<<মধ্যরাতের হাইওয়ে>>
অনেকদিন যাবতই শুনছিলাম ভারতীয় টেলি জায়ান্ট "এয়ারটেল" বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করবে। নতুন কোন কোম্পানি খুলে নয়, আরেক বিজনেস জায়ান্ট গ্রুপ "ধাবী" গ্রুপের "ওয়ারিদ টেলিকম"কে কিনে। ওয়ারিদ এর এমন কি সমস্যা হচ্ছিল বাংলাদেশে ব্যবসা করতে কিংবা কেন তারা এয়ারটেলের কাছে বিক্রয় করল , এ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। অন্যান্য দেশ যদি ব্যবসা করতে পারে, ইন্ডিয়া পারবে না কেন?
শুনেছি তারা নাকি খুব কম দামে ওয়ারিদ থেকে মালিকানা (৭০%) নিয়ে নিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব হতে বঞ্চিত হয়েছে।
এটা আমাদের সরকার বাহাদুরের দেখার বিষয়। এনবিআর এর দেখার বিষয়। কিন্তু আমার সমস্যাটা অন্য জায়গায়।
তুমি ইন্ডিয়ান হও আর জার্মানই হও, আমার দেশে ব্যবসা করছ, এটা তোমাকে মাথায় রাখতে হবে। আমার দেশের সংস্কৃতিকে লালন করতে হবে।
আমার দেশের সংস্কৃতি, আমার দেশের কৃষ্টিকে তোমার পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, প্রাধান্য দিতে হবে। তুমি তোমার কাজকর্মে , তোমার বলিউডকে , তোমার কারিনা-সাইফকে পরিচয় করিয়ে দিবে , তা তো হবে না। এটার মানেতো তুমি ইন্ডিয়াকে, ইন্ডিয়ার কালচারকে বাংলাদেশে রিপ্রেজেন্ট করছ।
অনেকেই বলবেন, আরে আপনার ইন্ডিয়ায় এত এলার্জি কেন? আমি সেসব দাদাদের আগেই বলে রাখছি, লেখার প্রথমেই খেয়াল করে দেখবেন অন্যান্য দেশ যদি ব্যবসা করতে পারে, ইন্ডিয়া পারবে না কেন? এই লেখাটি আছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, তারা আমাদেরকে তাদের কারিনা-ক্যাটরিনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।
এমনিতেই আমরা অনেক বেশি চিনেছি।
আবার অনেকেই বলবেন, আরে বাবা ! এটা হচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট। মজা নাও , ব্যাস, ঝামেলা চুকে গেল। আমিও তাই বলি, এটা এন্টারটেইনমেন্ট। কিন্তু "শিলা কি জাবানি" মার্কা এন্টারটেইনমেন্ট কি না নেয়াই ভাল না? স্টার, সনি এদের বস্তা পচা কাহিনীর এন্টারটেইনমেন্ট না হলেই কি চলবে না আমাদের? আমরা বাংলা সিনেমা দেখি না, তার স্বাভাবিক যুক্তি যুক্ত কারণ আছে।
কেননা, স্থুল যৌন সুড়সুড়ানি মার্কা গান, আবাল টাইপের নায়ক আর আটার বস্তা টাইপের নায়িকার ব্যাঙের মত হাত-এদিক সেদিক করা ( তারা বলেন মর্ডান ড্যান্স) এবং কিছু কমন ও ফালতু ডায়ালগ নির্ভর সিনেমা দেখার জন্য নিশ্চয় আমরা হলে যাব না। যদিও এসব অখাদ্যের পাশাপাশি কিছু ভাল সিনেমাও আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এই অখাদ্য বাদ দিয়ে আমরা কি খাদ্য গ্রহণ করছি, তা কি একবারও ভেবে দেখছি? ছবির প্রিন্ট কোয়ালিটি এবং কিছু আইটেম সং, হলিউড থেকে কাহিনীর কপি-পেস্ট সাথে খুল্লাম-খুল্লা ড্রেসআপ। ব্যস, এই হল হল বলিউড। তার মানে এই নয় যে, তাদের মুভি দেখা যাবে না।
তারাও প্রচুরভাল মুভি বানাচ্ছে এবং বানিয়েছে।
আর সিরিয়ালের কথা কি বলব? যারা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মানতে চান না, তাদেরকে বলব গত বছরের বেশ কিছু মর্মান্তিক খবরের কথা স্বরণ করতে । আমি নাম উল্লেখ করতে চাই না। একটা কথা আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন কোন ঘুর্ণিঝড় কিংবা সুনামি নয় যে হুট করে আসবে। এটা হচ্ছে একটা চলমান প্রক্রিয়া।
