আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডা কড়চা /সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

ইমানের পরীক্ষা হয় সংকট কালে। ইমানের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকুন।

দৈনিক যুগান্তর, পরবাস পাতা জুলাই ১২, ২০১০, সোমবার : আষাঢ় ২৮, ১৪১৭ ............................................................... কানাডা কড়চা সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্রের রাজধানী শহরকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবেই ‘ছিমছাম’ করে রাখা হয়। সেখানে ঘনবসতি নেই, বাণিজ্যিক এলাকা নেই, শিল্পকারখানা কম, নাগরিক ব্যস্ততা কম তেমন একটি শহর গড়ে তোলা হয় ক্যাপিটেল সিটি হিসেবে। যেমন-অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, কানাডার অটোয়া।

অটোয়া আমার প্রিয় শহর। প্রেমের শহর। কানাডায় এসে অটোয়ায় ছিলাম আট মাস। তারপর থেকেই আমি অটোয়ার প্রেমে পড়ে আছি। অটোয়ার প্রতি আমার আর্কষণ অন্যরকম।

টরন্টো থেকে অটোয়া যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন প্রিন্স-মিলু। একটু হিসাব-নিকাশ করে কাজের ফাঁক খুঁজে রাজি হলাম। আমার বিল্ডিংয়ের উপরের তলায় থাকেন আবদুল কাদের মিলু। তিনি সকাল ৬টায় ফোন করলেন। প্রস্তুত হওয়ার জন্য।

১৫ মার্চ সকাল ৭টায় আমরা রওনা হলাম। ৫-৬টি গাড়ি প্রায় ৩০ জন যাত্রী। যথারীতি পথে একটি গাড়ি নষ্ট হল। ভাড়া করা হল অন্য গাড়ি। যেনÑ ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ, হাঁটিয়া চলিলঃ শীত শেষ।

সামার-সামার ভাব। চমৎকার আবহাওয়া! যাত্রা পথে আড্ডা দিতে দিতে, চা-কফি খেতে খেতে, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে আমাদের পথ ফুরলো। দুপুর ১২টায় অটোয়া যেন আমাদের ‘স্বাগত’ জানালো। আমরা যাচ্ছি পার্লামেন্ট ভবনে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাজাপ্রাপ্ত আসামি খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বহিষ্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য।

টরন্টো ছাড়াও মন্ট্রিয়ল, অটোয়া থেকেও এসেছে প্রায় শ’খানেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। প্রায় সবার হাতে প্রতিবাদী প্লাকাড-ফেস্টুন। তাতে লেখা ছিল- ‘কানাডা খুনিদের জন্য নয়,’ ‘খুনি নূরের বহিষ্কার চাই,’ ‘সন্ত্রাসীকে ফেরত দাও’ ইত্যাদি। একপর্যায়ে লিবারেল পার্টির এমপি ডেক্রলি লি এসে সমর্থন ব্যক্ত করেন। পরে নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী স্টিপেন হারপারসহ ইমিগ্রেশন মন্ত্রী, আইন ও বিচার মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

পার্লামেন্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তা গ্রহণ করেন। দু’ঘন্টাব্যাপী সমাবেশ শেষ হলে সবাইকে দুপুরে খাবার পরিবেশন করা হল মনিমহলে। এদিকে ফারুকী হাসান যাবেন দূতাবাসে। নো-ভিসা সিল নেয়ার জন্য। সঙ্গে মিলু ভাই।

আমাকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। আমি নানা কারণে যেতে চাচ্ছি না। তার মধ্যে মাননীয় হাই কমিশনারের কারণটিও অন্যতম। আমি একটু অবাক হলাম, বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিকে ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ মার্চ কানাডিয়ান সংবাদ সাময়িকী ‘ম্যাকলিনস’-এ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

সাংবাদিক মাইকেল পেট্টুর নেয়া যার শিরোনাম ছিল- ‘অ্যা কল ফর জাস্টিস ফ্রম কানাডা : ওয়ান অফ দ্য কনভিকটেড কিলারস অফ পিএম হাসিনা’জ ফ্যামেলি ইজ ইন কানাডা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফররত আইন মন্ত্রী শফিক আহমেদও নিউইয়র্কে বলেছেন, নূরকে ডেপুট করানোর চেষ্টা চলছে। অপরদিকে, কানাডিয়ান এমপি মারিয়া মিন্না স¤প্রতি বাংলাদেশ সফরে গেলেও নূর চৌধুরীর বিষয়টি প্রাধান্য পায়। কানাডায় অবস্থানরত লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরাও নূরকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে। অর্থাৎ বিষয়টি এখন সর্বমহলেই আলোচিত বিষয়।

কিন্তু এই সমাবেশের মাত্র কয়েক ব ক দূরে দূতাবাসের অফিস সত্ত্বেও হাইকমিশনের কোনও কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। এ প্রশ্ন অনেকেরই। ২. অটোয়া দূতাবাস নিয়ে মন্ট্রিয়লবাসীর মতো টরন্টোবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। টরন্টোতে এখন ৫০-৬০ হাজার বাংলাদেশী। জনসংখ্যা, অটোয়া থেকে টরন্টোর দূরত্ব, ইত্যাদি বিবেচনা করে স্বাভাবিকভাবেই এখানে একটি কনসোলার অফিস প্রয়োজন।

