আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রসকদম (১) ।। পোড়া মাংস

ও পথ মাড়িও না যে পথ তুমি চেননাকো----

রসকদম (১)। । পোড়া মাংস
স্ত্রী কহিল তুমি কি টের পাও নাই ভুমিকম্প হইতেছে । আমি তাহার দিকে না তাকাইয়া কহিলাম- কই ? আমি পাইতেছিনা । সে কহিল এতো বড় একটা আওয়াজ ও কম্পন কি একেবারেই টের পাইলেনা।

এইবার আমি তাহার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়া কহিলাম – উপরতালায় আমার বন্ধু পরামানিক তাহার স্ত্রীকে ল্যাং মারিয়া ফেলিয়া দিয়াছে , মনে লইতেছে ।
‘ওগো বলো কি?’
আমি কহিলাম ‘হ্যা, পরামানিক মাঝে মধ্যেই স্ত্রীর সহিত বচসা করে , বলা উচিৎ স্ত্রী পরামানিকের সহিত বচসা করে’।
‘কি সব্বোনাশ, মানিক দাদার এই রোগা পটকা দেড় কেজির শরীর তাও গুনা দিয়া মেরামত করা কি সাহসে হস্তিনী ভাবির সহিত লড়াই করে!’
আমি কহিলাম ‘গুনা দিয়া মেরামতের পর পরামানিকের তেজ বাড়িয়া গিয়াছে। গত সন্ধ্যা হইতে রাত সাড়ে ৯ টা মানে পাক্কা সাড়ে তিন ঘণ্টা পরামানিক পারসোনার ওয়েটিং এ বসিয়া ইত্তেফাকের বা দিকের প্রথম বক্স বিজ্ঞাপন হইতে শুরু করিয়া সম্পাদক মঞ্জুর নামের নিচে ওয়েব অ্যাড্রেসে গিয়া থামিয়াছে’।
স্ত্রী কহিল ‘ভিতরের বিজ্ঞাপন সহ’?
আমি কহিলাম আলবৎ , না হইলে সময় কাটিবে কি করিয়া !
‘তো হস্তিনী ভাবী কি করিল এতো সময় লইয়া’?
‘ভ্রু তরবারির ন্যায় ধারালো করিল ও ঝুলিয়া পড়া গলা মেসেজের মাধ্যমে ঠিক করিয়া বার্ধক্যকে জয় করিয়া বালিকা সাজিতে কসরত করিল,সাথে নখ ও চুল তো আছেই’।


‘আহা বেচারা’ ।
আমি কহিলাম ‘তাহারতো গলা বলিয়া কিছুই নাই , কারন কাঁধ ও মাথা একত্রে মিশিয়া একাকার হইয়া গিয়াছে’।
‘তুমি যা বলোনা, পরস্ত্রীর প্রতি তোমার নজর খুব শানিত’।
‘এই শুরু হইয়া গিয়াছে , শোনো এই দেড় টনি স্ত্রীলোকের প্রতি আমার কস্মিনকালেও আগ্রহ ছিলনা । মনে নাই চারিটি বৃহদাকার নারী লইয়া পুলিশের মাইক্রোবাস উলটাইয়া গিয়াছিল,পরে পুলিশ তাহাদের ছাড়িয়া দিতে পারার আনন্দে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মুনাজাত করিয়াছিল’।


