maanush84@yahoo.co.uk
জনগণ কবে থেকে চটি পাঠ শুরু করেছিল সে ইতিহাস অজানা থাকলেও সকল নৃতত্ত্ববিদ এব্যাপারে নিশ্চিত যে চটিপাঠের বহুকাল আগে থেকেই মানুষ চটি পরিধান করে আসছে। যক্তরাষ্ট্রের অরিগনে ১৯৩৮ সালে একজোড়া চটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল যেটা তৈরী হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব সাত হাজার থেকে আট হাজার বছর আগে (নিঃসন্দেহে এইটা অক্ষয় কোম্পানীর মাল)। তবে গবেষকদের ধারণা তার বহু আগে থেকেই মানুষেরা চটি পরিধান করে আসছে। তবে সেসব অক্ষয় কোম্পানীর তৈরী নয় বিধায় সন্ধান পাওয়া সম্ভব নয়।
অরিগনে প্রাপ্ত চটি
বাংলাদেশে প্রথম চটি আবিস্কারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'জুতা আবিস্কার' নামক কাব্যটিতে।
যারা কাব্যটি পড়েছেন তারা তারা সেটা জানেন আর যারা পড়েননি তারা এখান থেকে ঘুরে আসিতে পারেন ।
চটির প্রধান আকর্ষণ হল সুকতলা যেটাকে ইংরেজিতে বলে সোল যার বাংলা করলে দাঁড়ায় প্রাণ। চটির প্রাণ হল সোল। সোল আবার তিন প্রকার ইন সোল, আউট সোল এবং মিড সোল। এছাড়াও হাফসোল নামে আরেকটা জিনিস আছে।
ইনসোল থাকে চটির ভিতরের দিকে পায়ের নিচে বেহেস্তের কাছাকাছি (যদি সেটা কারও মা অথবা স্বামীর পা হয় আর কি)। আউট সোলের কাজ রাস্তার সাথে পৃষ্ঠ পোষকতা করা। এছাড়া কোন কোন চটিতে মিডসোল থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পায়ের গোড়ালির দিকে যেখানটাতে চাপ সবচেয়ে বেশী চাপাচাপি করে। তবে হাফসোল কোনভাবেই চটির সাথে সম্পৃক্ত নয়। ওটা বঙ্গ সন্তানেরা খেয়ে থাকেন।
চটির কর্মকান্ড শুধুমাত্র পরিধানে সিমাবদ্ধ থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তার কর্ম ব্যাপ্তি ব্যাপক ভাবে প্রসারিত। চটি যে শুধুই ধরনীর ধূলা হতে আমাদের পদযুগল রক্ষা করে তা নয়। বর্তমানে আমাদের সম্মানের ধারক এবং বাহক হল চটি। যতক্ষণ চটি পায়ে থাকে সম্মান আমাদের পায়ে পায়ে ঘোরাফেরা করে। এই কারণে অনেকেই পদযুগল হতে পাদুকা পদত্যাগ করতে চান না।
চটি পায়ে একদল সম্মানিত (!) ব্যাক্তি।
আবার এই চটিই গালে উঠলে সম্মান সমূহের সমাধি রচিত হয়।
রাজাকার শিরোমনি গোলাম আযমের চটিপাঠ।
আমাদের সাহিত্য অঙ্গনেও চটি স্বমহিমায় মহীয়ান। শুধু রসময় গুপ্ত নয় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও চটি নিয়ে সাহিত্য করেছেন (উপরের লিংক দ্রষ্টব্য)।
'গরু মেরে চটি দান' এক ব্যাপক আলোচিত বাগধারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ সাহেব ইরাকের গরু মেরে চটি দান করেছিলেন। পরবর্তিতে অবশ্য তাকে সে চটি ফেরত দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জনৈক কবির, 'একদা ছিলনা জুতা চরণ যুগলে' শীর্ষক কাব্যটির সাথে বোধকরি সকলেই পরিচিত।
চটি আমাদের জীবন মরণ।
চটি আমাদের উপাসনার বস্তু। হরতালে পিকেটারের ধাওয়া খেলে অথবা জরুরী অবস্থায় মিলিটারি তেড়ে আসলে আমরা প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড় দেওয়ার আগে চটি হাতে নেই। মসজিদে, ঈদগাহে চটি চুরির ভয়ে সেটাকে সামনে রেখে সেজদা করি। প্রতিদিন সকালে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে সযত্নে ঘষামাজা করি। মোদ্দা কথা নিজের অজান্তেই আমরা চটি প্রেমে পাগল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।