পতাকায় ফালগুন মানচিত্রে বসন্ত
জীবন-বৃক্ষ
ও আমার মানববর্ণ কেন জন্মেছিলে তুমি-
অনন্ত অসীমে, একা?
সৃষ্টির ভারবহনের প্রশ্নে আমি উত্তর চেয়েছিলাম
আমার মন যখন সতেরতম কক্ষপথে
চাঁদের চারপাশে তারকার সাথে
ছোট জন্তুর মতো জড়সড়।
কোথায় বাস করে আমার বর্ণ
বাস করেছে লক্ষ-কোটি বছর
এবং বাস করবে আরও অগুনতি সময়
অন্তত যতদিন সূর্য আলো ছড়াবে
-এটি মানবতার জন্য মূখ্য জিজ্ঞাসা
এবং তার সাথে ঈশ্বরকে চেনার।
ঘটনাবহুল দিনে আমি উড়েছিলাম
মানবগ্রহে সাদা নদীর মেঘ সরিয়ে
নিঃশ্চুপ রাজ্যের সমস্ত আঘাত শূন্যতায়
সর্বপরি পূর্ণ চাঁদ আমাদের সংগে ছিল
আমার সহযাত্রী বন্ধুর জন্য যার মন গলেছিল
আমার সাথেই ছিল বন্ধু বিদ্যাসাগরের ভালোবাসা।
ঘটনাবহুল সেই দিনে সুন্দর প্রবেশ করেছিল আত্মায়
মনে এবং শরীরে জেগে উঠেছিল সুখ
আমাদের মানবতা উত্তর দিতে ছিল প্রস্তুত
আমরা একা নই, লক্ষ কোটি গ্রহ-উপগ্রহ
যখন আমাদের আত্মাকে জাগ্রত করে
তখন শুভ্র সকালের অগ্নিবার্তা আসে
পূর্ণ চাঁদের আলোয় সৃষ্টিকর্তা আমাকে
ভীষণ বন্যতা থেকে মুক্ত করে;
তখন চারপাশে প্রতিধ্বনিত হয়-
তুমিই মানবতার বর্ণ এবং সৃষ্টি
তুমি জীবন থেকে জীবনে প্রবাহিত
যতক্ষণ তুমি একতাবদ্ধ ততক্ষণ পেতে পারো-
মানবিক সুখ এবং দুঃখ।
আমার ক্ষমা তোমার জন্য
মানবতার জন্য- ভালোবাসার যাত্রায়
তুমি প্রাত্যহিক জীবনে বৃক্ষ দেখবে, আর
শিখতেই থাকবে সৃষ্টির রহস্য
সুন্দর সকাল থেকে সূর্যদয়, মেঘ কেটে কেটে-
কাকাতুয়া এবং কোকিলডাক সুরেলা কণ্ঠে
হলুদ ফুলের স্বর্গ যেখানে, গোলাপ স্থির-
নিজস্ব সুরভিতে সাদা এবং গোলাপী বর্ণে
যাদের পিছনে তোলে ময়ূর পেখম
সেখানে জীবন বৃক্ষের সবুজে বিভোর।
খুব কাছ থেকে আমরা বৃক্ষকে স্পর্শ করেছিলাম
চলার পথে একদিন যা ছিল বিস্তৃত সবুজ ঘাস
কার্পেটের আদরে শিস বাজানো কিছু অবুঝ শিশু
আশ্চর্য হয়েছিল প্রকৃতির রূপে
ঝরেপড়া বালিঢাকা ফুলের বিস্তার
এবং ফুলের ফুটেওঠা অর্ধেক, অসমাপ্ত জীবন
চারপাশে সুগন্ধ, সুন্দর চারদিক
মৌমাছিঢাকা ফুলের দেহ- যৌথ ভালোবাসায়।
পুণরায় স্বর্গীয় শব্দের প্রবেশ চারপাশে
ফুলফোটা, বিস্তৃত সুগন্ধি, অবিরত সুন্দর
জীবন শেষে মাটিতে ঝরে পড়ে ফুলের নিবৃত্তি!
ও আমার সৃষ্টি তুমি জন্মেছো, জীবন থেকে জীবনে
তোমার যাত্রা জীবনবৃক্ষে, মানব জীবনের চক্রে
ও আমার মানব বর্ণ চল সৃষ্টির গান করি।
[ড. আবুল পাকির জয়নুলআবেদীন আব্দুল কালাম যিনি এপিজে আব্দুল কালাম নামেই আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে সর্বাধিক পরিচিত। মাঝি পরিবারের সন্তান কালামের জন্ম দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়– রাজ্যের হিন্দু তীর্থস্থান রামেশ্বরমে ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবরে। ‘অগ্নি’ উদ্ভাবনের মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইণ্ডিয়ান ‘মিজাইল ম্যান’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
এপিজে আবুল কালাম, ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি। তিনি ২০০২ সালের ২৫ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কর্মঠ এবং ধৈর্যশীল কালাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টাই কাজ করেন। ভারতের মতো শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েও রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেষজ উদ্ভীদের পরিচর্যা করতেন নিজ হাতে। সামনের দিনে তিনি ভারতকে বিশ্বের মহাশক্তিধর দেশ হিসেবে কল্পনা করেন।
কালাম একজন বিজ্ঞানমনষ্ক কবি। তিনি পানি প্রার্থিত যাত্রা, কাম্বাকোনামের মৃত শিশুদের জন্য প্রার্থণা, আমার প্রিয় সৈন্যগণ, রাখিদিনের পূণ্য, স্বপ্নের ক্ষত, জীবন-বৃক্ষ, প্রস্তর-দেয়ালসহ বহু মূল্যবান কবিতা রচনা করেছেন।
বাজপেয়ীর ভাষায়, 'তিনি সাহিত্য এবং বিজ্ঞান এই দুই মেরুর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী করেছেন। '
বীণায় পারদর্শী, বাগ্নীতায় অপ্রতিদ্বন্ধী এবং আদর্শবাদী এই শিক্ষকের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ Wings of fire প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তামিল তথা ভারতীয় সাহিত্যাঙ্গনে তিনি স্থায়ী আসন করে নেন।
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার ২য় গ্রন্থ Songs of Soul হিন্দি, ইংরেজি, কোরিয়ান এবং ফার্সি ভাষায় একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়। চিত্রধর্মী কলমসৈনিক কালাম সাহসী ভাষা প্রয়োগে সার্থকতা লাভ করেন। ]
[শেখ নজরুল অনুদিত]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।