আমার জন্য আলো জ্বেলোনা কেউ আমি মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ এই স্টেশনের চত্বরে হারিয়ে গেছি শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবনা ......... গত কয়দিন ধরে মহাসেন আতঙ্কে অস্থির, খালি আল্লাহ্কে ডাকছিলাম যাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয়। বৃহস্পতিবার, সকাল থেকেই রিমঝিম বৃষ্টি, আর বৃষ্টি দেখলেই আমার মনটা কেমন যেন হয়ে যায়, একাকীত্ব গ্রাস করে নেয় পুরো মন ও সময়। অফিসে এসে দুএকটি কাজ করছিলাম আর অনলাইন ও টিভিতে নিউজ আপডেট দেখছিলাম। ১২.৩০ এর দিকে হঠাৎ দোলন ফোন দিলো। অনেকদিন কথা হয়না ওর সাথে,
আমিঃ হ্যালো কি খবর?
সেঃ ভালো, তুমি কোথায়?
আমিঃ অফিসে।
তুমি কই?
সেঃ আমি তো শুক্রাবাদে, গুলশান যাচ্ছিলাম এক কাজে, কিন্তু যার কাছে যাব, সে আজকে না যেতে বলল, তাই এখানে নেমে পড়েছি। এখন বৃষ্টিতে আজিমপুরের রিক্সা পাচ্ছিনা। এখন কি করবো?........
আমিঃ ও, তাহলে তো খুব ই খারাপ অবস্থা। আমি কি গাড়ি নিয়ে আসবো?.......... ওকে, না হয় এক কাজ কর, রাস্তা পার হয়ে, রিক্সা নিয়া বসুন্ধরা সিটিতে চলে আস।
সেঃ ও, আসব? তুমি কি আসবে?.......
আমিঃ হুমম, আস, আমি যাবো।
যাই হোক ১০ মিনিটের মধ্যে সে চলে এল আর আমিও ৫ মিনিট পরে গেলাম। বাইরে বৃষ্টি আর তারপর আবার মেঘ না চাইতেই ও হাজির। ৮ তলায় গিয়া কফি অর্ডার দিয়া গল্প শুরু করি, ঘণ্টা খানেক তো চলে গেল। মাথায় অফিসের টেনশন, তাকে বললাম চলো উঠি, সে বলল, তুমি কি আমাকে একা ছেড়ে দেবে নাকি ! আমি তো পড়লাম ঝামেলায়, পরে বললাম ওকে, চলো দিয়া আসি।
রিক্সা নিলাম, হুড উঠানো পর্দা দেয়া রিক্সায় ও আর আমি, বাইরে তখনো হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছে।
কথা বলতে বলতে এক সময় আর কি হলো জানিনা, বাকিটা বুঝে নেন।
কিন্তু প্রবলেম হলো, ওকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে আসি, কিন্তু কাজ করতে ইচ্ছে করলো না। ছুটি হলে তাড়াতাড়ি বাসায় যাই, রাতে বাসায় গিয়া মুভি দেখি, গান শুনি, সিগারেট খাই, কিন্তু কিছুতেই অস্থিরতা কমে না। শেষে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি, তাও ঘুম আসেনা। সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং খেয়াল করি যে আমার দাঁতে ব্যথা করছে, হায় আল্লাহ্, একি, ডানপাশের উপরের মাড়ি ফুলে গেছে আর দাঁত ব্যথা করছে।
দুপুরে জুম্মার নামাজ পড়ে ৩.৩০ এ এমবিএর ক্লাস এ যেতে ইচ্ছে করলো না। কিন্তু, সেমিষ্টার এর শেষ ক্লাস হওয়ায় ক্লাস মিস করার কোন ওয়ে নাই।
অনেক কষ্টে দাঁত ব্যথা নিয়ে ক্লাস এ গেলাম, ৫.৩০ এ একটি ব্রেক হলো আছরের নামাজ পড়তে পড়তে ব্রেক ওভার, কিছু না খেয়েই দাঁতে ব্যথা নিয়ে ক্লাস এ গেলাম। এরপর ভাবছিলাম ৬.৪৫ এ আবার ব্রেক হবে, তখন মাগরিবের নামাজ না পড়ে কিছু খাব নাকি নামাজ পড়ব। এটা ভাবতে ভাবতে ব্রেক পড়লো এবং ডিসিশন নিলাম, খাবোনা, নামাজ ই পড়ব।
আমি খুব ই অবাক হলাম, আমি গত কাল যে পাপ করেছিলাম, তার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইছিলাম এবং মনে মনে ঠিক করলাম এরকম আর কখনো করবো না। আছর এর পর থেকেই ব্যথা বেশি করছিলো এবং আমি বার বার আল্লাহ্কে ডাকছিলাম কমিয়ে দেয়ার জন্য। আল্লাহ্র কেমন রহমত জানিনা, মাগরিবের পর থেকেই আমার দাঁতের ব্যথা কমতে থাকে এবং আজ সকাল থেকে কোন ব্যথাই নেই এবং মাড়ির ফোলা অংশ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
আমি খুব ই অবাক হলাম আর আল্লাহ্র প্রতি আমার বিশ্বাস টা আরো বেড়ে গেল। আর এই ছোট্ট একটা ঘটনা থেকে আমি একটা শিক্ষা নিলাম।
জীবনে ইচ্ছায় আর অনিচ্ছায় কিছু খারাপ কাজ ছিলো, গত কয় মাস ধরে আস্তে আস্তে আমি নিজেকে বদলাতে চেষ্টা করি। আমি অবিবাহিত, দোলন আমার ফ্রেন্ড ছিলো, প্রেমিকা নয়। ওকে কিস না করলেও আমি পারতাম। আমার আরো কয়জন মেয়ে ফ্রেন্ড আছে, আমি ওদের সবার সাথেই আমার যোগাযোগ কমিয়ে দেই এবং পড়াশুনা, অফিস লেখালেখি, মুভি দেখা ও গানশুনা ইত্যাদিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি। আমি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি একটা প্রাইভেট ফার্মে, পাশাপাশি ঢাবির আইবিএতে এমবিএ পড়ছি, আর সম্প্রতি বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় পাশ করে ভাইভার জন্য অপেক্ষা করছি।
ব্যাপারটা অনেকের কাছে হাস্যকর ঠেকতে পারে, কেননা এর চেয়ে বেশি কিছু করেও অনেকের কিছুই হয়না। সেদিন আমি খুব বেশি কিছু খারাপ কাজ করিনি, কিন্তু আমার যে অপরাধবোধ হয়, এ থেকে আমি যে শিক্ষা নিলামঃ আমি আর অনৈতিক হয় এমন কোন কাজ করবো না। আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ্ আমাকে মাফ করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।