জন্মজন্মান্তর ধরে গোমতিই আমার মাতৃগৃহ, সারা শরীর, মন, ইন্দ্রিয় গ্রাস করেছে, যুগ-যুগান্তের গোমতি, অন্তহীন গোমতির জল প্রবাহিত হচ্ছে আমার মধ্যে, আমি গোমতির জলের গন্ধে, জলের সৌরভে জেগে উঠি। আমি দেখেছি ঘুমের মধ্যে মৌমাছির মতো গুনগুন করতে করতে আমি নেমে যাই গোমতির বুকে, গোমতির উত্তাল ঢেউ মিশে যায় আমার অনাবৃত আচ্ছন্ন শরীরে, আমাকে কোন স্বপ্নলোকের রহস্যপুরীতে নিয়ে যায় গোমতি, আমি দেখতে পাই মেঘবালিকাদের উদ্দাম নৃত্য, উপভোগ করি বর্ষা ও বৃষ্টি। এই গোমতি আমাকে মাতিয়ে রাখে, উপচে পড়ে আমার দেহে জলপ্রপাতের মতো। আমি গোমতিকাতর, স্নানের অপেক্ষায় থাকি, ঢেউয়ের শব্দে আমি শিউলি ঝরে পড়ার শব্দ শুনতে পাই, মাতাল ঢেউয়ের শব্দে আমি আমার হারানো শৈশবে ফিরে যাই, ঝাঁপিয়ে পড়ি নদীতে, মাছের মতো উল্লাসে খলবল করে উঠি, দেখি আকাশ ছড়িয়ে পড়ে নদীতে, আমি কতদিন স্বচ্ছতোয়া নদীর জলে তারাভরা আকাশ দেখেছি, সহস্র বছরের সুখ ও দুঃখ, বর্ষা ও বসন্ত, বিরহ ও বেদনা জেগে উঠেছে আমার মধ্যে। হয়তো গোমতিই আমাকে কবি করে তুলেছে, গোমতি আমার মাতৃভূমির আদিগ্রন্থ, তার অসামান্য চিত্রকলা। কবে কোথায় আমি কুড়িয়ে পেয়েছি এই গোমতি, জলপরীদের খোলা চুল, তাদের চোখের এই অবিরাম অশ্রুপাত, এই ব্যথিত অশ্রুবিন্দুর মধ্যেই তবে কি জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর প্রথম বিরহের কবিতা, রচিত হয়েছে অন্য এক মেঘদূত, বর্ষা সারারাত জেগে তার দয়িতার কাছে লিখেছে প্রেমপত্র; আমি গীতবিতানের ছত্রে ছত্রে দেখেছি গোমতির তরঙ্গ, দেখেছি অফুরন্ত শ্রাবণের মেঘ, দেখেছি অথৈ পানি, গোমতি ও গোমতি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে অভিবাদন, প্রণাম। তোমার জন্য, কেবল তোমার জন্য গোমতি, আমি কোটি কোটি বার জন্ম নিতে চাই, দুঃখ পেতে চাই, চোখের জলে ভাসতে চাই, তুমি আমাকে বাসিয়ে নাও আদি ও অনন্তকালের গোমতি, জন্মমৃত্যুর ওপার হতে তোমার মুখচ্ছবি দেখে আমি জেগে উঠি; গোমতি তুমি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছ, ভরিয়ে দিয়েছ, তোমার জন্য কবে একটি ভালোবাসার পঙ্ক্তি লিখতে পারব, আর কবে? সেই স্কুল-পালানো বালক, একটি চাঁপা ফুল ছিল যার বুকপকেটে, একখণ্ড মেঘ ছিল যার হাতের মুঠোয়, এক ফোঁটা বৃষ্টি ছিল যার বইয়ের ভাঁজে, যে নিভৃতে একা বসে কেঁদেছিল সারারাত, যে চোখের জলে লিখতে শিখেছিল কবিতা, প্রাণভরে শুনে ছিল ঝিলি্লরব, রাতজাগা বর্ষায় পাখির গান, তাকে তোমার মনে আছে? নগরজীবনে বিপন্ন ও জ্ঞান অর্জনের তাগিদে ঢাবিতে পিষ্ট, তাকে তোমার মনে আছে ভাঙাগলার গোমতির মাছ্ররাঙ্গা? আমি শহরের এই নিঃসঙ্গ ফুটপাতে দাঁড়িয়েও তোমাকে ভুলিনি রেনিডে, শৈশবের তিতাস, মেঘনা, ভুলিনি তিন খালের মুখ, ভুলিনি তোমায় উত্তর খাল, বাড়ির সামনের ছোট ডোবা, এখনও আমার রুমালে লেগে আছে তোমাদের জলের মিষ্টি গন্ধ; আমরা আবার মিলিত হবো কোনো এক দিগন্তের পানে, কোনো এক রাখীপূর্ণিমায়, সেই গোমতি ও শৈশবের গান গাইতে গাইতে ধন্য হোক আজ আমার http://gumoti.com/।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।