সূত্রঃ বিডিস্পোর্টসনিউজডটকম
ব্রাজিলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভেঙে দিল নেদারল্যান্ড। ফুটবল বিশ্বের অলিখিত সম্রাট ব্রাজিল'কে ২-১ গোলের ব্যাবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় করে দিল 'কমলা' শিবির খ্যাত ডাচরা। সেই সাথে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করে প্রথম বারের মত বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে এক ধাপ নয় বরং বহু ধাপ এগিয়ে গেল স্নাইডার, রবিন, ভন পার্সিরা।
ফ্লুক, অঘটন এসব কিছুই না, যোগ্য দল হিসাবেই জিতেছে নেদারল্যান্ড। ব্রাজিল সবসময়ই ফেভারিট, কিন্তু তাই বলে এবারের ডাচ দলটির এই জয় বড় জয় হলেও অঘটন কোন ভাবেই নয়।
প্রথম রাউন্ডের খেলা শেষে এক লেখায় নেদারল্যান্ডকে এ বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স বলেছিলাম , এবং সেই ডার্ক হর্স হওয়ার সম্ভাবনা বেশ ভালই দেখা যাচ্ছে এই ডাচ দলটার। বিশ্বকাপ জিতুক বা না জিতুক, সেমিফাইনালে উরুগুয়ে বা ঘানাকে হারিয়ে ফাইনালে যাওয়া খুব বেশি কঠিন হবে না ব্রাজিল বধকাব্য রচনা করা নেদারল্যান্ডের এই দলটির।
নেদারল্যান্ডের কোচ বার্ট ভন মারউইক আগেই বলেছিলেন, কোন দলের শক্তিকে কিভাবে সেই দলের দুর্বলতায় পরিণত করতে হয় তিনি জানেন। করে দেখালেনও তা, আর তাতে দুঙ্গার রক্ষনাত্বক খেলাই শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল ব্রাজিলের মরণ ফাঁদ। অবশ্য ডাচ কোচ আরেকটা কথাও বলেছিলেন, ব্রাজিলের সাথে একটা ছোট্ট ভুলও করা যাবে না, সেই ভুলটা কিন্তু ডাচ রক্ষনভাগের খেলোয়াড়রা করে বসে ঠিক ১০ মিনিটের মাথায়।
আর সেই সামান্য ভুলের মাসুল দিতে হয় তাদের, গোলকিপার কে প্রায় ফাঁকা পেয়ে গোল করেন রবিনহো। সেই সাথে লিড প্রায় ব্রাজিল, ১-০। হেসে খেলেই সেমিফাইনালে যাবে ব্রাজিল, এমনটাই মনে হচ্ছিল তখন। প্রথম ৪৫ মিনিট মধ্যমাঠ আর রক্ষনভাগে দেয়াল তুলে লিড টিকিয়ে রেখে খেলতে থাকে দুঙ্গার ব্রাজিল। কাকা, রবিনহো, ফাবিয়ানোর বিচ্ছিন্ন কিছু ছিলনা চিরাচরিত ব্রাজিলিয় গোলক্ষুধা।
এক গোল করেই আরেক গোলের জন্য মরিয়া ব্রাজিলকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি প্রথমার্ধের খেলায়, পাওয়া যায়নি অবশ্য পুরো টুর্নামেন্টেই, দুঙ্গার ব্রাজিলযে “জাগো বনিতা” খেলেনা। তবে শুরুতেই গোল খেয়ে প্রথমার্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ডাচরাও। আর তাই প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় ঐ ১-০ তেই।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নেদারল্যান্ড নামে নতুন উদ্যমে। প্রথমার্ধেই লিড পাওয়া দুঙ্গার পরিকল্পনা কি হবে তা একেবারে ঠিক ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন মারউইক।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলার ৮ মিনিটেই স্নাইডারের দুর্দান্ত এক লুপিং ক্রস ব্রাজিলের ফিলিপ মেলোর মাথা ছুঁয়ে প্রবেশ করে ব্রাজিলের গোল মুখে। সমতায় ফেরে নেদারল্যান্ড। এর পরপরই ব্রাজিলকে আবার লিড এনে দেয়ার দারুণ এক সুযোগ মিস করেন কাকা। তবে ব্রাজিলকে গুড়িয়ে দেন স্নাইডার খেলার ৬৮ মিনিটে, এরিয়েন রোবেনের করা কর্ণার কিকে আলতো মাথা ছুঁইয়ে স্নাইডারের দিকে বাড়িয়ে দেন ডার্ক কাইট, আর স্নাইডার হেড করে বল জড়ান ব্রাজিলের জালে। তিন ডাচ তারকার মিলিত প্রচেষ্টায় নেদারল্যান্ড পায় বিজয়ের গোল।
গোলের জন্য মরিয়া ব্রাজিলকে দেখা যায় এর পরপরই। একের পর এক আক্রমণ চালায় তারা ডাচ সিমানায়, এমনকি একবার টানা তিন তিনবার কর্ণার কিক করে ডাচদের স্বপ্ন প্রায় চুরি করার জোগাড় করে। তবে ব্রাজিলের সর্বনাশ চূড়ান্ত হয় ৭৩ মিনিটের মাথায়, ফিলিপ মেলোর লাল কার্ডে। এমনিতেই কোয়ার্টার ফাইনালের এ ম্যাচে গায়ের জোরে খেলার দৃষ্টান্ত ছিল অনেক, বিশ বিশ করে দুই দল ফাউল করেছে সব মিলিয়ে চল্লিশটা। তবে দ্বিতীয় গোল খাওয়ার পর স্নায়ুর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় ব্রাজিলিয়ানরা।
রোবেনকে ফেলে দিয়ে ইচ্ছে করে হ্যামস্ট্রিং মাড়িয়ে দেয়ার অপরাধে লাল কার্ড দেখেন ফিলিপ। এর পর মরিয়া ব্রাজিল বেশ কয়েকবার আক্রমণ করলেও গোল পায়নি। গোল পায়নি ডাচরাও, অদ্ভুত ভাবে সহজ কিছু গোলের সুযোগ মিস করে তারা। ১০ জনের ব্রাজিলের রক্ষনভাগ বেশ কয়েকবার ফাঁকা পেয়েও, এমনকি দুই দুইবার শুধু গোলকিপার হুলিও সিজারকে সামনে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয় ডাচরা, শেষ দিকে যথেষ্টই ক্লান্ত মনে হয়েছে ডাচদের। অসাধারণ এই ম্যাচের শেষ দিকে একেবারেই নিয়ন্ত্রনহীন এবং ক্লান্তিকর ফুটবল খেলেছে দুই দলই।
কিন্তু নেদারল্যান্ডের তাতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। ইউরোপের এই ঐতিহ্যবাহী ফুটবল দল দীর্ঘদিন ধরে ভালো দল হিসেবে খ্যাতি পেলেও বিশ্বকাপ জেতেনি একবারও। ব্রাজিলকে হারিয়ে সেই স্বপ্ন এবার তারা দেখতেই পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।