আর কেন সম্মেহন-এ পাপ, থাক- ‘বেদনা আমারি থাক’
বৃটেনের পার্লামেন্টে প্রথম বাঙালি হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়ে অনন্য এক ইতিহাস গড়েছেন বাংলাদেশের রুশনারা আলী। ৬ মে অনুষ্ঠিত বৃটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের বেনথাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন এ বাঙালি তনয়া। নির্বাচনে রুশনারা আলী পেয়েছেন ২১ হাজার ৭৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমল মাশরুর লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পেয়েছেন ১০ হাজার ২১০ ভোট।
বাংলাদেশের গর্ব হাউস অফ কমন্সের এই অভিযাত্রী জয়ের সংবাদ শুনে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে উচ্ছ্বসিত রুশনারা আলী বলেন, আমার প্রতিক্রিয়া ঠিক বলে বোঝানোর মতো নয়। আমাকে ঘিরে বাঙালিদের এ সাফল্যে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।
লন্ডনের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোতেও রুশনারা বলেন, আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এ জয় শুধু আমার নয়, এ জয় সব বাঙালির। সবার সহযোগিতার কারণেই আজ বিজয়ী আমি।
রুশনারা আরো বলেন, আমাদের কয়েক প্রজন্মের চোখের জল ও পরিশ্রমের ফসল হিসেবেই বৃটিশ পার্লামেন্টে একজন বাঙালি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে রাজনীতি, অর্থনীতি ও দর্শন বিষয়ে লেখাপড়া করা রুশনারা শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলতে না পারলেও সিলেটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন।
নির্বাচনে জয়লাভের পর সাংবাদিকদের কাছে মাতৃভাষায় রুশনারা বলেন, ‘আরো আগেই ইকান থাকি বাঙালি এমপি ওয়া দরকার আছিল। তবে ইবার দরজা খুলছে, আমরার অনেক যোগ্যতা আছে। আমরা আরো সামনে যাইতাম পারমু।
’
রুশনারা তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আরো বলেন, রাগ-দুঃখ যাই থাকুক না কেন, বাঙালিসহ অভিবাসী জনগণের ভরসা কেবল ওই লেবার পার্টিই।
রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটের জীবনই আমাকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছে। বঞ্চনা কী জিনিস, তা আমি এখানে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। খুব কাছ থেকে দেখেছি, সুযোগের অভাবে কীভাবে প্রতিভার মৃত্যু ঘটে। আমি যখন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে রাজনীতিতে পড়ি, তখনই জেনেছি জীবন ও সমাজকে বদলে দিতে রাজনীতির বিকল্প নেই।
পার্লামেন্টে গিয়ে আমি বাঙালিদের ভুলব না, তবে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী যারা আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা, আমি তাদেরও এমপি হতে চাই। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার নাড়ি ও আত্মার সম্পর্ক। বাংলাদেশের উন্নয়নে আমার কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ুর উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এছাড়া বাংলাদেশ ও বৃটেনের সম্পর্ক আরো মজবুত করতে আমি কাজ করতে চাই।
বাঙালিদের পক্ষে নেতৃত্বদানের ব্যাপারে রুশনারা বলেন, বৃটিশ পার্লামেন্টে বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি মোটেও অযৌক্তিক ছিল না। আমাদের দাবি লেবার পার্টি মেনে নেয়ায় সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
১৯৬৩ সাল থেকে বৃটেনে বসবাস করছেন রুশনারার বাবা আফতাব আলী। তবে তার দাদা এসেছেন ত্রিশের দশকে।
লেবার পার্টির সঙ্গে ১৭ বছর বয়স থেকেই যুক্ত আছেন রুশনারা।
লেবার পার্টির সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হলেও ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সাবেক এমপি উনা কিংয়ের সঙ্গে পার্লামেন্টারি অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে সমৃদ্ধ করেছেন নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১২ বাঙালির মধ্যে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো এলাকার এমপি প্রার্থী রুশনারার জন্ম বাংলাদেশের সিলেটে ১৯৭৫ সালে। মাত্র সাত বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে চলে আসেন লন্ডনে। বাংলাদেশে পৈতৃক নিবাস সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের ভুরকি গ্রামে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।