দূতাবাসের পক্ষে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তর দেশ কানাডায় একটি মাত্র অফিসের মাধ্যমে সব সামাল দেয়া কিছুটা কঠিনও। যেমন, ভেঙ্কুভারের সঙ্গে সময়ের দূরত্বই তিন-সাড়েতিন ঘণ্টা। তাছাড়াও একই হাইকমিশনারকে আরও অতিরিক্ত ৪টি দেশের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেগুলো হচ্ছে- আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা, জামাইকা এবং কিউবা অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, যিনি কানাডাই সামাল দিতে হিমশিম খান, তিনি কিভাবে অতিরিক্ত আরও ৪টি দেশের বাড়তি দায়িত্ব পালন করবেন? অভিবাসীরা সমস্যায় পড়বে, তা তো হওযার নয়। আর সমস্যার তো অš- নেই।

যেমন পাসপোর্টের কথাই বলি। টরন্টোর ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন তার পরিবারের ৩ সদস্যের পাসপোর্টে (ই-০৬২০৬৭৬ ও ই-০৬২০৬৭৭ এবং ই-০৬২০৬৭৮) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৫০০ ডলার খরচ করে নতুন পাসপোর্ট করতে দেন। যখন তার পাসপোর্টগুলো হাতে এলো খুলে দেখে সর্বনাশ। তিনটি পাসপোর্টের ৬টি ভুল। জাকিরের পাসপোর্টে ক. বাবা মৃত লেখা হয়নি খ. ডাকঘরের বানান ভুল; তার স্ত্রী ফাহমিদা নাসরিনের পাসপোর্টে গ. মা মৃত লেখা হয়নি ঘ. গ্রামের নাম ভুল আর তাদের কন্যা ফওজিয়া আফরোজ অতিদির পাসপোর্টে ঙ. মার নাম ভুল এবং জন্ম তারিখ ভুল।

এ নিয়ে জাকির সাব আমার বাসায় এলেন। তখন হাইকমিশনার সাহেব আমাকে ফোন করেছেন একটা গুড নিউজ তুলে ধরার জন্য। (নিউজটি সচিত্র ছাপা হয় ২১ জানুয়ারি ২০১০-এর বেঙ্গলি টাইমসসহ ঢাকার ৪টি পত্রিকায়) আমি সঙ্গে সঙ্গেই ফোনে তাদের মিলিয়ে দিলাম। জাকির সাহেব আবেগঘনভাবে বলেন, ‘পাসপোর্ট আমার দেশের আইডি, আমার দেশের প্রাণ! যেন ’৭১ সালে যেভাবে পাকবাহিনী আমাদের মা-বোনদের নির্যাতন করে শাড়ি ব্লাউজ ছিঁড়েছে, সেভাবে আমাদের পাসপোর্টগুলো কাটাছেড়া করবেন না, পি জ। ’ হাইকমিশনার সাহেব তখন বললেন, পাসপোর্টগুলো সরাসরি আমার নামে পাঠান।

আমি দেখছি। জাকির সাহেব আবার ফেরত খামসহ পাসপোর্ট দূতাবাসে পাঠালেন। ফেরত খামে পাসপোর্ট এলো। কিন্তু প্রেরিত ইয়াকুব সাহেবের পাসপোর্ট পেয়ে তিনি বেয়াকুব বনে গেলেন। এবার তিনি আরও বিস্মিত হলেন! যথারীতি ৩টি পাসপোর্টই কাটা ছেঁড়া।

তিনটি পাসপোর্টের ৯নং পাতায় ‘কিসের স্থলে কি পড়তে হবেঃ সেই সংশোধনীর সিলসই। তারপরও ফাহমিদা নাসরিনের মার নামের আগে ‘মৃত’ লেখা হয়নি। অথচ তিনি মারা গেছেন ১৯৭১! আর কাটাকাটি করা হাতের লেখাগুলো পূর্বের লেখার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ! (দ্রষ্টব্য সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ ১৩ এপ্রিল ’১০, টরন্টো)। স্পর্শকাতর ভুলভ্রান্তি, কাটাছেঁড়া, বানান ভুল (কানাডিয়ান আইডি’র সঙ্গে গড়মিল) পাসপোর্ট তিনটি নিয়ে যদি এয়ারপোর্টে কোনও ইমিগ্রেশন বৈধতার প্রশ্ন তুলে আপত্তি করে, তখন তারা কী করবেন? এই প্রশ্নের জবাব কে দিবে? (দ্র. সাপ্তাহিক বেঙ্গলি টাইমস, ০৮ এপ্রিল ’১০, টরন্টো)। তাই, জাকির সাহেব দুঃখ করে তার এক লেখায় বলেছেন ‘ই দিয়ে ইয়াহিয়া আর ই দিয়া ইয়াকুব।

তাই পাকিস্তানি প্রীতির কারণে আমার মেয়ের জš§ তারিখ ২১ মার্চের স্থলে পাকিস্তানের জাতীয় দিবস (২৩ মার্চ)-এ লিখেছেন। ই-তে বাংলাদেশ আর ই-তে আমি এক বেয়াকুব, ইয়াকুব আলীদের কাছে। ’ আমরা অভিবাসীরা সত্যি সত্যি বেয়াকুব ছাড়া আর কী? একটি দেশের প্রতিনিধি হিসেবে একজন রাষ্ট্রদূতের কাজ দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন এবং অভিবাসীদের সেবা প্রদান অন্যতম। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন তিনি এসব ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্র থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনির সফর পর্যস্ত তার যোগ্যতা, দক্ষতা এবং ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তুলেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

এদিকে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও স্থানীয় কমিনিউটি নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিককর্মী, সুধী সমাজ তার আচরণে ক্ষুব্ধ! যা কখনোই কারও কাম্য নয়। কবি, সাংবাদিক, গবেষক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।