শনিবার সকাল ৮টা। মদিনা মার্কেটের আকাশ রেস্টুরেন্ট থেকে খাবারের সুদৃশ্য প্যাকেটগুলো যখন একে একে বাসের পেটের ভেতর চালান করা হচ্ছিল , তখন মনে হয়েছিল ওগুলো নিজের পেটের ভেতর পাঠাতে পারলেই সবচেয়ে ভালো লাগতো ! কিন্তু উপায় নেই ,বনে ভোজন করার জন্য রাখা হয়েছে এগুলো । ও হ্যা ,একটু পরেই আমরা যাএা শুরু করছি বনে ভোজন করার জন্য , গন্তব্য মাধবকুন্ড , প্রকৃতির খামখেয়ালীপনা ,প্রেমের নিদর্শন পরীকুন্ড আর অবারিত চা-বাগানের সাথে সেখানে আমরাও সবুজ হবো ..উদাস হবো ..আবেগী হবো..
” মামা গাড়ি ছাড়েন ” আমাদের সি.এস .ই ডির্পাটমেন্টের ২-২ ব্যাচের ৪২ জনের দলটি একসাথে উল্লাসে মেতে উঠলো । ততক্ষনে দৌড় শুরু করে দিয়েছে আমাদের চাঁদের গাড়ি । গাড়ির গতির সাথে তাল মিলিয়ে বন্ধুদের কণ্ঠে উঠে এল গান ” তুমি চেয়ে আছো তাই ..” ।
ওখানে কে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তা অবশ্য আমরা কেউ জানিনা । প্রথম আলোর ”ছুটির দিনে ” টাতে রাশিফল দেখার জন্য টানাটানি করতে করতে শেষ র্পযন্ত একটা করে টুকরো পেল সবাই । হৈ-হুল্লোর ,চেচামেচি আর রাস্তাবিদ খ্যাত কামালের ”আর মাএ পাঁচ মিনিট ” শুনতে শুনতে অবশেষে পৌছলাম মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অবস্থিত মাধবকুন্ডে । বাস থামার সাথে সাথে বন্ধুদের হট্টগোল ” পানি কোথায় .. পানি .” । সেটা অবশ্য সাথে করে আনা খাবার পানি এবং জলপ্রপাত , দুটোর জন্যই বলা হচ্ছিলো ।
গেটে টিকিটের ঝামেলা শেষ করেই সবাই দে ,দে ছুট ..জলপ্রপাতের সন্ধানে ।
আঁকাবাঁকা ,উচুনিচু রাস্তা ঘুরে অবশেষে দেখা পেলাম আমাদের ”পথ চেয়ে থাকা ” সেই অনন্য আর্কষণের ! ওখানে পৌছে আমাদের অধিকাংশই স্তম্ভিত ,হতবাক ,কেউ কেউ ওখানের বড় বড় পাথরগুলোর মতই স্থির । এত উপর থেকে একটানা পানি পড়ছে তো পড়ছেই , মনে হচ্ছে যেন পরীদেবী তার হ্নদয়ের সবটুকু ভালোবাসা ঢেলে দিচ্ছে প্রিয়তম মাধবের হ্নদয়ে । প্রচন্ড উল্লাস আর উন্মাদনায় নিচের পানিতে লাফালাফি , ঝাপাঝাপি করছে সব রকমের সব বয়সী মানুষ । যেন জীবনের জোয়ার নেমে এসেছে ..অন্য রকম এক উন্মাদনা ঘুচিয়ে দিয়েছে সবরকমের ভেদাভেদ .. ।
ততক্ষনে অধিকাংশ বন্ধু সোজা পাহাড় বেয়ে উঠে গেছে ১৫০ ফুট উচুতে যেখান থেকে অবিরত পানি পড়ছে । ক্যামেরার বিরামহীন ক্লিক ক্লিক , বরফ শীতল পানিতে ঝাপাঝাপি শেষ হতে না হতেই পেটের ভেতরের ছুচোটা জানান দিলো ” প্যাকেট গুলো দরকার ” । খাবারের পর খাশিয়া পল্লীর পাশে বসে শুরু হলো সাংস্কৃতিক দুপুর । মুনমুন ,সোহানা ,রিজুর গান আর বান্নার আনসেন্সরড কৌতুকে জমে উঠলো দুপুরটা । ততক্ষনে ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়েছে সবাই ।
কোন রকমে বাসে উঠেই সোজা সিটে গা এলিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা কারও..। ফেরার সময় সবাই ছিল চুপচাপ যদিও কারও কারও কণ্ঠে শোনা যাচ্ছিল ” দেখা হবে বন্ধু...”
প্রিয় পাঠক ,আপনার মনটা যদি প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযপিয়াসী হয় এবং সাথে থাকে এক চিলতে অবসর ,তাহলে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন মাধবকুন্ড । ব্যস্ত নগরজীবনের মাঝে একটু হলেও শান্তির পরশ পাবেন এতে..প্রকৃতির বিশালতার মাঝে অন্যরকম এক ”আমি” কে খুজে পাবেন আপনি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।