টেজে পা রাখি নাই। এত্তগুলা মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে স্পিচ দিতে হবে শুনেই গলার পানি শুকায় গেল। তখন তুই সারারাত আমার সাথে জেগে ছিলি।
আমার জন্য স্পিচ লিখে সেটা আবার আমাকে দিয়ে গ্রুমিং করা্লি সারারাত। তোর সাপোর্ট না পেলে সেদিন কি যে হত এখন ভাবতেও পারি না। সেদিন তোকে ধন্যবাদ টুকু জানানো হয় নি। আর কোনদিন জানাব ও না। আপন জনকে আবার ধন্যবাদ কিসের??
মনে আছে তোর- একবার ফুটবল খেলার সময় আমাকে পিছন থেকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছিলি?? আমি ও কষিয়ে দিলাম একটা জায়গামত লাথি।
বেশী ব্যথা পেয়েছিলি সেদিন?
আমাকে পাঁচ গুঁটিতে হারানোর পর তোর সেই স্মিত হাসি আমি কোনদিন ভুলতে পারব না।
আরফাত ছিল ভাবুক টাইপের ছেলে। সব সময় কিছু না কিছু ভাবত বসে বসে। তার কল্পনা শক্তি ছিল অসাধারন। সব কিছুতেই তার নিজস্ব একটা মতবাদ থাকত।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেগুলা অনেক র্যা ডিকেল ছিল। কিন্তু আমাদের সাথে সেই সারল্যের কারনেই পেরে উঠত না। কিন্তু এর জন্য তার মনে কষ্ট থাকলেও কোন ক্ষোভ ছিল না। খুশি মনেই আমাদের সাথে টিম হিসেবে কাজ করে যেত।
খুব মনে পড়ছে তোকে।
তোর সাথে কাটানো সেই মধুর সময় গুলো। তোকে নিয়ে কত হাসাহাসি, ঠাট্টা- তামাসা, রাগ, অভিমান, ঝগড়া। আমাদের সেই ছোটবেলার আড়ি গুলো, খুব বেশী হলে ১দিন কথা না বলে থাকা। পরে কে কার অভিমান ভাঙ্গাবে সেটা নিয়ে ঝগড়া। খুব বেশী মনে পড়ছে আজ।
তোর সাথে আমার সেই এডভেঞ্চার গুলোর কথা চিন্তা করে ভাবি- এত অল্প বয়সে এত সাহস আমরা পেয়েছিলাম কোথায়? আমাদের বন্ধুত্বের বিশ্বাস সেই সাহস যুগাতো। খুব ছোট বেলায় আমাদের বাসা থেকে চলে আসতে হয়েছিল। সেখানে আপন বলতে কেউ ছিল না। না বাবা, না মা। তোরাই হয়ে গিয়েছিল আমার আপনজন।
আমরা একটা পরিবারের মত ছিলাম।
প্রকৃতি আমাদের ruthless করে ফেলেছে। কিছুতেই আমাদের চোখে আর পানি আসে না। আজকাল আবেগ আর কাজ করে না। কিন্তু দেখ আজ তোর কথা আজ মনে পড়তেই চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
তোর সাথে করা “আর কোন দিন কাঁদব না” শপথ আমাদের নিজের অজান্তেই ভেঙে গেল।
আমাদের সেই সহজ সরল আরাফাত, জীবন কে নিয়ে যে সীমাহীন কিছু স্বপ্ন দেখত, সেই জীবন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলে না ফেরার দেশে। স্বপ্ন পূরন করার সুযোগ টুকুও সে পায় নি বিধাতার কাছে। আজকে আমার বন্ধু আরাফাতের মৃত্যু বার্ষিকী। আজকের দিনে সে আমাদের ছেড়ে চলে যা।
আগষ্ট মাস আসলেই সেই ভয়ঙ্কর দূর্ঘটনা টি মনে পড়ে যায় আমাদের। এখনো বিশ্বাস করতে পারিনা সব সময় হাসি খুশি থাকা ছেলে টা আজ আমাদের মাঝে নেই। আমারা কোনদিন তোকে ভুলব না আরাফাত। কোন দিন ভুলব না... ভুলতে পারব না ।
আরাফাতের সাথে আমার একটা এডভেঞ্চার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।