আমি হিমেল, আমার ব্লগে আপনাকেস্বাগতম।
আজ সকালে ফেসবুকে কোন এক বন্ধুর শেয়ার করা লিংক থেকে জানতে পারি,
মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ইসমাইল (আ.)-কে নয়, ইসহাক (আ.)-কে কোরবানি করতে নিয়ে গিয়েছিলেন দাবি করে এর সঠিক ব্যাখ্যা চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট দেব নারায়ণ মহেশ্বর।
লিংক : কোরবানি নিয়ে কোরআনের শুদ্ধতা দাবি করে রিট
তখন থেকেই নেটে একটু ঘাটাঘাটি করি আসল বিষয়টি কি তা জানার জন্য।
প্রথমেই আমি যে বিষয়টি আমি খুঁজি, ইসমাইল (আ.) ও ইসহাক (আ.) মধ্যে কে বড় কে ছোট? তা খুঁজতে গিয়ে বাইবেল এ যা পেলাম।
ইসমাইল সম্পর্কে পেলাম :
১৬:১৬ অব্রামের ছিয়াশি বছর বয়সে ইশ্মায়েলের জন্ম হয়েছিল।
(আদি পুস্তক )
ইসহাক সম্পর্কে পেলাম :
১৭:১৬ আমি তাকে আশীর্বাদ করে তারই মধ্য দিয়ে তোমাকে একটা পুত্রসন্তান দেব। আমি তাকে আরও আশীর্বাদ করব যাতে সে অনেক জাতির এবং তাদের রাজাদের আদিমাতা হয়। ”
১৭:১৭ এই কথা শুনে অব্রাহাম মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং হেসে মনে মনে বললেন, “তাহলে সত্যিই একশো বছরের বুড়োর সন্তান হবে, আর তা হবে নব্বই বছরের স্ত্রীর গর্ভে!
(আদি পুস্তক )
লিংক : আদি পুস্তক দেখুন ১৬:১৬ ও ১৭:১৬ ও ১৭:১৭ অধ্যায়।
এবার আসুন দেখি কোরআন কি বলে :
আমরা সব সময় বড় ও ছোটদের নাম একসাথে বলতে বা লিখতে গেলে সেখানে বড় নাম আগে ও ছোটদের নাম পরেই বলে বা লিখে থাকি।
পবিত্র কোরআনেও তাই করা হয়েছে যেখানেই ইব্রাহিম, ইসমাইল ও ইসহাকের কথা বলা হয়েছে সেখানেই ইসমাইলের নাম আগে তারপরে ইসহাকের নাম লিখা হয়েছে।
যেমন দেখুন :
অথবা তোমরা কি বলছ যে, নিশ্চয়ই ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব (আঃ) ও তাদের সন্তানগন ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান ছিলেন? আপনি বলে দিন, তোমরা বেশী জান, না আল্লাহ বেশী জানেন? (আল বাকারা : ১৪০)
তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বললঃ আমার পর তোমরা কার এবাদত করবে? তারা বললো, আমরা তোমার পিতৃ-পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্যের এবাদত করব। তিনি একক উপাস্য। (আল বাকারা : ১৩৩)
বলুন, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের উপর, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁদের সন্তানবর্গের উপর আর যা কিছু পেয়েছেন মূসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবী রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আমরা তাঁদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত।
(আল ইমরান : ৮৪)
তাহলে বাইবেল ও কোরআনের তথ্যমতে এ কথা প্রমাণিত যে হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর ছেলের মাঝে ইসমাইল (আ.) বড় ও ইসহাক (আ) ছোট।
এবার আসুন দেখি কোরবাণী করতে ইব্রাহীম (আ.) কাকে নিয়ে গিয়েছিলে? আসুন দেখে নেই কাকে কুরবাণী করতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
কোরআন যা বলে :
আসলে কোরআনে এভাবে কোথাও লিখা নেই যে ইব্রাহিম (আ.) ইসমাইল কে কুরবানী করতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
তবে আমরা যদি একটু খেয়াল করে আল কোরআনের সুরা আস সাফফাতের ১০০ থেকে ১০৭ নং আয়াত পর্যন্ত পড়ি তাহলে আমাদের সবার কাছে বিষয়টি পরিস্কার হবে যে ইসমাইল (আ.)কেই কুরবাণীর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
দেখে নই আয়াত গুলি একটু :
১০০) হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দাও৷”
এ দোয়া থেকে স্বতষ্ফূর্তভাবে একথা জানা যায় যে , হযরত ইবরাহীম সে সময় সন্তানহীন ছিলেন৷
১০১) আমি তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম৷
এ আয়াত দ্বারা এটাই বুঝা যায় আল্লাহ তাকে একটি সন্তান দিয়েছিলেন।
যিনি ছিলেন হসমাইল (আ).
১০২) সে পুত্র যখন তার সাথে কাজকর্ম করার বয়সে পৌঁছুলো তখন (একদিন ইবরাহীম তাকে বললো, “ হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি যাবেহ করছি, এখন তুমি বল তুমি কি মনে কর?” সে বললো, “ হে আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে তা করে ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশাআল্লাহ সবরকারীই পাবেন৷”
এ আয়াতে এটা বুঝা যায় যে ইব্রাহিম (আ) ইসমাইলকে তার স্বপ্নের কথা জানান ও ইসমাইল (আ) তাতে রাজি হন।
১০৩) শেষ পর্যন্ত যখন এরা দু’জন আনুগত্যের শির নত করে দিল এবং ইবরাহীম পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিল৷
১০৪) এবং আমি আওয়াজ দিলাম, ৬২ “ হে ইবরাহীম!
১০৫) তুমি স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়ে দিয়েছো৷ আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি৷
১০৬) নিশ্চিতভাবেই এটি ছিল একটি প্রকাশ পরীক্ষা৷”
১০৭) একটি বড় কুরবানীর বিনিময়ে আমি এ শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিলাম।
কোরআনের লিংক এখানে।
আশা করি আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছি যে ইব্রাহিম (আ.) ইসমাইলকেই কুরবাণী করতে নিয়ে গিয়েছিলেন ইসহাক (আ) কে নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।