মনজুরুল আহসান
রাজধানীতে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ সংকট আরো বেড়ে গেছে। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় সাত থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। অনেক এলাকায় সারা রাত ধরেই চলে বিদ্যুতের লুকোচুরি। ফলে ভোগান্তি পেঁৗছেছে চরমে। আসন্ন রমজান মাসেও বিদ্যুতের এ সংকট চলতে থাকলে তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক গ্রাহক।
ইশরার আদনান থাকেন গোড়ানে। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, তীব্র গরমে তাঁর শিশুপুত্র ও স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থ স্ত্রী-পুত্রের দুশ্চিন্তায় থাকতে না পেরে তিনি কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়েছেন। তিনি অক্ষেপ করে বললেন, 'ছুটি নেওয়ায় এখন কাছ থেকে স্ত্রী-পুত্রের কষ্ট দেখছি। নিজেও গরমে কষ্ট পাচ্ছি।
কিন্তু কিছু করার নেই। জেনারেটর সংযোগ কিংবা আইপিএস নেওয়ার মতো সামর্থ্যও নেই। ' একই ধরনের পরিস্থিতি রাজধানীর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর। বিদ্যুতের পাশাপাশি রয়েছে গ্যাস সংকটও।
বিদ্যুতের সমস্যার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষ বলেছে, লোড ব্যবস্থাপনার জন্য রাজধানীতে এমনকি গভীর রাতে আধাঘণ্টা পর পর লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
পিডিবি সূত্রমতে, গ্যাস সংকট ও কারিগরি জটিলতার কারণে প্রায় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকছে। এর মধ্যে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩ নম্বর ইউনিটটি গত মঙ্গলবার বিশ্রামে দেওয়া হয়। এর আগে গত ১৮ জুলাই ৬ নম্বর ইউনিটে আগুন লেগে ২১০ মেগাওয়াট এবং কারিগরি কারণে আরো ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ওই কেন্দ্রের ৯৫০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৪১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুতের ঘাটতি প্রসঙ্গে পিডিবি চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ নির্বিঘ্ন রাখতে হলে চাহিদার থেকে ২০ ভাগ বেশি উৎপাদন থাকতে হয়।
অথচ দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে মেরামত ও বিশ্রাম দিতে গেলে গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে পেঁৗছে।
পিডিবি বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, দ্রুত বিদ্যুৎ পেতে দেড় হাজার মেগাওয়াটের ভাড়ায় বিদ্যুৎ কেনার জন্য ইতিমধ্যে চুক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে বাকিটা চলে এলে বিদ্যুৎ সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
পাশাপাশি জুন পর্যন্ত নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ রাখার যে সিদ্ধান্ত, তা আরো তিন মাস বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে বর্তমান সংকট মোকাবিলায় গ্রাহকদের এসির মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহারে হিসেবি হলে বিদ্যুতের অভাবে ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পিডিবি, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ কম্পানিগুলো সব এলাকায় সুষম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা ও কারিগরি মেরামত (মেইনটেন্যান্স) করার জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানির (ডিপিডিসি) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুল হক জানান, সব এলাকায় সুষম বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিভিন্ন এলাকায় (ফিডারে) বিদ্যুৎ চাহিদা সঠিকভাবে নিরূপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য পর্যায়ক্রমে ফিডারগুলোতে পূর্ণ মাত্রার বিদ্যুৎ (ফুল লোড) সরবরাহ চাহিদা মাপা হচ্ছে।
ফলে অন্যান্য এলাকায় অতিরিক্ত লোড শেড করতে হচ্ছে। আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। তিনি আরো বলেন, লোড ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি রিলে পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে ডিপিডিসি ও পাওয়ার গ্রিড কম্পানি (পিজিসিবি) যৌথভাবে কাজটি সম্পন্ন করবে। এতে খিলগাঁও, গোড়ানসহ রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী তমাল চক্রবর্তী বলেন, রমজানে সরবরাহ নিশ্চিত করতেই ৩ নম্বর ইউনিটটি ১০ দিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। আর ছয় নম্বর ইউনিটের মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গ্যাসেরও সংকট : কানিজ ফাতিমা একজন গৃহিণী, থাকেন রাজধানীর শ্যামপুরে। তাঁর অভিযোগ, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চুলায় গ্যাস থাকে না বললেই চলে। ফলে গত বছর শীতকাল থেকে আজ পর্যন্ত দুপুরে রান্না করতে পারছেন না তিনি।
শেষ রাতে উঠে সারা দিনের রান্না করতে হয়। শুধু রাতের রান্নাটা রাতে করা যায়। একই অভিযোগ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, খিলগাঁও, গোপীবাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গ্রীন রোড, আজিমপুর-কামরাঙ্গীরচর কিংবা উত্তরার অনেক আবাসিক গ্রাহকের। রাজধানীর বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ কিংবা মুন্সীগঞ্জের আবাসিক গ্রাহকদের অবস্থাও একই।
দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর এ জন্য সরবরাহ লাইনের সংকটকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, গ্রাহক প্রান্তে গ্যাস পেঁৗছানোর জন্য সরবরাহ লাইন অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মূল সরবরাহ লাইনে গ্যাস থাকলেও দূরবর্তী প্রান্তে গ্রাহকরা (শিল্প ও আবাসিক) প্রয়োজনীয় চাপে গ্যাস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, দূরবর্তী ওইসব গ্রাহকের জন্য আগের লাইনের পাশাপাশি বিকল্প সরবরাহ লাইন নির্মাণ না করলে এ সমস্যা দূর করা যাবে না। এ জন্য পেট্রোবাংলার উদ্যোগ থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্তেই তা বাস্তবায়ন হবে।
এদিকে গ্যাসের অভাবে রাজধানী ও এর আশপাশের শিল্প-কারখানাগুলোর অবস্থাও শোচনীয়।
কেবল নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ এলাকার পাঁচ শতাধিক শিল্প-কারখানায় গ্যাসের অভাবে ৭০ ভাগ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ শিল্পমালিক সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি হারুন-উর-রশীদ। তাঁর অভিযোগ, এসব কারখানায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। শ্রমিক আছে চার থেকে পাঁচ লাখ। অথচ ওই এলাকার কারখানাগুলোতে সাকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ থাকে না বললেই চলে। এতে জেনারেটর আর বয়লারগুলো চলতে পারছে না।
জেনারেটর ও বয়লার চালানোর জন্য বিকল্প জ্বালানি সম্পর্কে হারুন-উর-রশীদ বলেন, অনেকে ডিজেল ব্যবহার করছেন। তবে এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণView this link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।