যেটা ধীরে ধীরে কাজ করে। অনেকটা হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মত। অনেক ছেলে-মেয়েকেই (বিশেষ করে মেয়েরা) দেখেছি হিন্দিতে কথা বলতে পারলে কিংবা ফেসবুকে হিন্দি স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেকে খুব গর্বিত মনে করে। আমার পাশের ফ্ল্যাটের এক পিচ্চিকে দেখেছি অনর্গল হিন্দি আউড়াচ্ছে। আপনারা বলুন এগুলো কি সমাজে ইমপ্যাক্ট ফেলছে না? আপনি হিন্দি না শুধু, উর্দু , ফার্সি, চায়নিজ পৃথিবীর যত ভাষা আছে শিখুন।
কিন্তু সেটার ব্যবহার নিয়েই আমার সমস্যা। আপনি বাংলাদেশে থেকে হিন্দি তে কথা বলবেন কেন? এই জন্য নিশ্চয় সালাম-বরকতরা নিজেকে বিলিয়ে দেয়নি?
সিরিয়ালের কথা যখন আসলই, তখন একেবারেই নতুন একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের ১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকি উদযাপিত হয়েছে। আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়ে মুক্তমঞ্চে হওয়া একটি অনুষ্ঠানও দেখে আসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের প্রধান জনাব বায়েস স্যার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন।
সেখানে ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ও উপস্থিত ছিলেন। যাই হোক তিনি বিজনেস স্টাডিজ অনুষদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিবার বুঝাতে "স্টার" পরিবারের কথা তুলে আনলেন। শুনে আমার খুবই খারাপ লাগল, পরিবারের উদাহরণটা তিনি অন্যভাবেও দিতে পারতেন।
বলছিলাম এয়ারটেলের কথা। কিছুটা প্রসঙ্গ বিচ্যুত হওয়ায় ক্ষমা চাচ্ছি।
তো যেদিন থেকে এয়ারটেলের যাত্রা শুরু হল, সেদিনই কারিনার সাথে ডিনারের দাওয়াত পেয়ে বসলাম। যারা এয়ারটেল গ্রাহক, আশা করি তারা সবাই এই দাওয়াত পেয়েছেন। এমনিতেই ওয়ারিদের এসএমএসের জ্বালা ভাল লাগত না। এখনতো আমার মনে হয় এই মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে। সাথে সাথে বেড়েছে বলিউডের স্টারদের চেনানোর পালা।
কি চান আপনি? বলিউডের মজাদার খবর, স্টারদের ওয়ালপেপার, রিংটোন, ডিনারের দাওয়াত- সবই পাবেন আপনি!!!
"বলিউডের মজাদার খবর পেতে হলে এসএমএস করুন ...... ........ আর পাঠিয়ে দিন ...... টে। আর মাসিক চার্জ মাত্র ১০ টাকা" এটা অনেক এসএমএসের একটা।
এয়ারটেলের ওয়েবসাইটে ঢুকতেই এই ছবিটি পেলাম। ভাবলাম , ভুল করে ইন্ডিয়ান এয়ারটেলে চলে এলামনাতো? পরে দেখি , না ঠিকই তো আছে!!!
হ্যা ! আসলেই সবইতো ঠিক আছে। সমস্যা কি? প্রতিদিন পাখির মত দুএকজন
বাংলাদেশীকে গুলি করে মারা, পুশ ইন, সীমান্ত আইন ভঙ্গ করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া, ইচ্ছা মত আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া, জমি দখল করে নিয়ে যাওয়া, পানির কথা নাই বা বললাম।
কেননা, পানি মন্ত্রীর ভাষায়, "তারা যেটুকু দিচ্ছে, এটাইতো অনেক বেশি!", টিপাইমুখ ড্যাম এর বেলায় "আগে হোক, তারপর দেখা যাবে"!! ; নিজেদের ব্যান্ডউইথ এতটাই বেশি হয়ে গেছে যে, তা ইন্ডিয়ার কাছে রপ্তানির চিন্তা করা....................
সবই তো ঠিক আছে। কি বলেন আপনারা??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।