একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয়
দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া
ঘর হইতে দুপা ফেলিয়া
একটি ঘাসের শিষের উপর
একটি শিশির বিন্দু।
সিরাজগঞ্জ
এই চার লাইনের উপর ৮০-১০০ শব্দের ভাব সমপ্রসার লিখতে যেন কথা খুজে পেতাম না। আজ মনে হচ্ছে এক কোটি শব্দেও ভাব সংকুচিতই থেকে যাবে ।
কোনটা দিয়ে শুরু করবো! যমুনা সেতুর কৃত্রিম সৌন্দর্য্যের কথা নাহয় বাদই দিলাম সেতু থেকে দেখা বিস্তির্ণ প্রান্তর, নদীর তীর ঘেসে জেগে উঠা চোট চোট বালু চর।
আর সে সব বালুচরে মুক্ত বিহঙ্গে খেলায় রত শিশু কিশোর দের ছোটা ছুটি।
সেতুর ঐ প্রান্তের এই মায়াবি দৃশ্য দেখে ক্লান্ত চোকের ঘুম একনিমেষেই উধাও হয়ে গেল।
নাটোর পেরনের সময় চোখে পরলো এক গ্রাম্য কিশোরী একা একা মাঠ
পাড়ি দিচ্ছে, অদূরে এক কৃষক কাদা মাখা মাঠে হাল বেয়ে চলেছেন।
সড়কের সাথে পাল্লা দিয়ে বয়ে চলেছে সরু খাল। ছেলে বৃদ্ধ সকলে একসাথে গোসল করছে। মনে হল নেমে পরি ওদের সাথে মিসে যাই প্রকৃতিতে।
যাওয়া হলনা আমার যে বড্ড তারা।
একটি অপ্রশস্ত ডোবা। কচুরিপানায় পরিপূর্ণ। নেংটু পুটু কয়েকটি শিশু বিপুল উদ্যমে মাছ শিকার করছে। বড়রা উৎসাহে নিয়ে দেখছে।
এই সৃষ্টি গুল যেন ওদেরই জন্যই বড়দের তাতে কোন ভাগ নেই।
। চোখ যতদুর যায় শুধুই বাংলার অপরূপ প্রাণবৈচিত্র্য। ইউরোপে কিছুদিন থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। প্রকৃতির বিস্ময় কর রুপ দেখেছি।
দেখেছি নিষ্প্রাণ পাহাড়, ধূসর পাথুরে প্রান্তর, বিশাল পাহাড়ের বুক ফুট করে তৈরী করা দীর্ঘ টানেল, সুউচ্চ টিলা থেকে অন্ধকার উপত্যকা। কিন্তু ছিল না সেখানে প্রাণের স্পর্শ, ছিলনা প্রকৃতির সাথে মিসে যাওয়া মানুষের পদচারনা, ছিলনা যান্ত্রিকতা বর্জিত জীবন প্রবাহ।
বিশাল একটা মাঠ। অসংখ্য গরু, ছাগল, মহিষ ঘাস খাচ্ছে সড়কের নিকটে একজন গ্রাম্য বঁধু একটি ছাগলের দড়ি ধরে দাড়িয়ে আছেন আর ঘাস খাওয়া দেখছেন । প্রাণিটি একটু পর পর তার দিকে তাকিয়ে ম্যা ম্যা করে ডাকছে।
আর বঁধুটি শাড়ির আঁচল কামড়ে ধরে মিটি মিটি হাসছে। যেন বলছেন "তোকে ছারা যাবেনা তুই বড্ড দুষ্টু, অন্যের খেত মাড়িয়ে দিস"। এক অপরূপ মমতা, এক অপরূপ সরলতা ছিল তার চোখে।
আরেকজন মা। ছোট ছোট দুটি শিশু সন্তানকে গাছ গাছালিতে ভরা একটা বাগানে ছেড়ে দিয়ে উদাস নয়নে কি যেন ভাবছেন।
হয়ত তার প্রিয়জন রয়েছে দুরে কোথাও। বাচ্চা দুটো মনের আনন্দে সারা বাগান ময় ছোটা ছোটি করছে । চারিদিকে খোলা প্রান্তর, কোন ভয় নেই কোথাও ওদের হারিয়ে যেতে নেই মানা। আমার ছেলের কথা মনে পড়ে গেল। ওর মা ঘর থেকে বের হলে এক মুহুর্তের জন্যও ছেলের হাত ছারে না।
সারাক্ষণ কিসের যেন এক অজানা ভয়।
গ্রামের অবারিত সবুজের ছবি গুলকে একটু পর পর ঘোলা করে দিচ্ছিল কয়েকটি পাকা দালান আর বাজার গুল। তাহলে আমাদের শহরের ছবিটা কতটা অস্পস্ট? আর সেটা নিয়েই আমাদের এত গর্ব?
মোবাইল কম্পানির কিম্ভূতকিমাকার লাল সাদা টাওয়ার গুল যেন মায়া মাখান সুন্দরের মাঝে এক ভয়ংকর দানব। যে দানব শহর থেকে ছুটে এসেছে ওদের উপর নজরদারি করার জন্য।
দশ ঘন্টা কিভাবে চলে গেল টেরই পেলাম না।
ভাবছি, গ্রামের এই সরল সাধারণ মানুষ গুল কে নিয়েই তো আমাদের এইদেশ এই বাংলা। আর কিছু সংখ্যক শহুরে মানুষে এদের নিয়ে নোংরা রাজনীতিতে লিপ্ত। একটি কথা বলতে ইচ্ছে করছে ঐ সব অমানুষ গুলকে।
আপনারা অনেক অর্থের মালেক হয়েছেন। এবার আমার বাংলা মা কে তার মত বাঁচতে দিন।
এইদেশটা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যান। যেখানে আপনাদের সম্পদ নিয়ে উন্মাদনা করতে পারবেন। আমার মা সব কষ্টই হাসি মুখে মেনে নিতে পারবে। মেনে নিতে পারবেনা চিরতরে প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা।
এই সহজ সরল মানুষ গুলোর মাঝে আপনারা সত্যি খুব বেমানান, সবুজের মাঝে জিএসএম টাওয়ারের মত।
(সময় আর মোবাইলের চার্জের সল্পতার কারণে ছবি তুলতে পারিনি। তবে নেট থেকে নিয়ে যে ছবি গুল দিলাম তা যেন আমার দেখা হুবহু সেই দৃশ্য গুলই। বাংলার রুপ তো কোন সিনেমার সুটিং নয় যে অন্যরকম হবে ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।