জীবনটা অনেকদিন থেকে "সার্থক" করা হচ্ছিল না, তাই শেষমেশ "সার্থক" করার সিদ্ধান্ত নিলাম, এয়ারটেল প্রযোজিত "পঞ্চম মাত্রার অসম্ভাব্যতা" থুক্কু ইম্পসিবল ৫ - Impossible 5 দেখলাম! পজিটিভ নেগেটিভ কথা বলার আগে একটা জিনিস জিজ্ঞাসা করতে চাই...
আপনাদের Khaled Khan কে মনে আছে? জী না, তিনি শাহরুখ, আমির,সালমান খান এর দুঃসম্পর্কের কোন আত্মীয় নন, তিনি এই দেশের একসময়ের একজন পর্দা কাঁপানো অভিনেতা এবং উল্লেখিত এই তিনজনের চেয়ে বহু অংশে ভাল অভিনেতা! ছোটবেলায় একবার তার একটা নাটক দেখছিলাম, দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না বিটিভি এর সেই পুরনো সেট এর নাটক, কিন্তু আব্বু জোর করে বসিয়ে দেখতে বাধ্য করেছিলেন, কিছু করারও ছিল না, এখনকার মত তো এতগুলা চ্যানেলও তখন ছিল না যে এটা ভাল্লাগছে না দেখে আরেকটাতে যাই! নাটকের কাহিনী ছিল- খালেদ খান এক অফিসে চাকরি করেন, অফিসে তার মহিলা পিএ তার প্রতি দুর্বলতা অনুভব করেন কিন্তু খালেদ খান বিবাহিত বলে তার আবেদনে সাড়া দেন না। খালেদ খান বাসায় এসে তার বউ এর কাছে অকপটে এই পিএ এর দুর্বলতার কথা জানান এবং অবাক হয়ে খেয়লা করলাম তার স্ত্রী এই পিএ এর সাথে খালেদ খান কে ভালোবাসার অনুমতি দিচ্ছেন! আমি বুঝতেই পারছিলাম না এটা কীভাবে সম্ভব০ এরকম বউ হয় কীভাবে যে স্বামীকে আরেক মেয়ের সাথে ভালবাসতে অনুমতি দিচ্ছেন?! নাটকের শেষে যেয়ে আবিষ্কার করলাম- খালেদ খান আসলে একজন সিজোফ্রেনিয়া এর রোগী, এবং তিনি আসলে অবিবাহিত- তার কোন স্ত্রী ই নাই! নাটকটা দেখে আমি সেই ছোট বয়সে এমন এক ধাক্কা খেয়েছিলাম যে সেই ধাক্কায় নাটকের নামটাও ভুলে গেছি! নাটকের "সেট" পুরনো হতে পারে কম বাজেটের কারণে, কিন্তু খালেদ খানের দুর্দান্ত অভিনয় এখনও আমার চোখে ভাসে!
খালেদ খানের এই নাটকের কথা বলার উদ্দেশ্য হল - এই নাটক আর ইম্পসিবল ৫ এর মূল থিম এক- একজন সিজোফ্রেনিয়ার রোগী। অথচ আকাশ পাতাল পার্থক্য! বিটিভি এর সেই নাটকের এয়ারটেল নামক টাকাওয়ালা প্রযোজক ছিল না, কিন্তু ইম্পসিবল ৫ এ তা থাকলেও, নাটকের থিম অসাধারণ থাকলেও নাটকের সাথে জড়িত সবাই মিলে এই নাটকটিকে নষ্ট করেছে!
জানি এটা ডিরেক্টর এর প্রথম কাজ, কিন্তু কাজ দেখে মনে হয়েছে তিনি অতি তাড়াহুড়া করেছেন! দুই একটা দৃশ্য ছাড়া কোন দৃশ্যই যত্নের সাথে নেয়া হয়নি! একটার সাথে আরেকটা সিন "ফেভিকল" দিয়া জোড়াতালি মেরে লাগানো হয়েছে বলে মনে হল! ক্যামেরা ঝকঝকে ছিল, কিন্তু কাজ ভাল ছিলনা ক্যামেরার!
আর অভিনয়? এটা আবার কি? ক্যামেরার সামনে "ভাব আর মেকাপ" নিয়া দাঁড়াইলেই তো অভিনয় হয়ে যায়- নাটকের সবাইরে দেখে তো এরকম মনে হইসে! যেই পরিমাণ সময় তারা নিজেদের সাজাইতে, মুখে মেকাপ মাখতে, গান আর লাফালাফি করতে ব্যয় করসে, তার একভাগও যদি তারা অভিনয়ের পিছনে ব্যয় করত তাহলে এই নাটকটা অন্য লেভেলে চলে যেত! আর সবচেয়ে বড় কথা নাটকটা প্রচার হওয়ার পর নেগেটিভ কথা কানে বেশি এসেছে- বিশেষ করে অভিনয় নিয়ে। এই সমালচনাতে যাদের কান দেয়ার কথা , তাঁদের দেখলাম কোন পাত্তাই নাই! অর্চিতা স্পরশিয়া নামক যেই মেয়েটা ছিল (ভবিষ্যৎ দেখার শক্তি যার ছিল) নাটকে, নাটক প্রচারিত হওয়ার পর এত নেগেটিভ কথা শুনে তার ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল- "আমরা অনেক মজা করে এই নাটকটা করসি, আমাদের মজা লাগসে, that's it! এত কথায় আমি কান দেই না!" বাহ, ভাল তো, ভাল না?
