আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গভীর রাতেও লোডশেডিং

জীবনে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি কোন চাওয়াই অপূর্ন নেই । বড়লোক হওয়ার খুব সখ

পরের সংবাদ» লোডশেডিং এখন আর রাত-বিরাত, সকাল-সন্ধ্যা কিংবা ছুটির দিন মানছে না। মানছে না শহর-নগর কিংবা গ্রাম। এখন আর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় বলেও কিছু নেই। সব সময়, সর্বত্র, নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে চলছে লোডশেডিং।

‘তাই বলে রাত ১২টার পরও? রাত দুইটা, তিনটা, চারটার সময়ও লোডশেডিং হবে? তখন তো কোনো অফিস থাকে না। শিল্পকারখানা চলে না। ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এমনকি ছোটখাটো দোকানপাটও বন্ধ থাকে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের একমাত্র ক্ষেত্র তখন গৃহস্থালি চাহিদা। সর্বোপরি শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও সারা দিন এবং গভীর রাতেও লোডশেডিং হবে?’ এসব প্রশ্ন অসংখ্য গ্রাহকের।

ধানমন্ডির শংকর থেকে গ্রাহক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তাহলে কি দেশে ততটুকুও বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে না, যেটুকু শুধু মানুষের ঘরবাড়িতে ব্যবহারের জন্য দরকার হয়?’ মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন থেকে হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘অন্য সময়ের লোডশেডিং তো আমরা মেনেই নিয়েছি। এখন তো সেচের জন্য রাতের বেলায় গ্রামে বাড়তি বিদ্যুৎ দেওয়ারও ব্যাপার নেই। তার পরও এই গরমে গভীর রাতে ঘুমানোর সময়ও কি একটু ফ্যান চালিয়ে ঘুমানো যাবে না?’ ক্রিসেন্ট রোড থেকে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ফ্যান না চালিয়ে যদি ঘুমানো যেত, তাহলে আমরা তাও বন্ধ রাখতাম। কিন্তু ঢাকা শহরে তো তা সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ চলে গেলেই প্রথমে কেঁদে ওঠে বাচ্চারা।

’ উত্তরা থেকে ইমারত হোসেন বলেন, ‘গভীর রাতে লোডশেডিংয়ের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, সরকারকে ফাঁসানোর জন্য এ রকম করা হচ্ছে কি না, আপনারা সাংবাদিকেরা তা একটু খোঁজ করে দেখুন। ’ ইস্কাটন গার্ডেনের বাসিন্দা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে সরকারি বাড়িতে থাকতাম বলে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ততটা অনুভব করিনি। এখন বুঝতে পারছি, লোডশেডিং কাকে বলে। ’ ওই এলাকায় এখনো প্রতিদিন অন্তত আটবার করে লোডশেডিং হয় বলে তিনি জানান। কর্তৃপক্ষ কী বলে: গ্রাহকদের এসব অভিযোগ-উৎকণ্ঠার কারণ গভীর রাতেও অব্যাহত লোডশেডিং।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্বে নিয়োজিত একমাত্র সরকারি সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, কারণ তো অবশ্যই ঘাটতি। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক কম। তাই লোডশেডিং করা ছাড়া তো উপায় নেই। তাই বলে গভীর রাতেও এবং সারা রাত ধরে? তখন কি এত বেশি চাহিদা থাকে? এই প্রশ্নের জবাবে পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, এখন দিন-রাতের চাহিদা প্রায় সমান হয়ে গেছে। আগে যেমন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা) চাহিদা অনেক বেড়ে যেত।

তার আগে-পরে থাকত কম, এখন আর তেমন হচ্ছে না। সব সময়ই চাহিদা মোটামুটি একই থাকছে। তাই ঘাটতিও থাকছে সর্বক্ষণই। কতটা ঘাটতি: পিডিবির হিসাব অনুযায়ী আজকাল পাঁচ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে চার হাজার মেগাওয়াটের মতো। গতকাল শনিবারও পাঁচ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল চার হাজার ১৫ মেগাওয়াট।

সর্বোচ্চ ঘাটতি এক হাজার মেগাওয়াট। গভীর রাতে, যখন একমাত্র গৃহস্থালি চাহিদা ছাড়া কোনো চাহিদাই থাকে না, তখন এই ঘাটতি অনেক কমে যায়। তার পরও দেশের সর্বত্র অব্যাহত লোডশেডিংকে অস্বাভাবিক মনে করেন অনেকেই। পিডিবি এবং বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর একাধিক সূত্র জানায়, তারাও এর আগামাথা কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী অন্যতম সংস্থা ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেহ আহমেদ বলেন, তাঁর আওতাধীন এলাকায় গভীর রাতেও প্রায় দেড় শ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে।

ফলে লোডশেডিং না করে উপায় থাকে না। অরেকটি বিতরণকারী সংস্থা ডিপিডিসির পরিচালক (কারিগরি) সিরাজউদ্দৌলা বলেন, ঘাটতি থাকে বলেই তাঁরা লোডশেডিং করতে বাধ্য হন। গ্রামের অবস্থা অবর্ণনীয়: গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তথা এর আওতাধীন ৭০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস)। গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে একটি পিবিএসের মহাব্যবস্থাপক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পিবিএসে চাহিদা ৩০ মেগাওয়াট। পাচ্ছেন চার মেগাওয়াট।

আরইবির সূত্র জানায়, ৬০টিরও বেশি পিবিএস চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ফলে অনেক স্থানে গ্রাহকদের চাপের মধ্যে সমিতিগুলো। ময়মনসিংহের গোপালপুরে পিবিএস কার্যালয়ে গ্রাহকেরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। রংপুরের কয়েকটি এলাকায় রাস্তা অবরোধ ও ভাঙচুরের হুমকির মধ্যে আছে পিবিএসগুলো। মন্ত্রণালয় ও পিডিবির সূত্রগুলোর আশা, এই বছরের শেষ নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

তাহলে আগামী গ্রীষ্মে আর এমন দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।