‘তুমি কি তোপিয়া বাহিনীর কথা বলিতেছ’?
‘মনে তো তাই হয়,নাম বলিতে পারিবনা’।
‘সাড়ে তিন ঘণ্টা পর কি হইল’?
বিবাহ বাড়িতে গিয়া তাহারা দেখে সবাই চলিয়া যাইতেছে। শুধু তাহারাই অপেক্ষা করিতেছে যাহারা খাবার পায় নাই, তাহাদের জন্য নান্না হাজির বিরিয়ানি আসিতেছে।
পরামানিকের সকল রাগ তাহার স্ত্রীর উপর পড়িল ।
পরামানিক সকল সময় ফার্স্ট ব্যাচে বসিয়া উদরপূর্তি করিয়া বিবাহ,জন্ম, মৃত্যু,চল্লিশা, খৎনা ও বিবিধ বার্ষিকীর আহার করে , মায়কি চান্স নস্যাত হইতে পারে দেখিয়া চেয়ার ধরিয়া দাঁড়াইয়া থাকে যাহাতে নিদেন পক্ষে সেকেন্ড ব্যাচে সুযোগ নিশ্চিত হয়।


গতরাতে হয়তো বাৎচিত না করিয়া ঘুমাইয়াছে , আজ সকালে আলবৎ ভাবী বিবাহ বাড়িতে অন্য মহিলাদের সহিত তাহার তুলনা করিয়া পরামানিক কে তাহার রুপের প্রশংসা করার জন্য চাপ দিতেছিল , মনে লয় কাচ্চি বিরিয়ানির শোক ও নান্নার বিরিয়ানি গিলিবার দুঃখ যুগপৎ স্ত্রীর উপর পড়িয়া গিয়া ক্যাচাল অবশেষে হাতাহাতি সর্বশেষ পরামানিক বাণপ্রস্থ ল্যাং মারিয়া স্ত্রীকে ধরাশায়ী করিয়াছে ।
‘ল্যাং না মারিয়া অন্য কিছু তো করিতে পারিত’।
‘কি করিবে? ভাবী পরামানিক কে জড়াইয়া ধরিয়া দুইখানি চাপ মারিলে সে অসুস্থ হইয়া অফিস কামাই করে, তাহাতে বেতন কাটা যায় ও গুনা দিয়া বাঁধা জোড়াতালির শরীর রিস্ক ফ্যাক্টর এর মধ্যে গিয়া পড়ে’।
পরামানিকের দুর্দশাগ্রস্থ জীবন দেখিয়া তাহার এক সহকারি ল্যাং মারার কায়দা কানুন শিখাইয়া দিয়াছে । প্রথম প্রথম পরামানিক ল্যাং মারিতে গিয়া নিজেই পড়িয়া মাজায় আঘাত পাইত ।

পরে কুংফু তরিকা শিক্ষা নিয়া সামনে আগাইয়াছে ।
স্ত্রীকে ইহাও শিক্ষা দিয়াছে স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেস্ত এবং স্বামীর শরীরে আঘাত হাবিয়া দোজখের রাস্তা ক্লিয়ার করে । সে ভালবাসিয়া স্ত্রীকে বেহেস্তি জেওর কিতাব গিফট করিয়াছে।
আসলে ব্যাপার হইল কি স্ত্রী পরামানিকের শরীরে যেখানে সুযোগ পাইত সেখানেই কামড়াইয়া ধরিত । ইহা ভীষণ বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করিত কারন সেন্সেটিভ স্থান গুলিতে কামড় দিলে তাহাতে জীবনের সকল সুখের উৎস বিলুপ্ত হইবার আশঙ্কায় এতো আয়োজন ।

তাহা ছাড়া এখন পরামানিক সর্বক্ষণ বুলেট প্রুফ আন্ডারঅয়্যার পরে ।
ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের কারগিল সিমান্তে সদা গুলি বিনিময়ের মতো তাহাদের কোন বিরাম নাই , মাসে চারদিন বাদে !
‘কোন চারদিন’?
আমি রহস্যময় হাসি হাসিয়া কহিলাম লাল পতাকার চারদিন!
স্ত্রী হাসিতে হাসিতে হটাত গম্ভীর হইয়া চারিদিকে নাক টানিয়া শুকিতে লাগিল তাহার পর চিৎকার করিয়া রান্নাঘর মুখী দৌড় দিয়া বলিয়া গেল ‘মাংস পুড়িয়া গিয়াছে’।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।