খালি দামি শার্ট প্যান্ট পড়ে ভাব নিলে, সুন্দর করে চুল বেঁধে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে, বন্ধুরা মিলে রাতে গান গাইতে বেড়িয়ে পড়লে, সারাদিন "বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল" বইলা চিক্কুর পারলেই নাটক হয়ে যায়না! আর কথায় কথায় "দোস দোস" বলার মানে কি? শব্দটা তো "দোস্ত" হবে! বেশিরভাগ পরিচালককে দেখি "বড়লোকের" ছেলেমেয়ের মুখ দিয়ে একটু অন্য "accent" এর বাংলা বলানো তারা প্রায় সব নাটকে দেখান অথচ আমি এমন অনেক ছেলেমেয়েকে চিনি, যাদের বাংলা বাচনভঙ্গি শুনলে আপনার বিন্দুমাত্র ধারণা হবেনা যে সে "প্রাইভেট ভার্সিটির" পোলা বা মাইয়া!
পজিটিভ দিক আছে অবশ্যই! নাটকটাকে আর যাই হোক, বস্তাপচা বলতে পারবেন না, এ ধরনের কনসেপ্ট বাংলাদেশে দেখাই যায় না, স্পেশাল ইফেক্ট বেশ ভাল ছিল দেশের তুলনায়, তবে আরেকটু বেশি ইফেক্ট দেখালে ভাল হত। আকাশ "সুপারহিরো" টাইপ বন্ধুদের কল্পনা করে তার কারণ তার ছেলেবেলার বান্ধবী অবন্তি এর রুমে বিভিন্ন সুপারহিরো এর পোস্টার ছিল অনেকগুলো, যা আকাশের রুমের দেয়ালেও আমরা দেখেছি (স্পাইডারম্যান, আইরন ম্যান), পরিচালক এভাবে সূক্ষ্মভাবে জিনিসটি দেখিয়েছেন যা ভাল্লাগেছে! তবে সবচেয়ে ভাল্লাগেছে- Realx গেঞ্জি, গায়ে দিলেই "আউউউউ"
আমাদের পাশে কলকাতার সেই শাশুড়ি বউ এর যুদ্ধ নিয়ে একটার পর একটা ত্যানা পেচান সিরিয়াল দেখিয়ে যাচ্ছেন আর আমাদের মা খালারা তা দেখে যাচ্ছেন কারণ তাঁদের অভিনয় আর প্রযোজকদের টাকা, তাঁদের কাছে এরকম থিম এর আইডিয়া ই নাই! জী বাংলা, জলশায় এ ধরনের কোন নাটকই হয়নাই, আর আমাদের কাছে থিম আছে, কিন্তু আমরা সেটাকে নষ্ট করে ফেলছি যেটা কলকাতারা পেলে দারুণ কিছু বানিয়ে ফেলত! এয়ারটেল বছরে ঈদের সময় একটা নাটক বানায়, সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে, তাঁদের প্রচারণাও "সেই" লেভেলের হয়- এদিক থেকে তারা বেশ সফল, কিন্তু আলটিমেটলি নাটক ভাল না হলে লাভের খাতা শূন্যই থেকে যাবে! আশা করি ভবিষ্যতে সবাই এ ব্যাপারে দৃষ্টি রাখবেন! আর এ ধরনের থিমের উপরে কাজ করার জন্য পরিচালককে ধন্যবাদ, ভুল ঠিক করে আশা করি আগামিতে আরও ভাল নাটক আমাদের কাছে উপহার দিবেন, আশা করি ভুল থেকে না পালিয়ে ভুল থেকে শিখবেন- বাকি সবার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য!
আর বাংলাদেশে যে প্রতিভার মূল্যায়ন করা হয়না, এবং এই কারণেই যে বাংলাদেশে প্রতিভার জন্ম হয় না, সালমান শাহ, জাফর ইকবাল, রাজিব, হুমায়ুন ফরিদি এর মত দুর্দান্ত অভিনেতারা কেন এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যান, তা আবার দেখলাম! যেই খালেদ খান একসময় পর্দা, মঞ্চ কাঁপিয়ে বেড়াতেন- আজ তার কি অবস্থা, একটু দেখুন দয়া করে এই লিঙ্ক এ! Click This Link
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।