আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মারকাভার পতন - শোষিতের হাতে দানবের ধ্বংস

অলস মস্তিস্ক বহু বান্দরামীর উর্বর ভূমি

আগের পোষ্টে মারকাভা ব্যাটেল ট্যাংক - ইসরাইলের সমর প্রতীক এর ব্যাপারে বলেছি , এই পোষ্টে বলবো এই দানবের পতনের ব্যাপারে : প্রথম "মারকাভা" এর পতন হয় এর সর্ভিসে আসার প্রায় ২২ বছর পরে ২০০২ সালে। প্যালেষ্টাইনের একটি প্যারামিলিটারি গ্রুপ সালেহিদিন বিগ্রেড এর এক তরুন যোদ্ধা মারকাভার ডিজাইনের এর উপর গবেষনা করে বেশ কিছু দুর্বলতা খুজে বের করে। এবং এর মধ্যে সে বের করে যে মারকাভার বেলি সাইড এবং ব্যাক ডোর এর নিরাপত্তা বেশ কম এবং এসব জায়গায় হামলা চালালে মারকাভা ধ্বংস করা সম্ভব। কিন্তু সালেহিদিন বিগ্রেডের কমান্ডাররা প্রথমে মারকাভায় এটাক করে ফল পাওয়া যাবে বিশ্বাস করেনি। কারণ ২২ বছর ধরে তান্ডব চালিয়ে আসা এই দানব প্যালেস্টাইনদের কাছে ছিলো আত্বন্ক এবং অজেয়।

কিন্তু নতুন প্রজন্মের যোদ্ধাদের কাছে এটা একটা চ্যালেন্জ। পরে ৩ তরুন যোদ্ধা কমান্ডারদের চ্যালেন্জ করে যে তারা একটা মারকাভা ধ্বংস করবেই। এ লক্ষ্যে তারা ফাদ পাতে গাজার নাতসাদিন নামে ইসরাইলি নতুন বসতি হচ্ছে এমন জায়গায়। তারা নাতসাদিন এ প্রবেশের রাস্তায় তাদের তৈরি ২টা মাইন বসায় এর একটা ছিলো ৩০ কিলো এবং অন্যটা ছিলো ৮০ কিলো তবে এখানে বলে দেই এই মাইন গুলো সাধারন গানপাউডারে তৈরি। প্রথম মাইনটা একটি সৈনিকবাহি গাড়িকে আঘাত করে যা কিনা ইহুদি সেটেলারদের বাসকে কর্ডন করে আনছিলো।

সেখান থেকে আহতদের সরাতে ইজরাইলিরা তদের বিশ্বত মারকাভা কে পাঠায়। এবং এই মারকাভার বেলি সাইডে আঘাত হানে ৮০ কেজির ঐ মাইন। হাজার আত্বঘাতির হামলা ঠেকিয়ে দেয়া ইজরাইলিদের মারকাভা এবার হেরে যায়। সার্ভিসে আসার ২২ বছর পরে ফেব্রুয়ারী ২০০২ সালে মাইনের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যার ইজরাইলিদের সমর দম্ভের প্রতীক, তাদের প্রিয় Gods Chariot মারা যায় ৪ ক্রু সহ ৭ জন সোলজার খুব সাধারন ৩ যোদ্ধার খুবই সাধারন গোলাবারুদের কাছে চুর্ন হয়ে যায় ইজরাইলিদের মারকাভা , যা কিনা ঠেকিয়ে দিয়েছিলো হাজার হামলা কে। মারকাভা বিরুদ্ধে এই সফল হামলা সাড়া ফেলে ইজরাইলি এবং প্যালেস্টাইন উভয় দেশের মাঝেই।

কারন কেউই বিশ্বাস করতে পারনি এই দানব ধ্বংস হয় কিংবা একে ধ্বংস করা যায়। বিশেষ করে ইজরাইলিরা যখন জানতে পারে সাধারন হাতে তৈরি মাইন ব্যবহার হয়েছে এই ধ্বংস কান্ডে তারা ভয় পেয়ে যায়। এবং গাজা সিটির ভেতরে তারা মারকাভাকে ডিউটিতে পাঠানো বন্ধ করে দেয় এদিকে প্যারামিলিটারি গ্রুপ সালেহিদিন বিগ্রেড এর এই সাফল্য দেখে আরেক গ্রুপ আলকুদস বিগ্রেড এর যোদ্ধারাও মারকাভা ধ্বংসে আগ্রহী হয়ে উঠে। কিন্তু তখন মারকাভা আর গাজা সিটির মাঝে পেট্রোল করা বন্দ্ধ । তারা গাজার সীমান্তবর্তী এলাকা রাফা তে গিয়ে একটা মারকাভা কে পেট্রোল করতে দেখে সেটাতে এটাক করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পর পর কয়েক দিন তারা ঐ এলাকায় পেট্রোল করতে আসা ট্যাংক গুলোকে লক্ষ্য করতে থাকে। কিন্তু হামলা করার জন্য তাদের কাছে ছিলো পুরোনো সোভিয়েত মডেলের আরপিজি(রকেট প্রোপাইড গ্রেনেড) । আরপিজি তারা ট্যাংক ইউটার্ন নেয়ার সময় ট্যাংকের ব্যাকডোরে পরপর ২টা আরপিজি চার্য করে। প্রথম আরপিজি ব্যাকডোর কে ধ্বংস করে ফেলে এবং ২য় আরপিজি ভান্গা দরজা দিয়ে ভিতরে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। ঐ বিস্ফোরন এর প্রভাবে ভিতরে থাকা ৪৮টি ১২০ এমএম ট্যাংকের গোলাও বিস্ফোরিত হয় ভয়াবহ সেই বিস্ফোরনের আওয়াজ প্রায় ৬০ কিলোমিটার দুরের শহরে থাকা লোকজনও শুনতে পায়।

