আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময়ের প্রতিচ্ছবি যে কবিতা / হোসেন শহীদ মজনু

কবিতার কোনো ভূগোল নেই। কবিতা সবার। সব দেশের, সব পাঠকের। তারপরও কবির নিজের বেড়ে ওঠা, শৈশব-কৈশোর, শিক্ষা-দীক্ষা কিংবা পারিপার্শ্বিক জগত জুড়ে থাকে কবিতার অন্দর-বাহির। সে হিসেবে কবিতা ধারণ করে ব্যক্তি মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সকল উপকরণই।

কোন কবিতায় কোন উপাদান বেশি থাকে তাও নির্ধারিত হয় কবির ব্যক্তিসত্তা, রুচি, বোধ ও মননের ওপর ভিত্তি করে। স্বল্প শিক্ষিত থেকে উচ্চশিক্ষিত সকলের বোগম্যতা সংবাদপত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর এ জন্যই এই সময়ের সাংবাদিকদের লেখনীর অন্যতম গুণ সহজবোধ্যতা। এর যে ব্যতিক্রম নেই তেমনও নয়। তবে এই গুণকে ধারণ করেই গল্প ও কবিতার জগতে ঢুকেছেন সাংবাদিক মিল্টন রহমান।

তার প্রথম গ্রন্থ গল্পের। পরেরটি কবিতার। আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে মিল্টনের কাব্যগ্রন্থ চূর্ণকাল। বইটির কবিতাগুলো বিশ্লেষণের জন্যও ফ্লাপের লেখার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। ফ্ল্যাপে বলা হয়েছে, Ñ‘প্রায় সব ক’টি কবিতার শরীরে ক্ষতচিহ্ন।

স্নিগ্ধ আলোক রশ্মি থেকে যা প্রকাশ হয়েছে তাতেও মায়া বিস্তারী বিষ কিংবা রঙের ছাপ। সব প্রশ্নের উত্তর বিমূর্ত। আকাঙ্ক্ষার সবকিছুই থাকে অধরা। বলা চলে বৈরাগ্য হয়েছে সব ক’টি কবিতার ভাব প্রকাশের বাহন। ’ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জন্ম মিল্টন রহমানের।

বাংলা সাহিত্যে উচ্চশিক্ষা শেষে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। এখনও প্রবাসে সেই কাজটিই করছেন। পাহাড়-প্রকৃতির ঔদার্য যেমন তাঁকে আলোড়িত করেছে আশৈশব, তেমনি লন্ডনের টেমস পাড়ের প্রবাসী জীবন স্বদেশপ্রেমকে উসকে দিচ্ছে অনবরত। বিষয়বৈচিত্র্যের যেন অভাব নেই মিল্টনের কবিতায়। তিনি যখন লেখেন : ‘ইদানিং মগজের ভেতর ভীষণ ঘাঁই দেয় বাজার সুন্দরী শৈশবের লেবুতলায় যে শিখেছে জীবনের স্বরগ্রাম শ্বাস টানলেই পেয়ে যাই দুটি কচি লেবুর ঘ্রাণ বুননের ফাঁকে ফাঁকে আবৃত্তি করি তন্ময় অতীত ..... এ দেশের জন্য একদা আমার ছিলো বাজারসুন্দরী এখনো রাজধানীর গলিঘুপছি অন্ধকারে, কখনো নিদ্রাঘোরে ও ওঠে আসে অন্তহীন বিষাদে!’ [বাজারসুন্দরী, পৃ ৩০] এই কবিতার প্রতিটি শব্দ, লাইন যেন জানান দিচ্ছে আমাদের শহুরে জীবনের খেরোখাতার বিবর্ণপাতার উত্তাপ।

সব আছে তবুও বাজারসুন্দরী [সেকি দেহপসারিণী!] প্রমোদ বিলায়; ভালোবাসা শেষে ‘অন্তহীন বিষাদে’ পরিণত হয়। নদের চান্দ আর মহুয়া সুন্দরীর প্রেম উপাখ্যান সাহিত্যানুরাগী পাঠকের অজানা নয়। সেই মহুয়াকে যেন নতুন আদলে, ভিন্ন আঙ্গিকে সুখ-দুঃখের অপার সারথী করেছেন মিল্টন রহমান। ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া সুন্দরী যেন আরেক জীবন পায় তাঁর লেখায় : ‘নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদদ্যা লাগাইলো বাইঙঙ্গন সে বাঙঙ্গন তুইলতে কইন্যা জুড়িলো কাইন্দন কাইন্দনা কাইন্দনা কইন্যা না কান্দিও আর সে বাইঙঙ্গন বেইচা দিয়াম তোমার গলার হার’ [মহুয়া কথা, ৩৫] চূর্ণকাল নিবিড়-পাঠে মনে হয়েছে পৃথক করে বিশেষ কোনো কবিতা প্রসঙ্গে নয়, বরং সব কবিতায়ই আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু ওয়াকিবহাল পাঠকমাত্রই জানেন বই আলোচনার এ ধরনের লেখায় সেটি সম্ভব নয়।

তাই আগ্রহী পাঠকদের জন্য অন্তত আরও দুটি কবিতার উদ্ধৃতি : ‘মেঘের পেখম পুড়েছি বজ্রাগ্নি বেলায় এখন ঠাঁই দাও গ্রীবালগ্ন ছায়া দাও তুলে নাও পাঁজর-ভেলায়। ’ [চান্দোয়া, পৃ ৪৭] ‘অনির্দিষ্ট সময় শূন্যে ঝুলে আছে হৃদপিণ্ড চিলেঘুড়ি ঠোক্কর খায় পচা রক্ত-মাংসে মেঘেরা বৃষ্টি হয়ে ঈশ্বরবুক থেকে নামে ভগীরথ প্লাবন চন্দ্রদীঘলীয়ায় জাগে নিরেশ সর্পরাত নিথর আঁধারে হঠাৎ জেগে ওঠে এক চিলতে তামাটে ভোর, ওখানে হৃদপিণ্ড থেকে শীসের মতো বেরিয়ে যায় ‘তোমার পুষ্পজীবন হোক চিলেঘুড়ি’ [প্রমদা নয়তো..., পৃ ৪৮] এসব কবিতা পাঠে অনায়াসে বলা যায়, মিল্টন রহমানের কবিতায় সময়ের প্রতিচ্ছবি ভাস্বর। সময়কে তিনি ধারণ করেছেন। সময় ভেঙে ভেঙে পড়েছে কি [সেটা কী সম্ভব]! তবে নিজেকে, নিজের জগতকে মিল্টন বিভিন্নভাবে উপলব্ধি করেছেন, সেই উপলব্ধির নির্যাস যেমন তাঁর গল্পগ্রন্থ ব্রুটাস পর্ব ও কর্তার শারীরিক অবনতিতে আছে, তেমনি আছে চূর্ণকালেও। [চূর্ণকাল॥ আগামী প্রকাশনী॥ প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১০॥ প্রকাশক ওসমান গনি॥ প্রচ্ছদ ধ্রুব এষ॥ মূল্য ১০০টাকা] ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।