রসকদম, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম মিষ্টান্ন। খোটখাটো অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বড় ধরনের যে কোন অনুষ্ঠানে এই মিষ্টির রয়েছে ব্যাপক কদর। শুধু রাজশাহীতেই নয় দেশের প্রতিটি জেলায় রাজশাহীর রসকদম নামে রয়েছে এর সুপরিচিত । এমনকি দেশের বাইরেও ভারত, আমেরিকাতেও রয়েছে এর পরিচিতি। বিদেশ থেকে কেউ বেড়াতে আসলে আত্মীয় স্বজনরা রাজশাহীর রসকদম সাথে করে দিয়ে দেয়ার প্রচলন রয়েছে।
সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামে ও এই রসকদমের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। রাজশাহীর প্রতিটি রেষ্টুরেন্টে ও হোটেলে এই রসকদম পাওয়া যায়। প্রতিটি রেষ্টুরেন্টের কারিগররাই এই রসকদম তৈরী করে থাকেন। তবে রাজশাহী মিষ্টান্ন ভান্ডার, বেলীফুল, নবরুপ দোকানগুলোর রসকদম রাজশাহীর মধ্যে উৎকৃষ্ট বলে পরিচিতি রয়েছে। মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রধান কারিগর বিশ্বনাথ ৩২ বছর যাবৎ রসকদম তৈরীর সাথে যুক্ত আছেন।
তার সাথে কথা বলে জানা যায় কিভাবে তৈরী এই রসকদম আর কেনইবা রাজশাহীর রসকদমের রয়েছে এত কদর। রসকদম তৈরীতে লাগে দুধের মোয়া, ছানা,চিনি, চিনির গুলি, সাদা দানা। প্রথমে দুধের মোয়া, ছানা ও চিনি দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট ঝাল দিতে হয়। পরে এইগরম থাকা অবস্থাতেই আবার কয়েকমিনিট ভাল করে নাড়া দিয়ে দিতে হয়। ঠাণ্ডা হলে এগুলোকে মুড়িয়ে গুলি আকারে তৈরী করা হয় ।
এখন এই গুলোর ওপর সাদা দানা দিয়ে মোড়ানো হয় । ব্যাছ তৈরী হয়ে গেল রসকদম। সবমিলিয়ে আধ ঘন্টা সময় লাগে এই রসকদম তৈরী করতে। প্রতিকেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা করে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি পিস রসকদমের দাম ৫ থেকে ৭টাকা।
রসকদমের নামকরণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলে থাকেন রাজশাহীর ‘র’ শব্দের সাথে মিল করে এর নাম দেয়া হয় রসকদম। আবার কেউ বলেন-প্রথমে কারিগর নিজেই এর নাম দিয়েছেন রসকদম আর সেই থেকেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে রসকদম নাম হিসেবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় , প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের শিার্থীরা প্রায় সময়ই এই প্রাচীনতম মিষ্টান্ন খেতে আসে। তাছাড়াও বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অনুষ্ঠানেও অর্ডার দিয়ে এই রসকদম নেয়া হয়ে থাকে।
রাজশাহীসহ পুরো দেশব্যাপী এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে থাকলে ও এর বিক্রি দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানা যায় রাজশাহীর সোনাদীঘি মোড়ে অবস্থিত নবরুপ মিষ্টি ঘর থেকে। দোকানের কর্মচারি হামিদ জানান- আজকাল বাসা বাড়িতে চিনির রস আর ময়দা দিয়ে বানিয়ে পাইকারী দোকানে বিক্রি করা হয়। যা খুবই নিম্নমানের । বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা করে। তাই মানুষ আর রেষ্টুরেন্টে গিয়ে আর বেশী দামে কিনে খায় না।
এতে করে রসকদম এর ঐতিহ্য আর থাকবে না বলে জানান মিষ্টিবিপণীরা । তাই রসকদমের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।