বিস্ফোরন স্থল প্রায় ৬ফিট গর্ত হয়ে যায় । এই বিস্ফোরন এতই ভয়াবহ ছিলো যে বিস্ফোরিত ট্যাংকের মেইন গানের ৮৪৫ কেজি ওজনের একটা অংশ পাওয়া যায় বিস্ফোরন স্থল থেকে প্রায় ৯০০ মিটার দুরে কয়েক সপ্তাহের মাথায় আল মুগাজি রিফিউজি ক্যাম্পের কাছে ল্যান্ড মাইনের আঘাতে আরেকটা মারকাভা ধবংস হয়। এর পর থেকে ইজরাইল গাজা সিটিতে স্থল অভিযান কমিয়ে দিতে থাকে তবে মারকাভা সবচয়ে বড় ধাক্কা খায় লেবানন যুদ্ধে। হিজবুল্লাহ প্যালেস্টাইনদের এই সব সফল হামলা থেকে জেনে নেয় কিভাবে মারাকাভা কে ধবংস করতে হয়। ২০০৬ সালের গ্রীস্ম কালে ইজরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের সময় ইজরাইল লেবাননে স্থল হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহকে শেষ করার প্লান করে।

১৯৮২ সালের যুদ্ধের মত এবার ও ইজরাইল তাদের সাউথ বর্ডার দিয়ে ট্যাংক বহর নিয়ে লেবাননে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাহাড়ি এই পথ ছিল গাছ-পালা,ঝোপঝাড় এবং ছোট বড় গুহায় ভরা যা কিনা স্থানীয়দের জন্য গেরিলা হামলার উপযোগী। তবে ইজরাইলিরা তাদের মারকাভা নিয়ে এগোতে ভয় পেত না। কিন্তু হিজবুল্লাহ গেরিলারা এই সুযোগ নেয়। তারা মারকাভার উপর শক্তিশালী রাশান komet মিসাইল ব্যাবহার করে।

যা কিনা প্রস্তুত করা হয়েছিলো আমেরিকান M1Abraham (বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী আর্মার সমৃদ্ধ ট্যাংক) কে কাউন্টার করার জন্য । ওই মিসাইলের কাছে মারকাভার আর্মার ভেদ করা কোন ব্যাপার ছিল না। ওই পথে কিছু ট্যাংক হারানোর পরে ইজরাইল বেছে নেয় ওয়াহদিল আহজাদ নামক আরেক গিরিখাত কে । এই গিরিখাত ছিলো সাপের চলার রাস্তার মতোই আকা বাকা এবং সরু। যে কারনে ইজরাইলিরা ওই পথ বেছে নিয়েছিল তা হল ওই এলাকাটা ছিল মানুষ্যবিহিন।

কিন্তু গেরিলারা দুর্দম,তারা আঁকাবাঁকা ঐ গিরিপথের বিভিন্ন কর্নারে অবস্থান নেয়। এবং ইজরাইলিরা মাঝপথে এলে মিসাইল , মাইন এবং আরপিজি দিয়ে হামলা শুরু করে। সরু রাস্তার কারনে কোন একটি ট্যাংক এ হামলা হলে পিছনের ট্যাংকগুলোর ওভারটেক করে সামনে যাবার কোন উপায় ছিলো নাহ , ফলে কিছু ইজরাইলিরা ঐ গিরিখাতেই হারায় ২৬টা মারকাভা । মারা যায় ১০০ জনের উপরে ক্রু ম্যান ইজরাইল ডিক্লেয়ার্ড তবে হিজবুল্লাহ বা অন্যান্য সুত্র মতে এই সংখ্যা ২০০ এর অধিক। ৬ দিনের ঐ যুদ্ধে ইজরাইল হারায় ৪০টা মারকাভা এছাড়াও ঐ যুদ্ধে মোট মোটামুটি ড্যামেজ বা সেমি ড্যামেজ হয় প্রায় ২০০ মারকাভা।

লেবানন থেকে ড্যামেজড মারকাভা টেনে নিয়ে যাচ্ছে ইজরাইল ১৯৭৩ সালে মিসর এর সাথে যুদ্ধের পরে এত বড় রকম সামরিক ব্যর্থতার মুখে ইজরাইল আর পড়ে নি। ইজরাইলিরা বুঝতে পারে তাদের Gods Chariot আর তাদের রক্ষা করতে সক্ষম নয়। আমার মতে,৬৫ টনের এই দানব কে ধ্বংসের পুরো কৃতিত্ব হিজবুল্লাহ এর নয় এ কৃতিত্ব সালেহিদিন বিগ্রেড,আলকুদস বিগ্রেড এর সেই সব তরুন যোদ্ধাদের যারা জীবন বাজি রেখে বের করেছিলো দানব ধ্বংসের উপায়। প্যালেস্টাইন যোদ্ধারা প্রমান করে শোষন এর হাতিয়ার কোনদিনই অজেয় নয়। এ ব্যাপারে আলজাজিরার একটি রিপোর্ট আছে "God's Chariot" নামে নিচের লিংকে পাবেন Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.