..আমীর ইউসুফ রওনা দেয়ার আগের দিন তার বড় ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো । তার অবস্থা আশংকাজনক । জ্বরে বেহুশ । তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে ছেলের মাথায় হাত রেখে বসে আছেন । বিজ্ঞ হেকিম রোগীর জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন ।
সিয়ার বিন আবুবকর এসে ঢুকলেন কামরায় । আমীর ইউসুফের কাছে বসে ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন, 'অনুমতি দিলে যাত্রা আজ মুলতবী করে দেই । আকাশে ঝড়ের পূর্বাভাস, এদিকে ওর এ অবস্থা । এ অবস্থায় রওনা করা ঠিক হবেনা । '
আমীর ইউসুফ দৃঢ়তার সাথে বললেন, না, তোমরা রওনা হয়ে যাও ।
আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্দরে আসছি। '
সিয়ার বিন আবুবকর বের হয়ে গেলেন । একটু পর রোগীর জ্ঞান ফিরে এলো । চোখ খুলেই সে পিতাকে দেখতে পেয়ে বলল, 'আব্বাজান, আপনি এখনো যাননি ? আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না । সুস্থ হয়েই ইনশাআল্লাহ আমি জিহাদে শামিল হবার জন্য রওনা হয়ে যাবো'
'একটু পরই রওনা হবো আমরা।
তোমার অবস্থা কেমন?'
'ভাল। আপনি দোয়া করুন, দেখবেন জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছে আমাকে শুয়ে থাকতে দেবেনা'
হঠাৎ দমকা হাওয়ার ঝাপটা এসে লাগলো কামরায় । আমীর ইউসুফ বাইরে তাকিয়ে দেখলেন কালো মেঘে আকাশ ছেয়েছে । চারদিক ঘন অন্ধকার ।
এক ফকীহ বললেন, 'প্রচন্ড তুফান আসছে ।
সম্ভবত আল্লাহ আপনার সফর মুলতবী করার পক্ষপাতী'
আমীর ইউসুফ বললেন, 'না, আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন এবং সাবধান করে দিচ্ছেন । বলছেন, যাও ইউসুফ, তবে সাবধান, এ অভিযান হবে খুবই ভয়ঙ্কর ও জটিল'
তুফানের তীব্রতা ক্রমে বেড়েই চলল । এক অফিসার ছুটে এসে বলল, 'আমাকে নৌবাহিনী প্রধান পাঠিয়েছেন । ঝড় ক্রমে প্রলয়ংকরী রূপ নিচ্ছে । আপনার অনুমতি পেলে জাহাজ থেকে রসদ ও ঘোড়া নামিয়ে নিতে পারি ।
'
না-না, তাকে বলো, আমি আসছি '
অফিসার ছুটে বেড়িয়ে গেলো । আমীর ইউসুফ পূত্রের কপালে হাত রেখে বললেন, আমি যাচ্ছি বাছা..
খোদা হাফেজ বলে আমীর ইউসুফ বের হতে গেলেন । এক আলেম এগিয়ে বললেন, 'তুফানের দাপাদাপি না কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন'..
আমীর ইউসুফ বললেন, 'যদি আল্লাহ আমাকে স্পেনের মুসলমানদের উদ্ধার করার জন্য মনোনীত করে থাকেন, তাহলে এ ঝড় আমার পথে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবেনা । সব জাহাজ রওনা হলে আমি জাহাজ ছাড়বো ভাবছিলাম, কিন্তু এখন সবার আগে আমার জাহাজের নোঙর তোলার ই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । '
বেরিয়ে এলেন আমীর ইউসুফ ।
বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির ছিঁটা এসে আমীর ইউসুফের কাপর ভিজিয়ে দিচ্ছিলো । বন্দরে এসে পৌছলেন তিনি । প্রচন্ড ঝড় উপেক্ষা করে উপকূলে গিয়ে দাড়ালেন । অন্ধকার সমুদ্র থেকে ভয়ংকর ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে তীরে । হঠাৎ সুবিশাল এক ঢেউ ছুটে আসছে দেখে সিয়ার বিন আবুবকর চেঁচিয়ে উঠলেন , 'আপনি পেছনে সরে যান! ভয়ংকর ঢেউ ছুটে আসছে'
আশপাশে যারা ছিলো ছুটে সরে গেলো তারা ।
কিন্তু তিনি অটল পাহারের মত নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলেন । সিয়ার বিন আবুবকর তার হাত ধরে টেনে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করলেন, পারলেন না । সরে যাবার বদলে তার ঠোঁটে দেখা গেলো হাসির ঝিলিক । তরঙ্গটি তীরের ছোট ছোট টিলা ও শিলাখন্ডকে গ্রাস করে চোখের নিমিষে আমীর ইউসুফের বুক পর্যন্ত ঢেকে দিলো ।
আমীর ইউসুফ সিয়ার বিন আবু বকরকে বললেন, সিয়ার, আমি গাফুরুর রাহীমের কাছে দোয়া করেছি, যদি আমাদের যাত্রা তার অপছন্দনীয় হয় তাহলে যেন এ প্রবল ঢেউ আমাকে গ্রাস করে ফেলে ।
আর যদি আমাদের যাত্রা তার পছন্দনীয় হয় তাহলে এসব তুচ্ছ ঢেউয়ের পরোয়া না করে তার রহমতের বৃষ্টিতে ভিজে সামনে এগিয়ে যাওয়াই পছন্দ আমার'!
শান্ত হলো তরঙ্গ । মুজাহিদের সাথে বুক মিলিয়ে সংকুচিত হল ঢেউ । মেনে নিলো বশ্যতা । সিয়ার বিন আবু বকর ভাইয়ের দৃঢ় মনবল দেখে হাসলেন । চেচিয়ে বললেন, 'মুজাহিদ ভাইয়েরা, নোঙর উঠাও ।
পাল তুলো । আমাদের গন্তব্য এখন খিজরা দ্বীপ'
এক আলেম এগিয়ে এসে বললেন, 'আমীর. আপনার বিজয় মোবারক হোক । উর্মীমালা আপনার বিজয়ের আগাম সুসংবাদ দিয়ে গেলো ' ...
----------------
ইউসুফ-বিন-তাশফিন
ঐতিহাসিক উপন্যাস : নসীম হিজাজী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।