গ্রাম-প্রকৃতি-সবুজ-সারল্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, সেখানে ফিরে যেতে মন চায় বার বার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এ অবস্থিত বুর্জ খলিফা হচ্ছে বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম স্থাপনা। এর উচ্চতা ৮২৯.৮০ মিটার কিংবা ২,৭২২ ফুট। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে এটি বুর্জ দুবাই নামে পরিচিত ছিল। অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল এই নামে।
আরবিতে এটাকে বলা হয় খলিফা টাওয়ার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বুর্জ দুবাই এর নাম পরিবর্তন করে বুর্জ খলিফা রাখা হয়। ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও বুর্জ খলিফার বাহ্যিক কাঠামোর কাজ শেষ হয় আরও অনেক আগে, ১ অক্টোবর, ২০০৯ সালে। অনিন্দ সুন্দর এই স্থাপনাটি যার মস্তিস্কপ্রসূত চিন্তার ফসল অর্থাৎ এটির মূল স্থপতি হচ্ছেন আমেরিকার শিকাগো শহরের এ্যাডরিয়ান স্মিথ (অফৎরধহ ঝসরঃয)। আর প্রধান প্রকৌশলী বিল বেকার (ইরষষ ইধশবৎ), তার বাড়িও একই শহরে।
দুবাই এর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র শেখ জায়েদ রোডে পৃথিবী বিখ্যাত এই স্থাপনাটির ঠিকানা। এটি নির্মাণ করতে মোট ব্যয় হয়েছে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গত ৫ জুলাই, ২০১৩ তারিখে আমি যখন বুর্জ খলিফা দেখার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম তখন আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন ইতিহাসের কোন এক মহেন্দ্র ক্ষণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। যে ইতিহাসের সাক্ষী হবার জন্য মনের অজান্তেই বোধহয় এতদিন অপেক্ষা করে ছিলাম আমি। কিন্তু শুধু সখের বশে দুবাই এসে বুর্জ খলিফার মুখোমুখি হওয়াটা ছিল আমার জন্য নিতান্তই বিলাসিতা।
তাই ডান এন্ড ব্র্যাডস্ট্রীটের আমন্ত্রণ পেয়ে রীতিমতো উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম আমি। দুবাই এ বেড়ানোর মুল খরচটা অর্থাৎ ফাইভ স্টার হোটেলে তিনরাত-তিনদিন থাকা-খাওয়ার সমস্ত খরচ ওরাই বহন করবে। এমন সুবর্ণ সুযোগ মানুষের জীবনে কমই আসে। অফিস থেকে নমিনেশন পাবার পর রীতিমতো উৎফুল্ল হয়ে ছিলাম আমি। ওদের সিডিউল অনুযায়ী ৪ জুলাই তারিখে আমিরাত এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দুবাই পৌঁছলাম বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৪ জন কর্মকর্তা।
মূল প্রগ্রাম সেমিনার এক দিনের, ৫ তারিখে। ঐদিনই বিকেলে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো বুর্জ খলিফা দেখার জন্য। শুধু দেখা নয়, বুর্জ খলিফার সর্বোচ্চ ফ্লোর ১২৪ তলায় উঠার ব্যবস্থাও করা হলো আমাদের জন্য।
সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে আপন গরিমায় অস্ত যেতে ব্যস্ত। সারিবদ্ধভাবে লিফট এ উঠে মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে ১২৪ তলার পর্যবেক্ষণ ডেকে উঠে গেলাম আমরা।
সত্যি ইতিহাস যেন আমাদেরকে বরণ করার জন্য অপেক্ষায় ছিল এতদিন। বিকেলের স্নিগ্ধ আলোয় চারপাশে তাকিয়ে আমার অন্তত সেই মুহূর্তে তাই মনে হলো। বুর্জ খলিফার ১২৪ তলায় নিজের পদরেখা এঁকে দিতে পেরে সেই মুহূর্তে আমার নিজকে অত্যন্ত গর্বিত মনে হলো। অসংখ্য পর্যটকের কলতানে মুখরিত তখন বুর্জ খলিফার ১২৪ তলার ডেকটি। সেই সাথে যোগ হয়েছে অনবরত ছবি তোলা আর সবার মুখ থেকে বেরিয়ে আসা আনন্দ বিস্ময়ের ধ্বনি।
পুরো দুবাই শহর যেন আমাদের দৃষ্টির ফ্রেমে বন্দী এই মুহূর্তে। সেখানেই আমি মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। আরও দুই জন ভদ্রমহিলাও নামাজ আদায় করলেন আমার পাশে দাঁড়িয়ে।
এই টাওয়ারে ৯০০টি এপার্টমেন্ট রয়েছে। একসাথে ৩৫,০০০ লোকের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে এতে।
৫৭টি লিফট ও ৮টি এসকেলেটর সব সময় ব্যস্ত রয়েছে এই বিপুল সংখ্যক দর্শককে উঠানামা করার জন্য। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ১৬০ তলা পর্যন্ত উঠার জন্য এতে রয়েছে ২,৯০৯ টি সিঁড়ি। উল্লেখ্য যে, বুর্জ খলিফার পর্যবেক্ষণ ডেকটি পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ডেক, যার উচ্চতা ৪৫২ মিটার কিংবা ১,৪৮৩ ফুট। তাছাড়া বুর্জ খলিফার ভূমিতল ২৭ একর জায়গা নিয়ে তৈরী একটি পার্ক দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই পার্কে রয়েছে ছয়টি স্বচ্ছ জলাধার, বাগান, পাম লাইন ওয়াকওয়ে এবং পুষ্পশোভিত গাছ।
আর মূল কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে মরু পুষ্পের আদলে তৈরী বুর্জ খলিফা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।